সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের দীর্ঘ ৫৩ বছরের শাসনের অবসান ঘটল। দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে করে রাজধানী দামেস্ক ছেড়ে পালিয়েছেন। আজ রোববার দেশটির সেনাবাহিনীর দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তবে তিনি কোথায় গেছেন, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সিরিয়ার শাসনে আসাদ পরিবারের আধিপত্য শুরু হয় ১৯৭১ সালে। হাফেজ আল-আসাদ সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন এবং তিন দশক ধরে দেশ পরিচালনা করেন। ২০০০ সালে তাঁর মৃত্যুর পর ক্ষমতা গ্রহণ করেন তাঁর ছেলে বাশার আল-আসাদ। এরপর তিনি একই বছরের জুলাই মাসে বাথ পার্টির নেতা এবং সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হন।
প্রথমদিকে উদারপন্থী সংস্কারক হিসেবে পরিচিতি পেলেও বাশার আল-আসাদের শাসনব্যবস্থা অতি দ্রুত কঠোর দমননীতির দিকে মোড় নেয়। ২০১১ সালে সিরিয়ার জনগণ গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলনে নামলে আসাদ বিরোধীদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে সহিংস দমন শুরু করেন। এই দমননীতি থেকেই সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত।
দীর্ঘ এ সংঘাতে লাখ লাখ মানুষ নিহত হয়েছেন, বাস্তুচ্যুত হয়েছেন কোটির বেশি। আসাদের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের মতো ভয়াবহ অভিযোগও ওঠে। সরকার-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে কয়েকটি নির্বাচন আয়োজন করলেও সেগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ‘অগণতান্ত্রিক’ হিসেবে বিবেচিত হয়।
আসাদ তাঁর সমর্থক আলাওয়াইট সম্প্রদায়ের ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় টিকে ছিলেন। তবে দীর্ঘদিনের সামরিক সংঘাত, অর্থনৈতিক সংকট এবং বিদ্রোহীদের ক্রমবর্ধমান শক্তি তাঁর অবস্থান দুর্বল করে দেয়। রবিবার বিদ্রোহীদের সশস্ত্র অভিযানের মুখে তিনি দামেস্ক ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
আসাদ পরিবারের শাসনের অবসানে সিরিয়া একটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। তবে আসন্ন সময়টি কীভাবে জাতিকে পুনর্গঠনের পথে নিয়ে যাবে, তা এখন দেখার অপেক্ষা। দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ, ধ্বংসস্তূপ এবং রাজনৈতিক সংকট পেরিয়ে দেশটি কি গণতান্ত্রিক পথে হাঁটবে, নাকি নতুন কোনো সংঘাতের মুখোমুখি হবে, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।
সিরিয়ার জনগণ ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টি এখন দেশটির ভবিষ্যতের দিকে।
বায়ান্ন/এসএ