ঢাকা, বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

টাঙ্গাইলে ইউএনও’র বিরুদ্ধে যৌন হয়রানীর অভিযোগ

হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ৮ এপ্রিল ২০২২ ০৬:০৮:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুর হোসেনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানী, প্রতারণার অভিযোগ এনেছেন এক কলেজ ছাত্রী। বিয়ের প্রলোভনে নিবার্হী কর্মকর্তার লালসার স্বীকার হওয়া ঐ কলেজ ছাত্রী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রতিকার চেয়ে একটি লিখিত অভিযোগ ও তার বিরুদ্ধে আইনি নোটিশও প্রেরণ করেছেন। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রভাবশালী হওয়ায় বিচার না পাওয়া ও জীবন হানী শঙ্কায়  দিন পার করছেন ওই কলেজ ছাত্রী। 

বর্তমানে মনজুর হোসেন কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। কলেজ ছাত্রীর লিখিত অভিযোগে জানা যায়, ২০২১ সালে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুর হোসেন দায়িত্ব থাকাকালীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় হয় কলেজ ছাত্রীর। পরিচয়ের এক পর্যায়ে নির্বাহী কর্মকর্তা কলেজ ছাত্রীকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার সরকারী বাসভবনে নিয়ে যান। পরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কলেজ ছাত্রীর সাথে জোড়পূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করেন। কলেজ ছাত্রীর বাবা-মা অসুস্থ্য থাকার কারণে পারিবারিকভাবে অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয়। এই বিষয়টি ইউএনও মনজুর হোসেনকে অবহিত করেন কলেজ ছাত্রী। পরে ইউএনও বিয়ে করার আশ্বাস দিয়ে কলেজ ছাত্রীকে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে ইউএনও টাঙ্গাইল কুমুদিনী কলেজের সাথে পাওয়ার হাউজের পিছনে একটি বাসা ভাড়া নেন। বাসা ভাড়া নেওয়ার আগে তিনি নিজের সমস্ত তথ্য গোপন রেখে, মিথ্যা পরিচয়ে বাসা ভাড়া নেন। সেখানে তারা দুই মাস সংসার করেন। এক পর্যায়ে কলেজ ছাত্রী বিয়ের ও সামাজিক ভাবে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য ইউএনওকে চাপ প্রয়োগ করে। পরবর্তীতে ইউএনও ইন্ডিয়ার যাওয়ার পর বিয়ে করবো বলে কলেজ ছাত্রীকে আশ্বাস দেয়। তখন তারা মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দিয়ে তার পরিচিত এক ব্যক্তি জোবায়েত হোসেন এর সাথে যমুনা ফিউচার পার্কে নিয়ে যায় এবং সেখানে কলেজছাত্রী মেডিক্যাল ভিসা করে। তার কিছুদিন পর ২৪ শে সেপ্টেম্বর আনুমানিক রাত ১০ টায় সরকারি এসিলেন্ট গাড়িতে তার পরিচিত জোবায়েত হোসেনকে এবং গাড়ীর ড্রাইভার বুলবুল হোসেন ও দুই আনসারসহ বেনাপোলের উদ্দেশ্যে রওনা হয় এবং কিছুসময় বিরতীর যশোর সার্কিট হাউজে সময় কাটান। সেখান থেকে বেনাপোল বর্ডার ক্রস করে এবং ইন্ডিয়া কলকাতা এয়ারপোর্ট হয়ে হায়দারাবাদের এয়ারপোর্টে নামেন। হায়দারাবাদের হাসপাতালের কাছেই একটি বাসা নেন। সেখানে তারা দুজনেই চিকিৎসা নেন। কলেজ ছাত্রী ইউএনও’র পাসোর্নাল ব্যাগ থেকে পাসপোর্ট বের করে জানতে পারে ইউএনও বিবাহিত এবং তার দুটি সন্তান রয়েছে। ইউএনও’র কাছে কলেজ ছাত্রী এই বিষয় নিয়ে জানতে চায় কেন তার কাছে বিয়ের বিষয়টি গোপন করা হয়েছে।  সেখানে কলেজ ছাত্রী উত্তেজিত হলে ইউএনও তাকে থামতে বলে এবং বলে এটি বাংলাদেশ নয় এটি ইন্ডিয়া। পরবর্তীতে হাসপাতাল থেকে হোটেলে আসলে মনজুর হোসেন তার সঙ্গে থাকা জোবায়েত কলেজ ছাত্রীর মোবাইল জোর পূর্বক ছিনিয়ে নেয় এবং মনজুরের সাথে ঘনিষ্ঠ মুহুর্তের ভিডিও ও মেসেজ চ্যাটিং সকল আলামত ডিলিট করে দেয়। ইউএনও মনজুর হোসেন কলেজ ছাত্রীকে এই বিষয়ে কারও কাছে শেয়ার না করার অনুরোধ জানান এবং কলেজ ছাত্রীকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। ইন্ডিয়াতে বারদিন অবস্থান করার পর ১২ অক্টোবর বাংলাদেশে ফেরত আসে। ভারত থেকে ফেরার পর কলেজ ছাত্রী তার বাবার বাড়ি ফিরে যায়। পরবর্তীতে কলেজ ছাত্রীর ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে দেখা করেন এবং পুনরায় স্বামী স্ত্রী হিসেবে সংসার করার কথা বলে ইউএনও। কিন্তু দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও ইউএনও মনজুর হোসেন কলেজ ছাত্রী স্ত্রী মর্যাদা দেয়নি। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে কলেজ ছাত্রী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বরাবর মনজুর হোসেনের বিরুদ্ধে নারী যৌন হয়রানী ও প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কলেজ ছাত্রী বলেন, ইউএনও মনজুর হোসেনের সাথে আমার ফেসবুকে পরিচয় হয়। পরিচয়ের এক পর্যায়ে আমাকে বিয়ে করার প্রলোভন দেখায় এবং তার সরকারি বাস ভবনে আমাকে নিয়ে যায়। সেখানে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক সম্পর্ক করেন। এরপর বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেন। তিনি আরও বলেন, ইউএনও মনজুর হোসেন বিবাহিত হয়েও তিনি অবিবাহিত পরিচয় দিয়েছেন। আমি সরল মনে তার কথা শুনে বিশ্বাস করেছি। তিনি শুধু আমাকে ব্যবহারই করেছেন সামাজিক ভাবে স্ত্রীর মর্যাদা দেননি। বাংলাদেশে একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হয়েও আমার সাথে এরকম করতে পারেন এটা আমি কোনদিন বিশ্বাস করিনি। আমি আমার প্রাপ্য অধিকার চাই। 

অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে ইউএনও মনজুর হোসেন এর কাছে জানতে চাওয়া হলে, তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। 

এ ব্যাপারে বাসাইল উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম জানান, ইউএনও মনজুর হোসেন বাসাইলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন। তার সাথে আমার ব্যক্তিগতভাবে ভাল সম্পর্ক ছিল। তিনি বাসাইল থেকে যাওয়ার পর আমাকে একদিন ফোন করেন এবং বলেন একটি মেয়ে আমার বিরুদ্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি আপনি একটু দেখেন। আমি ঐ মেয়েটিকে ইউনিয়নের এক চেয়ারম্যানের মাধ্যমে আমার কার্যালয়ে নিয়ে আসি এবং মেয়েটিকে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনরার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারি। পরে মেয়েটি আমাকে বলে আমি আইনের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি এই বলে মেয়েটি আমার অফিস কক্ষ থেকে চলে যায়। 

এ ব্যাপারে কলেজ ছাত্রীর মা বলেন, ইউএনও মনজুর হোসেন আমার মেয়ের সাথে প্রতারণা করেছে। আমরা সামাজিকভাবে অসহায় হয়ে পড়েছি। আমার মেয়ে কলেজে যেতে পারছেনা। আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি এর সঠিক বিচার চাই। 

 

অভিযোগের বিষয় নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যা গতকাল বৃহস্পতিবার শুনানি হওয়ার কথা ছিলো বলে জানিয়েছেন টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক ডক্টর আতাউল গণি।