নতুন বছরে বিএনপি তাদের কৌশলগত পরিকল্পনা সাজিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপর সহনীয় চাপ প্রয়োগ করে নির্বাচনের পথ সুগম করার জন্য। দলটির নেতারা বলছেন, সরকারকে চাপ দিয়ে নির্বাচনকালীন রোডম্যাপ ঘোষণার দিকে মনোনিবেশ করবে বিএনপি। পাশাপাশি দলীয় কাঠামো সুসংগঠিত করা এবং রাষ্ট্র সংস্কারে তাদের ঘোষিত ৩১ দফা কার্যক্রমকে আরও জোরালোভাবে তুলে ধরাই তাদের অন্যতম লক্ষ্য।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর মতে, দলটির প্রধান লক্ষ্য জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিতে চায় এবং তাদের নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া। সেটার একমাত্র উপায় হচ্ছে নির্বাচন।” বিএনপি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উদার গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হওয়ার প্রত্যাশা জানিয়েছে এবং সংঘর্ষ এড়িয়ে বক্তব্য, বিবৃতি, সভা-সমাবেশের মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করার পরিকল্পনা করেছে।
দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে যেসব কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে, সেগুলো নতুন করে গঠনের কাজ চলছে। অঙ্গসংগঠনগুলোও পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, নতুন বছরেও এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি, ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে প্রস্তুতি চলছে।
বিএনপির পরিকল্পনা নির্ভর করছে সরকারের নীতির ওপর। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, সরকার যদি জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে, তাহলে সেই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবে বিএনপি। আর যদি সরকার বিলম্ব করে, তাহলে বক্তব্য ও সমাবেশের মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা হবে। বিএনপির নেতারা জানান, সরকারের সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্বে না জড়িয়ে আলোচনা এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে নির্বাচনের তাগাদা দেওয়াই তাদের অগ্রাধিকার।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সম্পর্ক শীতল হয়ে পড়েছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, “১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।” বিএনপির নেতারা বলছেন, জামায়াত প্রথমে বিএনপিকে আক্রমণ করে বক্তব্য দেওয়া শুরু করে, আর বিএনপি শুধু সেসব কথার জবাব দিচ্ছে। যদিও জামায়াত দীর্ঘদিন বিএনপির জোটসঙ্গী ছিল, ভবিষ্যতে এই সম্পর্ক কী হবে, তা এখনই স্পষ্ট নয়।
বিএনপির নেতাদের মতে, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, স্থানীয় নির্বাচন তাদের ভাবনায় নেই। এই পরিস্থিতিতে বিএনপি সরকারের নীতির দিকে নজর রাখছে এবং সেই অনুযায়ী পরবর্তী পরিকল্পনা সাজাবে।
বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেছেন, “জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা বিএনপির প্রধান দায়িত্ব।” বিএনপির মতে, দ্রুততম সময়ে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ।
২০২৫ সালকে ঘিরে বিএনপির কৌশল স্পষ্ট: শান্তিপূর্ণ উপায়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা, দলীয় কাঠামো মজবুত করা এবং জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। সরকারের নীতির ওপর নির্ভর করে বিএনপি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে, তবে সংঘাত এড়িয়ে চলবে। একইসঙ্গে, দলটি জামায়াতসহ অন্যান্য জোটসঙ্গীদের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করবে।
বায়ান্ন/এএস/একে