ঢাকা, শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ই আশ্বিন ১৪৩১

বাসাইলে শত বছরের ডুবের মেলায় মানুষের ঢল

হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল | প্রকাশের সময় : রবিবার ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ০৭:৪৪:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

 

টাঙ্গাইলের বাসাইলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঐতিহ্যবাহী ডুবের মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার দিনব্যাপী উপজেলার বাসাইল সদর এবং কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের বংশাই নদীর পূর্ব-উত্তর তীরে রাশড়া-সৈয়দামপুর গ্রামে কয়েক হাজার লোকের সমাগমে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। 

দেবতা (মাদব ঠাকুর) এর মূর্তিতে প্রণাম স্মরণ করে ভোরে গঙ্গা¯œœানের মাধ্যমে মেলার বা পূজার কার্যক্রম শুরু করা হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের পাপ মোচনের লক্ষে ভোরে মানত ও গঙ্গা¯œান পর্ব সমাপন করে।

তবে চলাচলের সুবিধা না থাকায় মেলায় আগতরা মেলাস্থলে যাতায়াত এবং ঠিক সময়ে গঙ্গা¯œানের জন্য পৌঁছাতে পারছেন না বলে দেখা গেছে।

স্থানীয়রা জানায়, বৃটিশ শাসনামলে ভক্ত সাধু নামে খ্যাত এই সন্যাসী (মাদব ঠাকুর) এর মূর্তি প্রতিস্থাপন করে মনোবাসনা পূর্ণ করতে গঙ্গা¯œান, পূজাঅর্চনা করা শুরু হয়। ওই সময়ে অনেকে এসব করে সফল হয়েছে বলে লোকমুখে প্রচলিত। তখন থেকে প্রতিবছর মাঘীপূর্ণিমার রাত থেকে গঙ্গা¯œান, পূজাঅর্চনা চলতে থাকে এবং পরে স্থানীয় সনাতনীরা একে মেলা এবং আনন্দ উৎসব হিসেবে পালন করে আসছে। ওই সময় থেকে এটা ডুবের মেলা নামে পরিচিত।

মেলায় বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় খাবার, বাঁশবেতের তৈজসপত্র, মাটির তৈরি খেলনা, হাঁড়িপাতিল, বড় মাছ এবং চিড়া-দই, খইসহ বিভিন্ন দোকানীরা তাদের পসরা সাজিয়ে বসে। 

মেলায় আসা দোকানী সাধুকর বলেন, প্রত্যন্ত গ্রামে এত লোকের সমাগম হয় এটা অবিশ্বাস্য। বেচাকেনাও ভালো। মিষ্টি দোকানী দীপক বলেন, প্রতিবছর প্রায় ১০ মন মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার বিক্রি করি। কোন বাকি নেই। নগদ বিক্রি হয় বলে বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের এই মেলায় দোকান দেবার বেশি আগ্রহ দেখা যায়।

মেলায় আসা সজিব সূত্রধর বলেন, ছোট সময় থেকে দেখে আসছি এই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কয়েক বছর পর মেলায় আসলাম। সকালে ¯œান করেছি। এখন মেলায় ঘুরছি। অনেক মানুষের সমাগম হয়েছে। সকালে নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরীসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ ¯œান করেছে।

 

বংশী রানী পাল বলেন, এই মাঘী পূর্ণিমার মধ্যে এই ডুবের মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় এসে গঙ্গা¯œান ও পূজা দিয়েছি। মাঘী পূর্ণিমায় উপোস রয়েছি। কেউ যদি উপোস থাকে, গঙ্গা¯œান ও পূজা দিয়ে তারপর খেতে পারে।

ডুবের মেলার আয়োজক জীবন মন্ডল বলেন, প্রায় দেড়’শ বছর ধরে মাঘীপূর্ণিমার সময় আমার পূর্বপূরুষেরা এই মেলার আয়োজন করে আসছে। আমি এই মেলায় ষাট বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছি। এই মেলা উপলক্ষে পাশ্ববর্তী সখিপুর, মিজার্পুর, ভালুকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মের কয়েক হাজার লোকজনের সমাগম হয়। ভোর ¯œানের মাধ্যমে শুরু করে দিনব্যাপী এই মেলা চলে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় জমির আইল ধরে পায়ে হেঁটে এই মেলায় আসতে হয় দর্শনার্থীদের। যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় গতবছর অনেক পূর্ণার্থী গঙ্গা¯œানে আসতে পারেনি।

কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামীম আল মামুন জানান, শুনতে পেরেছি ডুবের মেলা যুগ যুগ ধরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ রয়েছে। জমির আইল ধরে দর্শনার্থীরা যাতায়াত করছে। চেষ্টা করছি এবছর নিজ উদ্যোগে বা প্রকল্পের মাধ্যমে এই রাস্তা করে দিবো।