ঢাকা, মঙ্গলবার ১৪ মে ২০২৪, ৩১শে বৈশাখ ১৪৩১
বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দিলেন ৩২ জন

১১ মাসে ৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ জেলা কালচারাল অফিসারের বিরুদ্ধে ! শাস্তি ও অপসারণ দাবি

ফরহাদ খান, নড়াইল : | প্রকাশের সময় : সোমবার ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৪:১২:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

নড়াইল জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রায় ৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নড়াইলে যোগদানের পর গত ১১ মাসে এই ৩০ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতির ঘটনায় তার শাস্তি ও অপসারণ দাবি করেন ভুক্তভোগীসহ সাংস্কৃতিককর্মীরা। রোববার (২৪ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা থেকে পৌনে ২টা পর্যন্ত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এম এম আরাফাত হোসেনের কার্যালয়ে ৩২জন সাংস্কৃতিককর্মী, শিল্পকলা একাডেমির শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও দু’জন ব্যবসায়ীর স্বাক্ষী থেকে এ দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়টি উঠে আসে।

শহরের অংকন লাইট হাউজের মালিক পলাশ দেবনাথ বলেন, জেলা কালচারাল অফিসার গত ১২ জুন তার দোকানের দু’টি প্যাড ব্যবহার করে একটিতে ৩ লাখ ৪৪ হাজার এবং অপরটিতে ৩ লাখ ২২হাজার টাকার বিল দেখিয়েছেন। অথচ আমার কাছ থেকে তিনি কোনো কাজই করেননি। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। এ দুর্নীতির জন্য আমি তার বিচার দাবি করছি।

শহরের পাওয়ার ভয়েজ সাউন্ডের মালিক রবিউল ইসলাম রুবেল বলেন, গত ১৩ জুন কালচারাল অফিসার শিল্পকলা অডিটোরিয়াম সংস্কারের নামে তার দোকানের একটি প্যাড ব্যবহার করে ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকার বিল দেখালেও এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।

নড়াইলের বাংলা বাউল দলের সভাপতি ইকবাল হোসেন জানান, গত ৩ ডিসেম্বর জেলা শিল্পকলা অডিটোরিয়ামে গণজাগরণের সাংস্কৃতিক উৎসবে সংগঠনের শিল্পীরা গান করেন। সরকারি ভাবে আমাদের জন্য ১০ হাজার বরাদ্দ থাকলেও দেয়া হয়েছে মাত্র দুই হাজার টাকা। এ উৎসবে মোট বাজেট ছিল ২ লাখ টাকা। ৭২জন শিল্পী, বিচারক ও কলাকুশলী অংশগ্রহণ করলেও আর কাউকে কোনো টাকা দেয়া হয়নি।
সংগীত শিল্পী পূর্বা সোম বলেন, গত ৭ জুন কালিয়ায় পটগানের অনুষ্ঠান এবং ৩ ডিসেম্বর গণজাগরণের সাংস্কৃতিক উৎসবে গান করি। সরকারি ভাবে আমাদের জন্য নির্ধারিত সম্মানি থাকলেও তা দেয়া হয়নি। একই অভিযোগ করেন-মনিমা আক্তার মনি, পিংকি সাহা, অথই সোম ও মেঘা সোম।

অভিভাবক কল্যানী বিশ্বাস বলেন, আমার ছেলে অংকন বিশ্বাসের সংগীত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের সার্টিফিকেট নেয়ার জন্য জেলা কালচারাল অফিসার অতিরিক্ত ৪০০ টাকা নিয়েছেন। যা বিনামূল্যে দেয়ার কথা।

অভিভাবক বিথি সাহা, চন্দনা মোহন্তসহ অনেকে বলেন, জেলা কালচারাল অফিসার সবসময় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করেন। আমরা তার অপসারণ ও শাস্তি চাই।  

শিল্পকলা একাডেমির সাবেক অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর শিমুল শেখ বলেন, গত জুলাই মাসে নড়াইলে চাকরি করাকালীন সময়ে জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমানের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় আমার কাছ থেকে ছয়টি কাগজে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে রাখেন। এরপর আগস্ট মাসে আমাকে পথের কাঁটা ভেবে মেহেরপুরে বদলি করেন।

অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমান এ বছরের জানুয়ারিতে নড়াইলে যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শিল্পী, বিচারক ও কলাকুশলীদের জন্য সরকারি নির্ধারিত সম্মানি দেন না। অনুষ্ঠনের জন্য যে বরাদ্দ থাকে তার চারভাগের একভাগও খরচ করেন না। সম্প্রতি জেলা শিল্পকলা অডিটোরিয়ামের লাইটিং, সাউন্ড, ইলেকট্রিক ও ভবন সংস্কারে ১০ লাখ টাকার কাজ হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এ কাজ খাতা-কলমে টেন্ডার দেখিয়ে মূলত নিজেই শেষ করেছেন।

এদিকে, জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমানের দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে খবর প্রকাশে সাংবাদিক এস কে সুজয়ের নামে গত ২১ ডিসেম্বর সদর আমলী আদালতে ৫০ লাখ টাকার মানহানি মামলা করেন। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানান সাংবাদিকরা। সুজয় যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক প্রতিদিনের কথা এবং ঢাকার দৈনিক জনবাণী পত্রিকার নড়াইল প্রতিনিধি।

অপরদিকে জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট নড়াইলের সভাপতি মলয় কুন্ডু বলেন, জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমান যোগদানের ১১ মাসের মধ্যে প্রায় ৩০ লাখ টাকা দুর্নীতি করেছেন। আমরা তার অপসারণ ও শাস্তি দাবি করছি। তাকে অপসারণ করা না হলে মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এদিকে, প্রায় দেড় বছর আগে ময়মনসিংহ জেলা কালচারাল অফিসার হিসেবে কর্মকত থাকা অবস্থায় ব্যাপক দুর্নীতির কারণে হামিদুর রহমানকে প্রত্যাহার করে ঢাকায় বদলি করা হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

নড়াইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এম এম আরাফাত হোসেন বলেন, রোববার অনেক শিল্পী, অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিককর্মীরা জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে স্বাক্ষ্য দিয়েছেন। তদন্ত চলছে। আগামি এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়া হবে।