সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। এ বছরের জুন বা জুলাই মাসে এখানে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে মাঠ গরম করে তুলেছেন সিলেটের আওয়ামী লীগের নেতারা। নগরজুড়ে অধিকাংশ নেতাই পোস্টারিং করছেন। অনেকে আবার লিফলেট বিতরণ করছেন পাড়া মহল্লা থেকে শুরু করে নগরীর প্রায় প্রতিটি প্রাণকেন্দ্রে। কেন্দ্রের সবুজ সংকেত পেয়ে মাঠে নেমেছেন-এমন দাবি করে কোনো কোনো প্রার্থী প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবেএমন দাবি আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মেনে নিতে পারছেন না। তারা বলছেন কেন্দ্র কোনো ধরণের সবুজ সংকেত দেয় না। যা বলার জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন। নেত্রী যে ঘোষণা দেবেন-সে অনুযায়ী কাজ করবেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
পক্ষান্তরে বিএনপি বলে আসছে তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কোনো নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তারই ধারাবাহিকতায় সিলেট সিটি নির্বাচনেও অংশ নেবে না। বিএনপির ওই ঘোষণা থাকলেও স্থানীয় ২-১ জন শীর্ষ নেতা কৌশলী পথ অবলম্বন করে এগিয়ে চলেছেন। নগর পিতা হওয়ার জন্যে তারা ইতোমধ্যে কৌশলী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকারের এজেন্ট হিসেবে পরিচিত বিএনপির এক নেতা ঘনিষ্ঠদের বলে দিয়েছেন সিলেটের নগর পিতা নির্বাচিত হবেন জনগণের ভোটে। তাই এখানে নির্বাচন করতে প্রয়োজনে দল ছেড়ে দেবেন। তিনি অতীতেও দল ছেড়েছেন। আবার ফিরে এসেছেন দলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সিলেটের নগর পিতা হওয়ার জন্যে আওয়ামী লীগের কমপক্ষে দশজন নেতা মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এই ১০ নেতাই আওয়ামী লীগের প্রথম সারির। ওই দশ নেতা হলেন আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এটিএম হাসান জেবুল, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালিক, সিলেট জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি প্রকৌশলী এজাজুল হক এজাজ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আরমান আহমদ শিপলু ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী।
আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন নির্বাচনের আগেই নির্বাচনী আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। দলীয় নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। তবে নেতাকর্মীরা তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেয়ায় সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ দশ ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
কেন্দ্রের সবুজ সংকেতের দাবি করে মাস খানিক পূর্বে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বিশাল শো ডাউনের মধ্য দিয়ে জানান দেন তিনি সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী। এর পর থেকে তিনি প্রতিদিনই নগরজুরে গণসংযোগ শুরু করেন। নগরীর আনাচে কানাচে ছুটে চলছেন প্রতিদিনই। সবশ্রেণির মানুষের অনুকম্পা পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর পরপরই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ নিজকে প্রার্থীতা ঘোষণা করে মাঠে নামেন। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আজাদুর রহমান আজাদ, অধ্যাপক জাকির হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা নগরজুড়ে ব্যাপক পোস্টারিং করছেন। অন্যদের লিফলেট বিতরণ হচ্ছে নগরীর আনাচে কানাচে।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সম্পর্কে বলতে গিয়ে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেছেন, আওয়ামী লীগের ৭৩ বছরের ইতিহাস অত্যন্ত পরিছন্ন। এই সময়ে মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্ত ছাড়া কেউ মনোনয়ন পাননি। তিনি বলেন, গত সিটি নির্বাচনে তিনিসহ আওয়ামী লীগের ৫ নেতা মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কামরান ভাইকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। জননেত্রীর নির্দেশনায় আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কামরান ভাইয়ের জন্যে কাজ করেছি। এবারও অধ্যাপক জাকির হোসেন মনোনয়ন চাইবেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা মনোননয়ন দিলে নির্বাচন করবেন বলে জানান অধ্যাপক জাকির।
একাধিক প্রার্থী সম্পর্কে বলতে গিয়ে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দল। এখানে গণতন্ত্রের চর্চা হয়। সেই চর্চায় নেতাকর্মীরা দলীয় মনোনয়ন চাইতেই পারেন। সিদ্ধান্ত নেবেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। সবুজ সংকেত সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, এই দলে কোনো ধরণের সংকেতের নিয়ম নেই। জননেত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন, সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ হবে।
এদিকে বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্ত হচ্ছে তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কোনো নির্বাচনে যাবে না। কিন্তু সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের বেলায় ভিন্ন আলামত দেখা যাচ্ছে। এই নগরীর বর্তমান মেয়র বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে নাগরিক কমিটির ব্যানারে তিনি নির্বাচন করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর দলের হাইকমান্ড জানিয়ে দেয় আরিফুলের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়নি। তিনি বিএনপিতেই আছেন। এবারও তিনি একই পথ অবলম্বন করবেন বলে জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠজনরা। বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে নাগরিক কমিটির ব্যানারে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন আরিফুল হক চৌধুরীর। এই প্রসঙ্গে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী জানান, এই সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। বিএনপির ওই সিদ্ধান্ত কেউ যদি অমান্য করেন তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। নির্বাচন নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল সিলেট মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকীর। তিনি জানান বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি।
জাতীয় পার্টির সিলেট জেলা ও মহানগর কমিটি দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে মেয়র প্রার্থী চ‚ড়ান্ত করেছেন সিলেটের বিশিষ্ট শিল্পপতি নজরুল ইসলাম বাবুলকে। যদিও জাতীয় পার্টির অনেক নেতা এই সিদ্ধান্ত নাকচ করে দিয়ে বলেছেন দলের মনোনয়ন বোর্ড আছে। মনোনয়ন বোর্ড যাকে মনোনয়ন দেবেন তিনিই লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন। জাতীয় পার্টির ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজের সাবেক নেতা মো. রাসেল আহমদ জানান তিনিও দলের মনোনয়ন চাইবেন। দলের হাইকমান্ড থেকে মাঠে কাজ করতে বলা হয়েছে। তিনি মাঠে কাজ করছেন। দলের লাঙ্গল প্রতীক তিনি পাবেন বলে আশাবাদী। জাতীয় পার্টির সিলেট জেলা শাখার আহ্বায়ক শাব্বির আহমদ জানিয়েছেন সিলেটে জাপার শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে লাঙ্গলের প্রার্থী হিসেবে নজরুল ইসলাম বাবুলকে চূড়ান্ত করা হয়েছে।