ঢাকা, মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁওয়ে নির্বাচনী সহিংসতায় মামলা, পুলিশ আতঙ্কে পুরুষশূন্য ছয় গ্রাম

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : বুধবার ২ মার্চ ২০২২ ১২:০১:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ১৪নং রাজাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মেম্বার প্রার্থীর ভোটের ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ভোট পরবর্তী সহিংসতার ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৪৫০ জনের নামে গত ২৭ ডিসেম্বর রুহিয়া থানায় প্রিজাইডিং অফিসার তৌকির আহম্মেদ বাদি হয়ে মামলা করে। গতকাল পর্যন্ত ওই মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, ফলে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে আসাননগরসহ ছয় গ্রাম।
 
এদিকে সহিংসতার ঘটনায় মামলা দায়েরের পর থেকে এলাকায় গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। মঙ্গলবার (১ মার্চ) ওই গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, রাস্তাঘাটে তেমন মানুষের জনসমাগম নেই। ঘর বাড়িতে শুধু রয়েছে নারী ও শিশুরা। এলাকার পুরুষেরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে পুলিশের ভয়ে। বাড়িতে নারী আর শিশুরা অজানা আতঙ্কে সময় পার করছে।
 
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসানগর কেন্দ্রটিতে ভোটগ্রহণ ও গণনাশেষে ফল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত ফলে সদস্য পদে মাসুদ রানা তার প্রতিন্ধদ্বী প্রার্থী শাহ আলমের চেয়ে ১০২ ভোট বেশি পান। কিন্তু ওই ফল প্রত্যাখ্যান করেন শাহ আলমের কর্মী-সমর্থকেরা। পরে তারা একত্রিত হয়ে লাঠিসোটা নিয়ে ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন ও কেন্দ্রে হামলা চালান। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে প্রথমে লাঠিচার্জ করে। তাতেও হামলাকারীরা নিবৃত্ত না হলে আত্মরক্ষা করতে পুলিশ হামলাকারীদের লক্ষ্য করে ২০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। পুলিশের ছোড়া গুলিতে হামিদুর রহমান (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হন। আহত হন আবু কালাম (৩২) নামের আরেক ব্যক্তি।

আসানগর গ্রামের বাসিন্দা আয়েশা জানান, ভোটের দিন মারামারি ঘটনায় আমার বাবাসহ গ্রামের অনেক মানুষের নামে মামলা করেছে পুলিশ। ফলে গ্রামে আর কোনো পুরুষ মানুষ নেই। শুধু মসজিদের ইমাম, মোযাজ্জিন ছাড়া গ্রামের সব পুরুষ আত্মগোপনে গেছেন। বর্তমানে আমরা সবাই আতঙ্কে মধ্যে আছি।
 
একই গ্রামের মরিয়ম বেগম জানান, মারামারির সময় আমার স্বামী বাড়িতেই ছিলো না। তার পরেও আমার স্বামীর নামে মামলা হয়েছে। আজ দুই মাস ধরে আমার স্বামী বাড়িতে নাই। ঘরে খাবার নাই, ১০ মাসের ছেলেটাকে ঠিক মতো খাবার দিতে পারি না। অন্যের বাড়িতে থেকে খাবার চেয়ে বাচ্চাকে খাওয়াচ্ছি।

স্কুল শিক্ষার্থী তৃষা বলেন, আমার বাবা একজন দিনমুজুর সারা দিন মাঠে কাজ করে রাতে বাড়িতে আসে। আমার নির্দোষ বাবাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। আমরা তিন বোন পুলিশের পা ধরে বলেছি যে আমার বাবা নির্দোষ। কিন্তু পুলিশ আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ধাক্কায় ফেলে দেন। একদিন কাজ না করলে আমাদের চুলায় আগুল জ্বলে না। আজ ১১দিন খুব কষ্টে আছি আমরা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তৃষা।
 
রুহিয়া থানার ওসি তদন্ত শহিদুর রহমান বলেন, রাজাগাঁও ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্র দক্ষিণ আসাননগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারি কাজে বাধা, প্রিজাইডিং, সহকারি প্রিজাইডিং এবং পুলিশের উপর লাঠিসোটা দিয়ে আঘাত করার অভিযোগে প্রিজাইডিং অফিসার তৌকির আহম্মেদ বাদী হয়ে ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৪৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ইতিমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার  করা হয়েছে। দ্রæত বাকিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।