![](https://dainikbayanno.com/storage/inshot-20241224-134234577.jpg)
গাজীপুরে বোতাম তৈরির কারখানায় পুড়ে যাওয়া নিহত শ্রমিকদের পরিচয় মিলেছে।
এর আগে রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে শ্রীপুর পৌরসভার ভাংনাহাটি (মোল্লাপাড়া) এলাকায় মেঘনা গ্রুপের এম এন্ড ইউ ট্রিমস (বোতাম) তৈরির কারখানা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে তিন রঙমিস্ত্রি দগ্ধ হয়ে মারা যান।
নিহতরা হলেন- দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর উপজেলার লোহাচড়া গ্রামের মৃত আব্দুর রউফ সরকারের ছেলে নিহত সোহাগ সরকার (৩২), গোপালগঞ্জ জেলার মোকসেদপুর উপজেলার মহারাজপুর গ্রামের মো. রফিক মাতব্বরের ছেলে শাওন (২২), লালমনিরহাট জেলার সদর উপজেলার তালুকহারাটি গ্রামের মোহাম্মদ বাবুল মিয়ার ছেলে মো: মজমুল হক (২১)। তারা তিনজনই পেশায় রংমিস্ত্রী ছিলেন।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রেজিস্টার অনুযায়ী গুরুতর আহত শ্রীপুর পৌরসভার ভাংনাহাটি এলাকার আজমত আলী আকন্দের ছেলে জাকির হোসেন (৪০), একই এলাকার আব্দুল গফুরের ছেলে রনি (৩০), আব্দুল জব্বারের ছেলে নাজমুল (২৫), আব্দুর রশীদের ছেলে খোকন মিয়া (৩৫), মকবুল শেখের ছেলে লুৎফর (৪২) এবং সে (সোহান) নিজে। তাদের ঘটনার দিনই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
জানা যায়, এ কারখানায় ১৪ জন স্টাফসহ ২৪৭ জন মেশিন অপারেটর রয়েছেন। অগ্নিকাণ্ডে বোতাম তৈরির ৫০টি টানিং মেশিন এবং ৩০টি পুলিশ (বাটন ফিনিশিং) মেশিন পুড়ে গেছে। অগ্নি দুর্ঘটনার সময় লাঞ্চের বিরতি থাকায় তেমন বড় ধরনের কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি।
টঙ্গী কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকেই অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কারখানা পরিদর্শন করেছি। দক্ষিণ পাশের টিনশেডের ওয়েস্টেজ কেমিক্যাল গুদামঘর থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। সেখানে কোনও বৈদ্যুতিক লাইনের সংযোগ দেখতে পাইনি। তবে কেন এবং কীভাবে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হলো তা বুঝতে পারছি না।
ধারণা করছি, যারা রঙের কাজ করছিল তারা ধূমপান অথবা রঙ গলানোর জন্য আগুনের সহযোগিতা নিয়েছিল কিনা তা জানতে হবে। অগ্নিকাণ্ডে কারখানার বৈদ্যুতিক লাইন পুড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা অচল থাকায় আমার আগুন লাগার সূত্রপাত নিশ্চিত হতে পারছি না।
শ্রীপুর পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ২০১৫ সালে কারখানাটি স্থাপিত হয়। আমরা কারখানার ফাইল খুঁজতেছি। ফাইল পওয়া গেলে পরিবেশের ছাড়পত্র, অবস্থানগত ছাড়পত্র এবং নকশা অনুমোদনের অনুমতি আছে কিনা বলতে পারবো। তবে কারখানার অভ্যন্তরে দক্ষিণ পাশের টিনশেড ঘরে কেমিক্যাল ড্রাম রাখার অনুমোদন আছে কিনা যাচাই করে দেখতে হবে। ধারণা করা হচ্ছে, টিনশেডটি কারখানা কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি নির্মাণ করেছে এবং সেটা পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া।
শ্রীপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ব্যারিস্টার সজীব আহমেদ বলেন, আমরা বাহ্যিকভাবে কোনও তদন্ত কমিটি গঠন করি নাই। প্রাথমিকভাবে পৌরসভা, ফায়ার সার্ভিস, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অভ্যন্তরীণভাবে তদন্ত করছে। তবে এটাকে তদন্ত কমিটি বলা যাবে না। মানবিক দিক চিন্তা করে আমরা নিহতদের দাফন-কাফনের বিষয়ে তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা করবো।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (ডিডি) মামুন বলেন, কেমিক্যালের ড্রাম বিস্ফোরিত হওয়ায় আশপাশের পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। উৎপাদন ফ্লোরের পাশেই স্টোর কক্ষে ১২০টির মতো কেমিক্যালের ড্রাম ছিল। আমাদের ফায়ার ফাইটার এবং স্থানীয়দের সহায়তায় ওই ড্রামগুলো বাইরে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিতে পেরেছি। তা না হলে আগুন আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতো। প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হতে পেরেছি, ওয়েস্ট কেমিক্যালের গুদাম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। পরে মুহূর্তেই আগুন পশ্চিম পাশের ডাস্ট গুদামে ছড়িয়ে যায়। তদন্তের পর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুপার (ক্রাইম) আমিনুল ইসলাম বলেন, এম অ্যান্ড ইউ ট্রিমস (বোতাম) তৈরির কারখানায় কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে তা এখনও কেউ বলতে পারেনি। এ ঘটনায় যারা আহত হয়েছেন এবং সুস্থ আছেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কথা বললে হয়তো প্রকৃত ঘটনাটা জানা যাবে। পুলিশ কাজ করছে। এখনও পর্যন্ত কারও পক্ষ থেকে অভিযোগ দেয়নি। আমরা অপেক্ষা করছি আহতদের পক্ষ থেকে কেউ মামলা করে কিনা। যদি তারা মামলা না করে তাহলে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইতোমধ্যে আমাদের পক্ষ থেকে একজন অফিসারকে দায়িত্ব দিয়েছি, তিনি তদন্ত করছেন।
বায়ান্ন/প্রতিনিধি/একে