চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ৪১টি ওয়ার্ডের সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে জাতীয় দৈনিক বায়ান্ন ও দৈনিক সাঙ্গুতে ধারাবাহিক ওয়ার্ড পরিক্রমা প্রকাশ অব্যাহত রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আজ প্রকাশিত হলো ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের বিশেষ প্রতিবেদন। কাল থাকছে ৪ নম্বর চাঁন্দগাও ওয়ার্ডের প্রতিবেদন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ৬ নং পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের কার্যক্রম চলছে ভাড়া ভবণে। সিটি কর্পোরেশনের বরাদ্ধ অনুযায়ি ভাড়া বাবদ ৮ হাজার টাকা পাওয়া গেলেও কাউন্সিলরকে প্রতি মাসে ভাড়া গুনতে হচ্ছে ২৩ হাজার টাকা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, ওয়ার্ডের সচিব মো. শাহ আলম। জানা গেছে, ওয়ার্ডটিতে আশাতিত উন্নয়ণ হলেও চাঁদাবাজি, কিশোর অপরাধ মাদকের আগ্রাসন চলছে। স্থানিয় প্রশাসন ও এই ওয়ার্ডের দূ-দুবার নির্বাচিত সফল ও জনপ্রিয় কাউন্সিলর এম আশরাফুল আলম এসব বন্ধে বরাবরই সোচ্ছার বলে জানিয়েছেন, কেউ-কেউ। জলাবদ্ধতা এই ওয়ার্ডের প্রধান সমস্যা। রয়েছে জোয়ার জনিত জটিলতাও। এতে করে বর্ষাকালে মানুষের ভোগান্তির কোনো অন্ত থাকে না। এছাড়া বিভিন্ন নিচু এলাকায় সারাবছরই জোয়ারের পানি ওঠে বলে জানিয়েছেন, স্থানিয় বাসিন্দারা। তবে কাউন্সিলর এম আশরাফুল আলম জলাবদ্ধতা নিরসণে রাস্তা উচু করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া ওয়ার্ডের বারই পাড়া থেকে কর্ণফূলীর মোহনা পর্যন্ত খাল খননের কর্মসূচী শুরু হচ্ছে বলে জানিয়ে ওয়ার্ড সচিব জানান, এই কর্মসূচী বাস্তবায়ন হলে জলাবদ্ধতার সমস্যা আর থাকবে না। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) চাঁন্দগাও থানা এলাকায় ওয়ার্ডটির অবস্থান। সরেজমিনে ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কোথাও কাঁচা রাস্তা পাওয়া না গেলেও কিছু-কিছু সমস্যার কথা জানিয়েছেন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। ওয়ার্ডটির আয়তন আয়তন ২.৪১ বর্গ কিলোমিটার। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের মোট জনসংখ্যা ৬২,১১৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩২,২৭৭ জন এবং মহিলা ২৯,৮৩৬ জন। মোট পরিবার ১৩,৭১৫টি।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পূর্বাংশে পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের অবস্থান। এর পশ্চিমে ৮নং শুলকবহর ওয়ার্ড ও ১৬ নং চকবাজার ওয়ার্ড, দক্ষিণে ১৭নং পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ড, পূর্বে ১৮ নং পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ড এবং উত্তরে ৪নং চান্দগাঁও ওয়ার্ড অবস্থিত। ওয়ার্ডটির প্রশাসনিক কাঠামো হচ্ছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ৬নম্বর পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ড চান্দগাঁও থানার আওতাধীন এবং ২৮৫ নং চট্টগ্রাম-৮ জাতীয় নির্বাচনী এলাকার অংশ। ওয়ার্ডের শিক্ষা ব্যবস্থা বলতে ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ি সাক্ষরতার হার ৬৭.৮%। এ ওয়ার্ডে ৩টি মাদ্রাসা, ৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ওয়ার্ডটিতে কয়েকটি বাজার অসংখ্য মসজিদ, মাদ্রাসা রয়েছে। এছাড়া রয়েছে পোশাক শিল্প কারখানাও। সরেজমিনে ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও বাসিন্দাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, একসময় ওয়ার্ডটি অবহেলিত থাকলেও বিগত ৫ বছরে ওয়ার্ডের ব্যাপক উন্নয়ণ হয়েছে। ভাঙ্গা ও আধা কাঁচা সড়কের দেখা না মিললেও জলাবদ্ধতা, মশার উপদ্রব ও ফুটপাতে হকারদের উৎপাত বেশী বলে জানিয়েছেন, স্থানিয় বাসিন্দারা। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বহদ্দার হাট মোড় আশপাশের এলাকায় ফুটপাত দখলকারিদের বেপরোয়া উৎপাতে পথচারিরা ফুটপাত ছেড়ে মূল সড়ক দিয়ে চলাচল করছে। এতে দূর্ঘটনাও ঘটছে। ফুটপাতে হকারদের উৎপাতে বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠলেও আইন প্রয়োগকারি সংস্থা এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। অপরদিকে বহদ্দার হাট পুলিশ বক্সের বিপরীতে ফুটপাতের পত্রিকা হকার বাবুল জানান, পুলিশের চাপাচাপির কারণে ব্যবসা চালাতে পারছি না। কিছুক্ষণ পরপর পুলিশ এসে হকারদের ধাওয়া করে বলে জানান তিনি। এছাড়া বিভিন্ন সড়কের ড্রেনের পাশের বৈধ দোকানিরা তাদের মালামালের পসরা দোকানের বাইরে অথ্যাৎ নালার স্ল্যাবের উপর রাখার কারণে পথচারি ও বাসিন্দারা রাস্তার উপর দিয়ে চলাচল করতে হয়। এতে মানুষের ভোগান্তি আরো বেড়ে যায়। ওয়ার্ডের কয়েকটি এলাকায় চুরি-ছিনতাই, কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতাসহ মাদক ব্যবসায়ি ও সেবীদের উৎপাতের কথাও জানিয়েছেন কেউ-কেউ। ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকার স্থানিয় বাসিন্দাদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, এক সময়ে এই ওয়ার্ডটি ছিল খুব অবহেলিত। বিগত পাঁচ বছরে ওয়ার্ডটিকে অনেক আধুনিকায়ন করেছেন, কাউন্সিলর এম আশরাফুল আলম। এবারও তিনি পূনরায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে এলাকার উন্নয়ণে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছেন বলে জানিয়েছেন, ওয়ার্ডে সেবা নিতে আসা এক ব্যক্তি। ওয়ার্ডের সচিব মো. শাহ আলম জানান, মশক নিধনসহ পরিছন্নতা অভিযান চলমান রয়েছে। ওয়ার্ডের সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে গতকাল এ প্রতিবেদক কাউন্সিলরের শরনাপন্ন হলে তিনি বলেন, চসিক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরীর নের্তৃত্বে চট্টগ্রামের উন্নয়ণ ও অগ্রগতির পথে যে যাত্রা তা আরো বেগবান করতে ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডকে ঢেলে সাজাতে চাই। এ লক্ষ্যে তিনি ওয়ার্ডবাসীর সহযোগীতা কামনা করে বলেন, কাউন্সিলর হিসেবে আমি দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার পর ওয়ার্ডের প্রতিটি এলাকা ঘুরে-ঘুরে পরিদর্শন করেছি এবং যেখানে সমস্যা ছিল সেখানে তাৎক্ষনিকভাবে সমাধানের পদক্ষেপ নিয়েছি। তিনি বলেন, আমার গত মেয়াদে ওয়ার্ডে ব্যাপক উন্নয়ণ কাজ করেছি। নীচু রাস্তা উচু করণসহ ওয়ার্ডের কবরস্থানগুলোতে আলোকায়ন করেছি। কিছু-কিছু সমস্যা রয়েছে, এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে, তিনি সবার সাথে সমন্বয় করে এসব সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান।