ঢাকা, শনিবার ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮শে পৌষ ১৪৩১

অনিয়মে ছড়াছড়ি হরিনাকুণ্ডু আলহেরা প্রাইভেট ক্লিনিক

মোঃ বনি, হরিণাকুন্ডু (ঝিনাইদহ): প্রতিনিধি | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ৫ মে ২০২৩ ০২:২৯:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর
 
 
 
কোন প্রকার নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই দিনের পর দিন চলছে হরিনাকুন্ডুর আলহেরা (প্রা:) ক্লিনিক। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে কোন প্রকার আবাসিক ডাক্তার- নার্সসহ প্রয়োজনীয় জনবল না থাকার পরও বহাল তবিয়তে এ ক্লিনিকের কার্যক্রম চললেও অদৃশ্য কারনে  কর্তৃপক্ষ রয়েছেন নীরব দর্শকের ভূমিকায়। মালিক রেজাউল ইসলাম কর্তৃক আলহেরা ক্লিনিকের আড়ালে দেহব্যবসা চালানোর ও অভিযোগ উঠেছে বারবার। সম্প্রতি একজন নার্স নতুন করে ঐ ক্লিনিকের আড়ালে দেহব্যবসা চালানোর অভিযোগ তুলেছেন। ক্লিনিকটি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে অবস্হিত হওয়ায় এ খবরে ফুসে উঠেছেন এলাকার সুশীল সমাজসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের সংগঠন। তারা অবিলম্বে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স থেকে ঐ প্রতিষ্ঠানটির অপসারণপূর্বক মালিক রেজাউল ইসলামের বিচার দাবী করেছেন।
 
জানা যায়, ২০১৮ সালে প্রাইভেট ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার জন্য হরিনাকুন্ডুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের নিচতলা ও উপতলার পুরো ফ্লোরই ভাড়া নেন। এরপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই সেখানে 'আলহেরা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার' নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে ব্যবসা চালানো শুরু করেন। অভিযোগ রয়েছে, শুরু থেকেই তার ক্লিনিকে কোন আবাসিক ডাক্তার, ডিপ্লোমা নার্স কিংবা ল্যাব ট্যাকনেশিয়ান ছাড়াই তিনি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। 
 
জানা যায়, চলতি বছরের ১৯ ফেব্রয়ার তারিখে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডাঃ শুভ্রা রানী দেবনাথ আলহেরা প্রাইভেট ক্লিনিক পরিশর্দন করেন।  সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী তিন জন ডাক্তার ও ছয়জন নার্স থাকার নির্দেশনা থাকলেও পরিদর্শনকালে তিনি ঐ ক্লিনিকে কোন ডাক্তার কিংবা নার্সের উপস্থিতি পান নাই। এ কারনে তিনি ২২/০২ /২৩ তারিখে  স্বারক নং সি এসঝি/শ-১/২০২০/৩৩৯ তারিখ ২২-২-২০২৩  এর মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানের মালিককে ব্যাখ্যা তলবও করেন। অভিযোগ রয়েছে, ঐ প্রতিষ্ঠানের মালিক রেজাউল ইসলাম নিজেই রুগী দেখাসহ এ্যাপেন্ডিসাইটিস ও সিজার অপারেশন করেন ।
সিভিল সার্জন কর্তৃক আলহেরা ক্লিনিক পরিদর্শনের দিন থেকেই আবারো ডাক্তার-নার্স বাদেই অপারেশন সহ সকল প্রকার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা যায়। ২০১৯ সালে এই প্রতিষ্ঠানের আড়ালে সুন্দরী রমনী এনে দেহব্যবসা চালানোর অভিযোগ তুলেছিলেন  বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক কমিশনার মরহুম সাকের আলী। তিনি বিষয়টি তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগও করেছিলেন। কিন্তু প্রভাবশালী মহলের চাপে ইউএনও তার ঐ অভিযোগের কোন সুরাহা করতে ব্যর্থ হন।
নতুন করে প্রতিষ্ঠানটিতে দেহব্যবসা পরিচালনার
খবরে ফুসে উঠেছে স্হানীয় সচেতন মহল,
হরিণাকুন্ডুর বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানেরা।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের সংগঠন '' মুক্তিযোদ্ধার সংসদ সন্তান কমান্ড' এর সভাপতি সাদিক আহমেদ বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে আমাদের গৌরবের জায়গা। তাই এখানে সরকারি আদেশ বহির্ভূত কোনো ক্লিনিক ব্যবসা পরিচালিত হোক বা তার আড়ালে দেহব্যবসা পরিচালিত হোক তা আমরা হতে দেবো না। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
 
 সুশীল সমাজ বলছেন, সিভিল সার্জন পরিদর্শনে এসে কোন ডাক্তার- নার্স না পাওয়ার পরও কিভাবে ক্লিনিকটি চলমান থাকে তা বোধগম্য নয়। প্রতিষ্ঠানের আড়ালে দেহব্যবসা পরিচালনার অভিযোগও বহু পুরনো। মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের মত জায়গায় এটা চলতে পারেনা। 
 
অনিয়ম ও দেহব্যবসার বিষয়ে  ক্লিনিক মালিক রেজাউল ইসলাম বলেন, এখানে দেহব্যবসা হয় বলে আমার জানা নেই। ক্লিনিকে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে, এগুলো ঠিক করা হবে।
 
এ বিষয়ে  হরিনাকুন্ডু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্মিতা সাহা বলেন, ক্লিনিক মালিকের বিরুদ্ধে এ ধরনের অনৈতিক কাজ চালানোর অভিযোগ আমিও পেয়েছি। সে ঠিকমত ভাড়াও পরিশোধ করেনা। তাকে ৭ দিনের ভেতর বকেয়া পরিশোধসহ মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ছাড়ার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। 
 
সিভিল সার্জন ডা. শুভ্রা রানী দেবনাথ বলেন, তিনি সতর্কতা করার জন্য একবার কৈফিয়েত তলব করেছেন। তিনি পুনরায় ঐ ক্লিনিকে পরিদর্শনে যাবেন এবং বিধি অনুযায়ী ব্যবস্হা নেবেন।