জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের উদনাপাড়া গ্রামের দিনমজুর জিন্নাহ মিয়া ও জোসনা বেগম দম্পতির ছেলে সিয়াম। সমাজের আর আট-দশজনের মতো স্বাভাবিক নয় সে। ২০০৬ সালে দুই হাত ছাড়াই সিয়াম মিয়া জন্ম গ্রহণ করে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট সে। জন্মের পর দরিদ্র এই পরিবারে অভাবের বিষাদ নেমে এলেও সিয়ামের লেখাপড়া থেমে থাকে নি। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও সে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। সহপাঠী ও বন্ধুদের সহায়তায় সিয়াম তার পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। তার ইচ্ছে পড়ালেখা করে সরকারি বড় কর্মকর্তা হবে। হাত না থাকায় দৈনন্দিন কাজ পা দিয়েই সেরে নেয় সে। তার কাজে পরিবারের সবাই সহযোগিতা করেন। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধিতা বা সীমাবদ্ধতা তাকে দমিয়ে রাখতে পারে নি। তাই সে পা দিয়ে লিখেই লেখা-পড়া চালিয়ে যাচ্ছে। পা দিয়ে লিখলেও সিয়ামের লেখা অনেক ভালো। সে স্কুলে অনুপস্থিত থাকে না। অভাব-অনটনের সংসারে সিয়ামের পড়ালেখার খরচ চালাতে অনেক কষ্ট হয়। ভিটে মাটি ছাড়া আর কোনো সম্পত্তি নেই। অনেকেই সহায়তা করার কথা দিলেও পরে কেউ খোঁজ নেয় না। অদম্য সিয়াম পা দিয়ে লিখেই পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল লাভ করেছে। সে উপজেলার চাপারকোনা মহেশ চন্দ্র স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের একজন নিয়মিত ছাত্র। চলমান এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে সিয়াম। একই উপজেলার হরখালি মজিবুর রহমান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে সে। ওই কেন্দ্রের ৩০৩ নম্বর কক্ষে তার আসন। তার মা প্রতিদিন সিয়ামকে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসা-যাওয়ায় সহযোগিতা করেন। কেন্দ্র পরিচালনা কমিটি তার বসার জন্য কাঠের নিচু টুলের ব্যবস্থা করেছেন। অন্যান্য পরীক্ষার্থীর সাথেই খাতা ও প্রশ্নপত্র পেয়ে পা দিয়ে লেখা শুরু করে সিয়াম। নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা কেন্দ্রে সব সুযোগ-সুবিধাই পায় সিয়াম। যদিও সে স্বাভাবিক ছাত্রদের মতো নির্ধারিত সময়ের ভেতরেই পরীক্ষা শেষ করছে। এবারো সে ভালো ফলাফল করবে এমন আশা সকলের। সিয়ামের মতো অন্যদেরকে সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, সংস্থা ও সংগঠনসহ বিভিন্ন দানশীল, সমাজসেবক, পরোপকারী ও মহানুভব ব্যক্তিগণ এগিয়ে আসা প্রয়োজন। তাহলেই সিয়ামরা সমাজ বা দেশের বোঝা নয়, মানবসম্পদে রূপান্তরিত হবে। ভবিষ্যতে তারাও দেশের সার্বিক কল্যাণে অবদান রাখতে সক্ষম হবে। তাই আসুন তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াই।
কামরুল হাসান
(লেখক: সাংবাদিক ও ডিরেক্টর- বাংলাদেশ সেন্ট্রাল প্রেস ক্লাব, ঢাকা এবং সাবেক শিক্ষক ও এনজিও কর্মকর্তা।)