ঢাকা, রবিবার ৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২১শে পৌষ ১৪৩১

হাসিনার আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সম্পাদিত চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি বিএনপির

রিয়াদ হাসান | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ২ জানুয়ারী ২০২৫ ০৫:৩১:০০ অপরাহ্ন | রাজনীতি

রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) সকালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ খাতে যে ম্যাজিক দেখাতে চেয়েছিলো, ম্যাজিক করতে গিয়ে বাংলাদেশের মানুষের পকেট কেটে নিয়ে গেছে। এখানে আাপনারা প্রত্যেকে বিদ্যুতে বিল পরিশোধ করেন, সবাই ভুক্তভোগী। আসলে তারা এটা (বিদ্যুৎ) একটা ব্যবসার খাত বানিয়েছিলো তারা বুঝতে পেরেছিলো যে, এই খাত থেকে কুইক মানি বানানো যায় কোনো হিসাব না দিয়ে। কারণ বিদ্যুৎ তো ‘হাওয়া’ এটি দেখা যায় না।

ক্যাপাসিটি চার্জের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এই ক্যাপাসিটি চার্জে কোন মেসিনে কত ক্যাপাসিটি? কে এটাকে আইডেন্টিফাই করেছে এবং সেই মেসিনগুলো এফিসিয়েন্সি কি? এগুলো কেউ বিশ্লেষন করেও না, দেখেও না। এই ক্যাপাসিটির নামে তারা ১৫ বছরে অনেক টাকা নিয়ে গেছে। প্রায় এক লাখ কোটি টাকা নিয়ে চলে গেছে।

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি করব যে, বিদ্যুৎখাতের প্রত্যেকটা চুক্তি, তারা তো কোনো পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুল মানে নাই, তারা আইন করে নিয়মনীতি বন্ধ করে দিয়ে ইচ্ছামতো ক্লোজ টেন্ডারে এসব চুক্তি করেছে। জনগনের অধিকার আছে এসব বিষয় জানার।

উই মাস্ট সি দ্যা কন্ট্রাক্ট। তারা কিভাবে কন্ট্রাক্টগুলো করেছে এটা পাবলিক হওয়া উচিত। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম কাজ হলো জনগনের কাছে এই কন্ট্রাক্টগুলো উন্মুত্ত করে দেয়া, প্রত্যেকটা চুক্তি সুড বি পাবলিক, জনসমক্ষে প্রকাশ করা।

বিদ্যুখাতের দুর্নীতির পরিসংখ্যান চিত্র তুলে ধরে টুকু বলেন, বিদ্যুৎখাতে ১৫ বছরে মোট খরচ হলো ২ হাজার ৮৩০ কোটি ডলার। বর্তমান বিনিময় হারে তাহলো ৩ লক্ষ ৩৩ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। ক্যাপাসিটি চার্জে লুটপাট হয়েছে প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকা।

২০০৮-০৯ অর্থবছরে হয়েছে ১ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা, ২০১১-১২ অর্থ বছরে হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হয়েছে ৮ হাজার ৯শ কোটি টাকা এবং ২০২২-২৩ এ হয়েছে ১৭ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। তার অর্থ হলো এই যে, প্রাইভেট সেক্টারে পাওয়া প্ল্যাটগুলো দিয়েছে সেগুলো চলে নাই এবং এই টাকাগুলো তাদেরকে (কোম্পানি) প্রেমেন্ট করেছে, এভাবে দেশের মানুষের কাছ থেকে জাস্ট লুট করে নিয়ে গেছে আরকি।

সাবেক বিদ্যু প্রতিমন্ত্রীর বলেন, ক্যাপাসিটি চার্জ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগের মেসিনগুলো খারাপ। খারাপ মেসিন এসে টাকা কামাই করে চলে গেছে। আর এই লুটপাটের অংশ কারা কারা ছিলো? ক্যাপাসিটি চার্জের শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির কথা আমি বলছি। এরা হলো, সামিট নিয়েছে ১০ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা, এ্যাগ্ররো ইন্টারন্যাশনাল নিয়েছে ৭ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা, আল্ট্রা পাওয়ার হোল্ডিংস নিয়েছে ৭ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা, ইউনাইটেড গ্রুপ নিয়েছে ৬ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা, আরপিসিএল নিয়েছে ৫ হাজার ১১৭ কোটি টাকা।

তিনি বলেন, কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট আসে সাধারণত আপদকালীন বিদ্যুৎ সংকট নিরসনের জন্য। এই প্ল্যান্ট দ্ইু বছরের সেটা ১৫ বছর পর্যন্ত চালাচ্ছে এবং এসব কুইক রেন্টালে ৭৫% বিনিয়োগ করেছে উইথ আউট রিটার্ণ। বুঝেন কি অবস্থা। ভারত থেকে বিদ্যু আমদানির নামে ৯ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়েছে ১১ হাজার ১৫ কোটি টাকা।

সব কিছু রিভিউ করা হবে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি যেটা বলতে চাচ্ছি, আমরা পুরো বিষয়গুলো রিভিউ করব, এগুলো করে যেটা প্রয়োজনীয় সেটা আমরা করব।

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে রিভিউ মানে বাতিল না। আমরা দেখবো যে, কোন কোন জায়গায় দূর্বলতা ছিলো।

দেশের বিদ্যুৎ খাত যকোনো সময় মুখ থুবড়ে পড়বে জানিয়ে সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর দাবি, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুতে যেসব উন্নয়ন করা হয়েছে এই বিদ্যুৎ উন্নয়ন টেকসই না, সাসটেইনেবল না। যেকোনো সময়ে মুখ থুবড়ে পড়বে।

তিনি বলেন, উনারা (সরকার) তো বিল পেমেন্ট করছেন। আমি যতটুকু জানি বকেয়া বেশি নাই সবই তো পেমেন্ট করছে এই সরকার এসে। কিন্তু আলমেটলি ২০২৭ সালে এসে ধরা খাবে। আমরা মনে করি, এখন যদি আমরা টাইট না করি, তাহলে ২০২৭ সালে আমরা বিপদে পড়ে যাবো। ফরেন এক্সচেঞ্জ ঘাটতি হয়ে যাবে, টাকা ছাপানো হবে, এতে ইনফ্লুয়েশন বাড়বে, বুঝতেই পারছেন কি হবে?

রুপপুর প্রকল্পের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে টুকু বলেন, রুপপুরে পারমানবিক প্রকল্পের ৫‘শ বিলিয়ন ডলার তারা (শেখ হাসিনাসহ তার পরিবার) নিয়ে গেছে। সেটা নিয়ে আরও তদন্ত হচ্ছে লন্ডনে টিউলিপের (বৃটিশ সাংসদ টিউলিপ সিদ্দিকী -শেখ রেহানার মেয়ে) ব্যাপারে এবং আরও দুর্নীতি আছে আরকি।

প্রিপেইড মিটার বানিজ্যে সিন্ডিকেট অভিযোগ করে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, এটা তাদের একটা সিন্ডিকেট। ৭১ লক্ষ ২০ হাজার গ্রাহকের কাছে তারা মিটার পৌঁছাবে এবং সেখানে বিরাট অংকের একটা দুর্ণীতি প্রায় ৩৬ কোটি টাকা পাচার করেছে, ১ হাজার ২৩৫ কোটি অতিরিক্ত খরচ করেছে এর মধ্যে দুর্নীতি করেছে ৬১৭ কোটি টাকা। মিটার সরবারহ ও স্থাপন, বাস্তবায়নে ছিলো ৪ হাজার ৫‘শ কোটি টাকা সেটা ১২ হাজার কোটি টাকা করেছে।

তিনি বলেন, স্মার্ট প্রিডেইড মিটার প্রকল্প এটার যে নেটওয়ার্ক তৈরি করছে, এই নেটওয়ার্কটা হচ্ছে কিছু ব্যক্তির নেটওয়ার্ক। যেখানে পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর আত্বীয় স্বজনরা আছে তাতে তারা কোটি কোটি টাকা লাভবান হবে এই প্রকল্পে।

এলএনজি প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি করেছে সাবেক বিদ্যু প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর কোম্পানিসহ ‘একটি চক্র’ লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ করেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুক।

বিদ্যুতখাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিরোধে এই খাতে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া জনগনের অংশগ্রহন বাড়ানো, দুর্নীতি রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন, বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন, নিয়মিত বিদ্যুৎ পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্যবেক্ষনের ব্যবস্থা গ্রহন করা জরুরী বলে মনে করেন সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী।  

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।

বায়ান্ন/আরএইচ/একে