সিলেটে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে কমেছে কুশিয়ারা নদীর পানি। সিলেটে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটের উজানে ভারতের মেঘালয় ও আসামেও। ফলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। তবে পানি কমেছে কানাইঘাট পয়েন্টে। কুশিয়ারা নদীর পানিও কমেছে।
পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কবলে সিলেট। টানা ১৫ দিন ধরে পানিতে তলিয়ে আছে অনেক এলাকা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ।
গত ১৫ জুন থেকে সিলেটে বন্যা শুরু হয়। ওইদিনই তলিয়ে যায় গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুরের শাকিল আহমদের বাড়ি। তিনি বলেন, ‘ঘরে ১৫ দিন ধরে পানি। পানি কিছুতেই নামছে না। আবার পানি বাড়ছে।
‘ঘরে পানি, রাস্তাঘাটও তলিয়ে আছে। এই অবস্থায় আর কতদিন চলবে বুঝতেছি না। এমন দুর্ভোগ জীবনেও পোহাতে হয়নি।’
মে মাসের বন্যায়ও ঘরে পানি উঠেছিল জানিয়ে শাকিল বলেন, ‘তখনও প্রায় ১০ দিন ঘরে পানি ছিল। এবার আরও কতদিন থাকতে হয়, কে জানে।’
১৫ দিন ধরে ঘরে পানি পলাশ হোসেনেরও। দক্ষিণ সুরমা উপজেলার পিরোজপুর এলাকার বাসিন্দা পলাশ বলেন, ‘১৫ দিন ধরে আরেকজনের বাড়িতে আশ্রিত হিসেবে আছি। তাও পানির কারণে গৃহবন্দি অবস্থায়। এভাবে কত দিন থাকা যায়।’
পানির কারণে দোকান খুলতে পারছেন না জানিয়ে রেলস্টেশন এলাকার ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘১৫/১৬ দিন ধরে দোকান বন্ধ। এভাবে চলতে থাকলে ভিক্ষায় নামতে হবে।’
শুক্রবার পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপসহকারী প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা। তবে তিনি এও বলেন, ‘শনিবার থেকে বৃষ্টি কমবে। এতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।’
জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, চলমান বন্যায় সিলেট সিটি করপোরেশনসহ ১৩ উপজেলা ও ৫ পৌরসভা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ৩০ লাখ লোক পানিবন্দি ছিলেন। সবশেষ পাওয়া তথ্যের হিসাবে, জেলার ৬১৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৫২ হাজার ৭৮৪ জন আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে, টানা বৃষ্টি ও ঢলে সুনামগঞ্জে সুরমার পানি আরও বেড়েছে। তবে এখনও তা বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সুরমার পানি ১৬ সেন্টিমিটার বেড়েছে। এতে জেলায় বন্যা পরিস্থিতি ফের অবনতি ও দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পানি বাড়ায় জেলার নিচু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে। পৌর শহরের তেঘরিয়া, আরপিন নগর, বড়পাড়া, পূর্ব নতুনপাড়া, হাজীপাড়া, নবীনগর, ধূপাখালি এবং ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকছে।
তেঘরিয়া এলাকার বাসিন্দা ফরহাদ আহমেদ বলেন, ‘ঘরবাড়ি থেকে মাত্র চার দিন হইছে পানি নামছিল। কিন্তু আজকে সকাল থকি আবারও ঘরে বারান্দায় পানি প্রবেশ করা শুরু করেছে। আজকে বৃষ্টি এ রকম হতে থাকলে ঘরেও পানি ডুকতে বেশি সময় লাগবে না, বিপদের মধ্যে মহাবিপদ।’
উত্তর আরপিন নগর এলাকার বাসিন্দা লুকনা বিবি বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়িত আইলাম দুই দিন অইল। এখন দেখি আবার পানি আইচ্ছে। তিনটা মেয়ে, স্বামী ও শাশুড়ি নিয়া কষ্টের মধ্যে আছি। কাজকাম নাই। মানুষের ঘরে কাজ করিয়া দিন আনি দিন খাই। কিন্তু পানি আইলে আমরা বন্দি।’
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘সুনামগঞ্জ ও মেঘালয়ে বৃষ্টি হওয়ায় সুরমাসহ অন্যান্য নদীর পানি বাড়ছে। তবে এখনও সুরমার পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এক দিন আগে তা ১৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।’