জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই। আমরা আল্লাহ এবং মানুষের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এই জমিনে ইনসাফ কায়েম করতে চাই। যেখানে মানুষ চাইলেও অধিকার পাবে, না চাইলেও অধিকার পাবে। আমরা দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই। আমরা সুষম উন্নয়ন মানুষকে উপহার দিতে চাই। কোন এলাকাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে না। সকল এলাকায় সমানভাবে উন্নয়ন করবো। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ দেখতে চাই। যে বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ বেকার যুবকের মিছিল হবে না। যুবকেরা সম্পদে পরিণত হবে। শিক্ষা শেষ হওয়া মাত্র তাদের হাতে কাজ তুলে দেয়া হবে। এমন শিক্ষা এবং এমন জাতি চাই। সেই শিক্ষা অবশ্যই নৈতিক এবং দুনিয়া ও জাগতিক সমন্বয় হতে হবে। মানুষ যেন শিক্ষা পেয়ে মানুষ হয়। শিক্ষা নিয়ে যেন ডাকাত না হয়। এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা আমরা গড়ে তুলতে চাই।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) বিকালে সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মা বোনেরা ঘরেও সুরক্ষিত থাকবে, কর্মস্থলেও সুরক্ষিত থাকবে। তাদের দিকে কেউ চোখ তুলে তাকাতে পারবে না। আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয় যে, আমরা ক্ষমতায় আসলে নারীদের ঘর থেকে বেরুতে দেওয়া হবে না। কিন্তু কথা দিচ্ছি এমন হবে না।
তিনি আরও বলেন, মহানবী (স.) সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ কাজেও নারীদের যুক্ত করেছেন। যুদ্ধ ক্ষেত্রে নারীদের যুক্ত করেছেন। তাই আমরা তাদের আটকে রাখার কে। তারা সামর্থ অনুযায়ী দেশের জন্য আত্মনিয়োগ করবে। তাদের পোশাক নিয়ে আমরা বাধ্য করবো না। তারা ইচ্ছা খুশি মতো পোশাক পরতে পারবে। আমরা এমন দেশ তৈরী করতে চাই নারীরা মর্যদার জন্য নিজেরাই পর্দা তৈরী করবে। আমরা এমন একটি দেশ চাই যেখানে মসজিদ মন্দির মঠ গীর্জা কোন কিছুই পাহারা দেওয়া লাগবে না উল্লেখ করে বলেন, আমাদের দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চমৎকার বাগান। এই বাগানে মাঝে মধ্যে হুতোম পেচা ঢুকে পড়ে। এদের সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।
একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীও ভিআইপি উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা তিন দিন পরিষ্কার না করলে আমরা ঘর থেকে বের হতে পারবো না। তাই তাদেরও মর্যাদা দিতে হবে। সেই সম্প্রীতির বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাই। আমরা জাতীয় স্বার্থে দল ও ধর্মের ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করতে চাই। এই দেশকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দেশ বানাতে চাই। কিন্তু আকাশে কালো শকুন ঘুরছে। এই শকুন মাঝে মাঝে ফুস করছে। তাই সতর্ক থাকতে হবে। যে যে যেভাবেই উস্কানি দেক, আমরা ফাঁদে পা দেব না।
তিনি বলেন, কুরআন দ্বীন ও মজলুমের কথা বলতে গিয়ে সারাদেশে যত মানুষ প্রাণ দেননি, তার চেয়ে বেশি প্রাণ দিয়েছে সাতক্ষীরার মানুষ। তাই জামায়াতের কাছে সাতক্ষীরার অবস্থান অনন্য উচ্চতায়। াসক গোষ্ঠী বলতো তারা দেশের উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিয়েছে। কিন্তু সাতক্ষীরায় উন্নয়নের ছিটেফোঁটা পর্যন্ত লাগেনি। তারা সাতক্ষীরাকে দেশের অংশ মনে করত না। চব্বিশের বিজয় এমনিতে এমনিতে আসেনি। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর দিনের বেলায় লগি-বৈঠা দিয়ে খুনিরা আদম হত্যায় মেতেছিল। মানুষের মরদেহের ওপর তারা লাফিয়েছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর থেকে রক্তের হলি খেলায় মেতেছিল। তারা পিলখানা হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে এবং বিচারের নামে জামায়াতের নেতৃবৃন্দকে হত্যা করেছে। যারা এর প্রতিবাদ করতে এসেছে, তাদেরকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বেশি হত্যাকান্ড সাতক্ষীরায় হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জামায়াত আমীর বলেন, আমাদের দেশে অফুরন্ত সম্পদ। কিন্তু তা কাজে আসছে না। যারাই ত্রাতার দায়িত্বে থাকে, তারাই পকেট ভরে। বিগত সরকার সাতক্ষীরার মানুষের উপর জুলুম করেছে। খুন করেছে। গুম করেছে। জনগণের অধিকার দেয়নি। তারা ৫৭জন সেনা কর্মকর্তাকে খুন করেছে। জামায়াতের দুজন আমীরসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশকে খুনের বন্যায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। শত জুলুম অত্যাচারের পরও আমরা পালিয়ে যায়নি। দেশকে যারা ভালোবাসে তারা পালাতে পারে না। আমরা এই দেশকে গড়তে চাই। এই দেশের এক ইঞ্চি মাটিও আমরা ছাড়বো না।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য দেশ। আমরা এমন বাংলাদেশ চাই,যেখানে কোনো ধর্মীয় উপসানালয়ে পাহারা দেওয়া লাগবেনা। তবে তিনি দেশবাসির সতর্ক করে বলেন,সম্প্রীতির এই সুন্দর বাগানে মাঝে মাঝে ভুতোম প্যাচা ঢুকে পড়ে। বাংলার সুন্দর আকাশে মাঝে মাঝে শকুনেরও দৃষ্টি পড়ে।
এর আগে সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে জামায়াতের কর্মী সমর্থকরা সম্মেলনস্থলে আসতে থাকেন। দুপুর হতে না হতেই কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ।
সম্মেলনে জেলা জামায়াতের আমীর শহিদুল ইসলাম মুকুলের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জতউল্লাহ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য মুহাুদ্দস রবিউল বাসার, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য ও সাবেক এমপি গাজী নজরুল ইসলাম, জেলা সেক্রেটারি গাজী আজিজুর রহমান প্রমুখ।