ঢাকা, রবিবার ৫ মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১

হোসেনপুরে কাওনা সেতুর কাজ নির্দিষ্ট সময়ে সমাপ্ত না হওয়ায় জনদূর্ভোগ

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: | প্রকাশের সময় : সোমবার ৬ মার্চ ২০২৩ ১০:৪৮:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

 

 

কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর-পাকুন্দিয়া টু ঢাকা সড়কে নির্মাণাধীন নরসুন্দা নদীর উপর কাওনা সেতুর কাজ নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ৯ মাস পার হলেও সেতুর কাজ সমাপ্ত হয়নি।  এ অবস্থায় এ সড়ক দিয়ে হাজার হাজার যানবাহন ঢাকা ও আশপাশে যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য নির্মাণাধীন সেতুর পাশে বিকল্প একটি মাটির সরু রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। যা দিয়ে যানবাহন পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দ্রুত সেতুর কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন চলাচলকারী যাত্রী ও এলাকাবাসী। 

 

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, হোসেনপুর-পাকুন্দিয়া আঞ্চলিক সড়কের নরসুন্দা নদীর উপর নির্মাণাধীন কাওনা সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত বছরের ৩০ মে কিন্তু সেতুর একটি গার্ডার নির্মাণ ও ছাদ ঢালাইয়ের কাজ দেড় বছরের বেশি সময় ধরে ফেলে রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে ঢাকায় যাতায়াতে হোসেনপুর, পাকুন্দিয়া এবং ময়মনসিংহের নান্দাইলের যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতুর অর্ধেক কাজও এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি। নদীতে এখন পানি নেই। সেখানে কৃষকেরা ফসলের আবাদ করেছেন। সেতুর পাশের নিচু জমি দিয়ে বিকল্প মাটির রাস্তা করা হয়েছে। নদীতে পানি বাড়লেই এ রাস্তা তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ সড়ক দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন পোল্ট্রি খামারি মাওলানা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদার নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না করায় আমার মত হাজারো পথচারীকে দীর্ঘদিন ধরে চরম ঝুঁকি ও দুর্ভোগে চলাচল করতে হচ্ছে। এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চলাচলে ধুলা-বালিতে আচ্ছন্ন হয় চারপাশ। মাটির রাস্তা দিয়ে রিকশা, ইজিবাইক, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, ট্রাক ও বাস খুবই রিক্সে চলাচল করছে। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, কাঁচা রাস্তায় গাড়ি চলাচল করায় আশপাশ ধুলায় ছেয়ে যায়। উঁচু-নিচু রাস্তা আর ধুলাবালুতে চরম দুর্ভোগ হচ্ছে তাঁদের। এ রাস্তায় চলাচল করা এক ইজিবাইক চালক জানান, এই সেতুর নির্মাণ কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গড়ি-মসি করায় আমার মত নিন্ম আয়ের মানুষের খুবই কষ্ট হচ্ছে। অন্য পাশ থেকে বড় গাড়ি এলে আমাদের ইজিবাইক সাইড করে বসে থাকা লাগে। নান্দাইল-বাকচান্দা থেকে ঢাকাগামী জলসিঁড়ি পরিবহন বাসের একাধিক চালক ও হেলপাররা জানান, এ রাস্তা দিয়ে অনেক সময় গাড়ি উল্টে যাওয়ার উপক্রম হয়। তবু আশপাশে বিকল্প সড়ক না থাকায় এখান দিয়েই যেতে হয়। এ পথ এড়াতে গেলে অন্তত ২৫ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে যেতে হয়। এতে সময় ও জ্বালানি খরচ অনেক বেড়ে যায়। স্থানীয়রা বলেন, প্রায়ই এ সড়কে দুর্ঘটনা ঘটে। গত দেড়–দুই মাস আগে এখান দিয়ে যাওয়ার সময় একটি ইজিবাইক উল্টে এক নারী নিহত হন, তিন–চারজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া কুয়াশায় মালবাহী একটি ট্রাক উল্টে গিয়েও হতাহতের ঘটনা ঘটে।

এলজিইডির হোসেনপুর উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে এলজিইডির অর্থায়নে ৪০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এইচটিবিএলের সঙ্গে এই চুক্তি হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী প্রায় তিন কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু কাজ শুরুর কিছুদিন পরই ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আর কাজ করেনি। পরে সেতুটি নির্মাণের জন্য কিশোরগঞ্জের এস আলম গ্রুপ চুক্তিবদ্ধ হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের মালিক এস আলম জানান, নিয়মিত বরাদ্দের টাকা পাওয়া যাচ্ছে না বলে সেতুর কাজ কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেতুর অবশিষ্ট কাজ শেষ করা হবে। হোসেনপুর উপজেলা এলজিইডি'র প্রকৌশলী গালিব মোর্শেদ জানান, এ সপ্তাহের মধ্যেই ৪ নম্বর গার্ডারের কাজ শেষ করা হবে। আসছে বর্ষা মৌসুমের আগেই শতভাগ কাজ সম্পন্ন করে সেতুটি চলাচলের উপযোগী করা হবে। কিশোরগঞ্জ এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মো. হাবিবুল্লাহ জানান, আশা করছি বাকি কাজ আগামী এক মাসের মধ্যেই সম্পন্ন করা হবে।