ঢাকা, রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ঝিনাইদহে হঠাৎ বৃষ্টিতে তলিয়ে গেল কৃষকের স্বপ্ন

এম বুরহান উদ্দীন, ঝিনাইদহ | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ১৮ নভেম্বর ২০২১ ১১:৪৯:০০ পূর্বাহ্ন | দেশের খবর
ঝিনাইদহে গত তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে ছয়টি উপজেলার বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে প্রধান ফসল ধানখেত। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবজিখেত। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার চাষি। ফলে ফসল বাঁচাতে অতিরিক্ত মজুরি খরচ করে তা রক্ষা করতে হচ্ছে। অনেকের আবার শ্রমিক-সংকটে ধান পচে গেছে।
 
কৃষি বিভাগ থেকে জানা যায়, জেলায় এ বছর আমন ধান বপনের লক্ষ্য ছিল ১ লাখ ৪ হাজার ১১৫ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৬১২ হেক্টর জমিতে। জেলায় আমন জাতের (হাইব্রিড ও উফশী) জাতের ৯৬ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমিতে চাষবাদ হয়েছে। এবং স্বর্ণা জাতের ৩৫ হাজার ২১৯ হেক্টর ধান চাষ করা হয়েছে।
 
এ বছর জেলার ৬ উপজেলার মধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ২৫ হাজার ৪৫০ হেক্টর, কালীগঞ্জে ১৮ হাজার ৭০২, কোটচাঁদপুরে ৬ হাজার ২০০, মহেশপুরে ১৮ হাজার ১৫৬, শৈলকুপায় ২৪ হাজার ৮৯৫ এবং হরিণাকুন্ডুতে ১১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় এ বছর ৪ হাজার হেক্টর জমিতে বেশি ধানের আবাদ হয়েছে।
 
সরেজমিনে দেখা যায়, সাগরের লঘু চাপে সারাদেশের মতো ঝিনাইদহে গত ১২ থেকে ১৫ নভেম্বর তিন দিন টানা বৃষ্টি হয়। কৃষকেরা তাদের পাকা ধান কাটার অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু তারা এখন চিন্তিত, কীভাবে সারা বছরের খাবার ঘরে তুলবেন? এ বছর এক বিঘা জমিতে আমন ধান করতে সব মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে শ্রমিক খরচ আরও প্রায় ৩ হাজার টাকা বেড়ে ১৫ হাজারে ঠেকছে। আবার গোখাদ্য বা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার্য বিচালি বা খড় পচে যাওয়ায় ক্ষতি আরও বেড়েছে। অনেকে বাড়তি শ্রমিক দিয়ে পানি থেকে বিচালির আশায় ধান তুলছেন।
 
কৃষক আসাদুল জানান, এক বিঘা জমিতে ৩০ মণ হারে ফলন হয়। সেখানে বৃষ্টির কারণে পানিতে ডুবে যাওয়ায় ৮ থেকে ১০ মণের মতো ধান ঝরে যাবে। আবার বিচালিও পচে নষ্ট হয়ে গেছে।
 
কৃষি শ্রমিক আজগার আলী জানান, হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ায় ধানগুলো পানিতে ডুবে গেছে। প্রতি বিঘা জমিতে ৪ থেকে ৫টি শ্রমিক বেশি লাগবে। যেখানে এক বিঘা জমিতে খরচ হতো ২ হাজার ৫০০ টাকা। সেখানে এখন অতিরিক্ত শ্রমিক লাগবে তিন-চার হাজার টাকা। আবার সময়মতো শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে না।
 
কৃষক শুকুমার অধিকারী জানান, তিন দিনের বৃষ্টিতে বিচালীর ক্ষতি হবে। এই ধান থেকে পরবর্তীতে বীজও করা সম্ভব হবে না। আবার ধান কলো হয়ে যাবে এবং ভাতও খাওয়া যাবে না। এ অবস্থায় সরকার যদি কোনো অনুদান দেয়, তাহলে হয়তো কিছু উপকার হবে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ইউনিয়ন কৃষি উপসহকারী মাঠে আসেননি। আবার কোনো পরামর্শও দেননি।
 
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. আজগর আলী বলেন, জেলায় এ পর্যন্ত ২৮ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। বাকি আছে ৭৫ হাজার ৮১২ হেক্টর জমি। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমনের বাম্পার ফলনও হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে কৃষকেরা কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছের। তবে জমির পানি দ্রুত বের করে দিলে আবহাওয়া ভালো হলে উল্টেপাল্টে শুকালে ক্ষতি কিছুটা কম হবে। তবে এই বৃষ্টিতে অন্যান্য ফসলের উপকার হবে।