ঢাকা, মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

নোয়াখালী হাসপাতালে ডা. ফজলে এলাহীসহ ৯ জনের ‘সাগরচুরি’

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ৩ মার্চ ২০২২ ০১:০৫:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

নোয়াখালীর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের (আমাউমেক) নেফ্রোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফজলে এলাহী খানের সরবরাহ করা এক টেবিলের দাম চার লাখ ৯০ হাজার টাকা ধরা হলেও বাস্তবে এর আনুমানিক বাজারমূল্য ১০ হাজার টাকা হবে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নোয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের এক তদন্তে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করেই আড়াই কোটি টাকা আত্মসাৎসহ এ খাতে ডা. এলাহীদের ‘সাগরচুরির’ প্রমাণ পেয়েছে দুদক।

২০২০ সালের শেষ দিকে নোয়াখালী দুদকের সহকারী পরিচালক সুবেল আহমেদ ডা. ফজলে এলাহী খানসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দাখিল করলেও অজ্ঞাত কারণে গত দেড় বছরেও মামলা রুজু হয়নি।

অভিযুক্ত নোয়াখালী স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ও আমাউমেকের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফজলে এলাহী খানকে (কোড নং-১১১৭৭২) ওএসডি করে চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রোগ্রাম ম্যানেজার-১ (পদের আইডি-১৬৭৪৬৩) হিসেবে বদলি করা হয়েছে।

বাকি অভিযুক্তরা হলেন- হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. এএইচএম মোসলেহ উদ্দিন (৬৫), মালামাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাক্টওয়েল টেকনোলজি (বিডি) লিমিটেডের চেয়ারম্যান নাসরিন চৌধুরী (৪৫), তার স্বামী ব্যবস্থাপনা পরিচালক জায়েদুল করিম চৌধুরী ওরফে পলাশ চৌধুরী (৪৯), মেসার্স শাহজাহান চৌধুরীর মালিক মো. শাহজাহান চৌধুরী (৬৬), সাবেক আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী (৫৩), সিনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) ডা. এ কে এম ফজলুর রহমান ওরফে ফজলুর রহমান মানিক (৪৯), আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক (মেডিসিন) ডা. মহিউদ্দিন হুমায়ুন কবির চৌধুরী (৪৬), একই কলেজের আরেক সহকারী অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মো. কামরুল হোসেন (৪৩)।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরের যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন। এতে ১০টি আইসিইউ বেডসহ মোট আটটি আইটেম সরবরাহ না করেই সরকারের দুই কোটি ৪০ লাখ ৭৫ হাজার ৮০৪ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

এর মধ্যে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তিনটি পেশেন্ট মনিটর বাবদ ১৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে একটি হসপিটাল অটোমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বাবদ ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা, একটি সাউন্ড সিস্টেম বাবদ ২০ লাখ ১৩ হাজার ৭২০ টাকা, একটি ফ্রন্ট প্যানেল লাইটিং বাবদ ১০ লাখ ৮৮ হাজার টাকা, ১০টি ইনসেন্টিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) বেড বাবদ ৩৫ লাখ ২০ হাজার টাকা, অপারেশন থিয়েটারের (ওটি রুম) ১২টি অবজারভেশন টেবিল বাবদ ৪৩ লাখ ৮৯ হাজার ৮৪ টাকা, একটি ডেন্টাল চেয়ার বাবদ ২০ লাখ ৭০ হাজার টাকা, দুটি ফোরডি-পোর্টেবল আলট্রাসাউন্ড মেশিন বাবদ ৭১ লাখ টাকার কোনো পণ্যই সরবরাহ না করে ওই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, যেসব পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে তার সবই নিম্নমানের। এরমধ্যে সরবরাহ করা ছোট আকারের একটি কনফারেন্স টেবিল যার আনুমানিক বাজার মূল্য হবে ১০ হাজার টাকা, অথচ তার ক্রয়মূল্য দেখানো হয়েছে চার লাখ ৯০ হাজার টাকা। আর সাড়ে ১৫ লাখ টাকার ‘ব্লাড সেল কাউন্টার’ সরবরাহ করা হলেও তা কখনো ব্যবহার করা হয়নি।