ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

অনিরাপত্তায় কক্সবাজার বিমানবন্দর, রানওয়েতে ঢুকে পড়ছে মানুষ ও নানান প্রাণী

এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন, কক্সবাজার : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ২ ডিসেম্বর ২০২১ ১১:৪৯:০০ পূর্বাহ্ন | দেশের খবর
কক্সবাজার  বিমানবন্দরের সীমানা প্রাচীরের বিভিন্ন অংশ ভঙ্গুর থাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে। সীমানা প্রাচীরের ভাঙা অংশ দিয়ে  রানওয়ের ভেতর  এপার-ওপারে যাতায়াত করছেন লোকজন। শুধু মানুষ নয়, বিমান অবতরণ ও উড্ডয়নের সময় প্রাচীরের ভাঙা অংশ দিয়ে ঢুকে পড়ছে গরু, ছাগল, কুকুরসহ বিভিন্ন প্রাণী।
 
মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় উড্ডয়নের সময় বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজের পাখার ধাক্কায় দুটি গরুর মৃত্যু হয়। তবে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যান ৯৪ জন যাত্রী। বিমানটিরও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এরপর থেকেই আলোচনায় এসেছে কক্সবাজার বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টি।
 
কক্সবাজার বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক (এসপি) নাইমুল হক নাইম  বলেন, ‘বিমানের ফ্লাইটটি মঙ্গলবার উড্ডয়নের সময় ডান পাশের পাখায় ধাক্কা লেগে ছিটকে পড়ে দুটি গরু ঘটনাস্থলেই মারা যায়। তবে উড়োজাহাজটি ৯৪ যাত্রী নিয়ে সফলভাবেই উড্ডয়ন করে। বিমান চলে গেলে মরা গরু দুটি সরিয়ে ফেলার পর নভোএয়ার ও ইউএস বাংলার দুটি ফ্লাইট সফলভাবে ঢাকার উদ্দেশ্যে কক্সবাজার ত্যাগ করে।
 
 
বিমানবন্দরের ওই ঘটনায় চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনার সময় সেখানে দায়িত্বরত চার আনসার সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে বলে বুধবার (১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার বিমানবন্দরের ম্যানেজার মো. গোলাম মোর্তুজা হোসেন।
 
বুধবার বিকেলে কক্সবাজার বিমানবন্দর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিমানবন্দরের কাছ ঘেঁষে নুনিয়াছড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, নুনিয়াছড়ার শেষ মাথা, ৬ নম্বর এলাকার বেশিরভাগ জায়গায় নেই কোনো গাইডওয়াল। যেটুকু আছে তাও জরাজীর্ণ। এসব অংশ দিয়ে অবাধে রানওয়ের ওপর দিয়ে এপার-ওপার যাতায়াত করছেন স্থানীয়রা। রানওয়েকে চলাচলের ‘শর্টকাট’ পথ হিসেবে ব্যবহার করছেন তারা। অকারণে ঘোরাঘুরি করতেও রানওয়েতে ঢুকছেন অনেকে। প্রাচীরের ভেঙে পড়া অংশ কিংবা দেওয়াল না থাকা স্থান দিয়ে গরু, ছাগলসহ বিভিন্ন প্রাণী ঢুকে পড়ছে।
 
সূত্র জানায়, বৃটিশ আমলেই কক্সবাজার বিমানবন্দরের যাত্রা। একে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীতকরণ প্রকল্প শুরু হয় ২০১৫ সালের ২ জুলাই। পুরোপুরি কাজ শেষ না হলেও ২০১৭ সালের ৬ মে থেকে রানওয়েটিতে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ওঠা-নামা করছে। রোহিঙ্গা ইস্যুসহ নানা কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে এর উদ্বোধন করেন। এখন পর্যটন ও রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে প্রতিদিনই আকাশপথে কক্সবাজার আসছেন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার অসংখ্য কর্মকর্তা। এ অবস্থায় মঙ্গলবার উড্ডয়নের সময় উড়োজাহাজের ধাক্কায় দুটি গরুর মৃত্যুর পর অব্যবস্থাপনার কারণে বিমানবন্দরটির নিরাপত্তা ঝুঁকি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
 
 
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ  বলেন, ‘কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে যেমন বাড়ছে তেমনি অবকাঠামোরও উন্নয়ন হচ্ছে। তবে, সেভাবে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারের অভাব রয়েছে। পর্যাপ্ত স্ক্যানার মেশিন নেই, বিমানবন্দরের চারদিকে গাইডওয়াল নেই। ফলে গরু-ছাগল ঢুকছে। রানওয়ে দিয়ে এপারের লোক ওপারে সহজে যাতায়াত করছে। এর ফল মঙ্গলবারের অঘটন।
 
এসব অব্যবস্থাপনা দূর করার পরামর্শ দিয়েছেন এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক। তা নাহলে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটিতে যেকোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
 
জানতে চাইলে কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক মো. গোলাম মোর্তজা হোসেন  বলেন, ‘মঙ্গলবারের ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি খুঁজতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিমানবন্দরের কয়েকটি পয়েন্টে সীমানা প্রাচীর সংস্কারের কাজ চলছে। দ্রুত কাজ শেষ হলে জন ও প্রাণী প্রবেশ বন্ধ হয়ে যাবে। তখন নিরাপত্তা ঝুঁকিও কেটে যাবে।
 
মঙ্গলবারের ঘটনায় বুধবার মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক হয়েছে বলে জানান বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কক্সবাজার-২ আসনের এমপি আশেক উল্লাহ রফিক।
 
তিনি বলেন, ‘সেখানে বিষয়টি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। নিরাপত্তা-সম্পর্কিত সমস্যাগুলো শিগগিরই সমাধান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) থেকেই ভাঙা গাইডওয়াল নির্মাণ শুরু এবং প্রাচীর নির্মাণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেখানে নিরাপত্তাপ্রহরী বাড়াতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যে পাইলট মঙ্গলবারের ঘটনায় বিমানটিকে বুদ্ধির সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করে নিরাপদে অবতরণ করিয়েছেন তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে সংসদীয় কমিটি।
 
কক্সবাজার বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমান, নভোএয়ার ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের ৯ থেকে ১০টি বিমান দৈনিক আসা-যাওয়া করে। এরমধ্যে বোয়িং ৭৩৭ বিমানও রয়েছে। এর পাশাপাশি আসা-যাওয়া করে পাঁচ থেকে ছয়টি কার্গো বিমান।
 
এর আগে ২০১৬ সালে কক্সবাজার বিমানবন্দরের উত্তরে বঙ্গোপসাগরে একটি কার্গো উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে বিদেশি পাইলটসহ তিনজনের মৃত্যু হয়। বিমানটি কক্সবাজার থেকে চিংড়ি পোনা নিয়ে যশোর যাচ্ছিল। ২০১৭ সালে একটি বেসরকারি উড়োজাহাজের চাকায় পিষ্ট হয়ে রানওয়েতে মারা যায় তিনটি কুকুর। সবশেষ মঙ্গলবার উড়োজাহাজের পাখার ধাক্কায় দুটি গরু মারা গেলো।