করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের জারি করা নতুন বিধিনিষেধে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনা জারির পরিপ্রেক্ষিতে বাসভাড়া আবারও বাড়াতে চান পরিবহন মালিকেরা।
সোমবার (১০ জানুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আগামী ১৩ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করতে হবে। এই নির্দেশের প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ বাসভাড়া বাড়ানোর ইঙ্গিত দেন।
এর আগে ২০২০ সালে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস চালানোর নির্দেশ দিয়েছিল সরকার। সে সময় অর্ধেক যাত্রী নিয়েই গণপরিবহন চলাচল করেছিল। তখন পরিবহন মালিকদের দাবির মুখে বাসভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল।
সে বিষয়টিকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ সময় নিউজকে বলেন, গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস চলাচলের নির্দেশনা আমরা দেখেছি। কিন্তু বাসভাড়া নিয়ে সরকারের কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি। তার অর্থ হচ্ছে আগের মতোই ভাড়া কার্যকর থাকবে।
তিনি বলেন, যদিও আমরা এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। ভাড়ার বিষয়ে সরকারের নতুন কোনো নির্দেশ না পেলে ভাড়া আগের মতোই বাড়তে পারে। আর নতুন নির্দেশনা পেলে ওই নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানাব।
এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, বর্তমানে যে বাসভাড়া আছে, সেই ভাড়ায় অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস চলাচল করলে তেলের পয়সাও উঠবে না।
পরিবহন ভাড়া বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র ঘোষও। তিনি বলেন, আগেরবার বিধিনিষেধ চলাকালে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেই ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু এবার কি হবে সেটি এখনও বলতে পারছি না।
তিনি বলেন, আমরা সরকারের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। দেখা যাক কি হয়। তবে মালিকেরা ক্ষতি স্বীকার করে, বাড়ি থেকে টাকা এনে গাড়ি চালাবে না।
প্রসঙ্গত, প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে (অর্ধেক যাত্রী পরিবহন) কার্যকারিতার তারিখসহ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে যে নির্দেশনা আসবে, আমরা সেটিই পালন করব।
তবে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী অযৌক্তিকভাবে বাসভাড়া বাড়ানোর বিরোধিতা করেছেন। তারমতে, বাসভাড়া বাড়বে কিন্তু অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের সরকারি নির্দেশ কার্যকর হবে না।
তিনি বলেন, আগেরবারের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের জন্য ৬০ শতাংশ বাসভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু সরকার সেটি কার্যকর করতে পারেনি। বরং তারা গাড়ি পূর্ণ করেই যাত্রী পরিবহন করেছেন কিন্তু ঠিকই ৬০ শতাংশ বর্ধিত হারে ভাড়া নিয়েছেন।
বর্ধিত বাসভাড়া অন্যান্য পরিবহনেও নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে মন্তব্য করে মোজ্জামেল হক সময় নিউজকে বলেন, বাড়ানো হয়েছিল বাসভাড়া। কিন্তু দেখা গেল সিএনজি অটোরিকশা, লেগুনাসহ অন্যান্য পরিবহনের ভাড়াও ৬০ শতাংশ বেড়ে গেল। সেখানে তো যাত্রী পরিবহনের কোনো হেরফের ছিল না।
তিনি দাবি করেন, এমনকি লেগুনার ক্ষেত্রে সেই যে ভাড়া বেড়েছে এখনও অনেক রুটে লেগুনাতে সেই বর্ধিত ভাড়াই আদায় করা হচ্ছে। এতে শুধু সাধারণ মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই আমার প্রস্তাব হচ্ছে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সব সিটে যাত্রী পরিবহন করা হোক। কিন্তু ভাড়া যেন না বাড়ে।
তিনি আরও বলেন, এমনিতেই দেশে বিশেষ করে শহর এলাকায় গণপরিবহনের চরম সংকট রয়েছে। স্বাভাবিক সময়েই মানুষ গাড়ি পান না। সেখানে অফিস-আদালত সবকিছু খোলা রেখে অর্ধেক সিটে যাত্রী পরিবহন মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টিরই নামান্তর।