ঢাকা, শুক্রবার ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

টাঙ্গাইলে আখ চাষিদের মুখে হাসি

হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল : | প্রকাশের সময় : বুধবার ২৪ অগাস্ট ২০২২ ০৭:৫২:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

টাঙ্গাইলে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে আখের ফলন অনেক ভাল হয়েছে। বাজারে এর চাহিদা থাকায় কৃষকরা ভাল দাম পাচ্ছেন। সঙ্গে সাথী ফসল তো আছেই। সব মিলিয়ে আখ চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। 

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্ত সূত্রে জানা গেছে, বেলে ও বেলে-দোআঁশ মাটি আখ চাষের জন্য উপযুক্ত। ৭-৮ মাসে আখের ফলন পাওয়া যায়। এক মৌসুমের আখ উৎপাদনে দুই মৌসুমের ধানের সময় লাগে-তারপরও সাথী ফসল হওয়ায় সার্বিকভাবে আখ চাষে কৃষরা লাভবান হচ্ছেন। আখ উঁচু-নিচু জমিতেও চাষ করা যায়। আবহাওয়া ও মাটির গুণাগুণের কারণে আশানুরূপ ফলন ও বাজারে বেশ চাহিদা থাকায় দিন দিন আখ চাষের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। আখের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে তেল ফসলের মধ্যে তিল, তিসি, সরিষা, বাদাম, মিষ্টি কুমড়া, আলু ও মসলা জাতীয় ফসলের মধ্যে পেঁয়াজ, রসুন এবং ডাল জাতীয় ফসলের মধ্যে মটরশুটি, ছোলা, মসুর, মুগ ইত্যাদি চাষ করা যায়। 

সূত্র আরও জানায়, চলতি মৌসুমে ৫০০ হেক্টর জমিতে ২৩ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন আখ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু ৩৮৮ হেক্টর জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় ২৫০ হেক্টর জমিতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ১৬০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। ১১ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত মৌসুমে জেলায় ৪২২ হেক্টর জমিতে ২০ হাজার ২৫৬ মেট্রিক টন আখ উৎপাদন হয়েছিল। 

আখ চাষীরা জানান, আখের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে তেল, মসলা ও ডাল জাতীয় ফসলগুলো আলাদা জমি ছাড়াই বিনা সেচে শুধুমাত্র বৃষ্টির উপর নির্ভর করে চাষ করা যায়। ফলে এককভাবে আখ চাষের চেয়ে আখের সঙ্গে সাথী ফসল চাষ করলে অনেক বেশি লাভজনক হয়। সাথী ফসল হিসেবে ডাল জাতীয় ফসল চাষে জমির উর্বরতা শক্তি অনেকাংশে বেড়ে যায়। প্রাকৃতিক দূর্যোগে আখ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সাথী ফসল থেকে আংশিক ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যায়। পেঁয়াজ ও রসুনের পাতায় তীব্র ঝাঁঝ থাকায় সাথী ফসল হিসেবে চাষ করলে আখ ক্ষেতে পোকামাকড়ের উপদ্রব কম হয়। আখের সঙ্গে সাথী ফসল চাষ করলে জমিতে আগাছা কম হওয়ায় মূল ফসলের ফলন অনেকাংশে বেড়ে যায়। কৃষকরা মনে করেন- সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তারা অধিক হারে পতিত জমিতে আখ চাষ করে আবাদ আরও বাড়ানো যাবে। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আখের প্রতিটি ক্ষেতেই হলুদ ও লাল রঙের আখ। দেখতে আকর্ষনীয় ও খেতে বেশ সুস্বাদু। আখের ওষুধী গুণও রয়েছে। ৮-১২ ফুট উচ্চতার প্রতিটি আখ খুচরা ১০-৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ঢাকাসহ অন্য জেলায়ও এখানকার আখ সরবরাহ করা হচ্ছে।

ঘাটাইল উপজেলার রসূলপুর গ্রামের আখ চাষি জাহিদ মিয়া বলেন, আমি ২২ শতাংশ জমিতে আখ চাষ করেছি। আমার প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ভয়ে আমি প্রায় এক মাস আগে ৩৫ হাজার টাকায় আমার ক্ষেতের আখ বিক্রি করেছি। এখন বিক্রি করলে লাখ টাকার কাছাকাছি বিক্রি করতে পারতাম। সঙ্গে সাথী ফসলের সুবিধা তো আছেই। আমাদের গ্রামের সবারই আখ চাষ ভালো হয়েছে। ভাল দাম পেয়েছি আমরা। এতে আমরা খুবই খুশি। প্রতি বছর আমি অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি আখ চাষ করবো।