ঢাকা, শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ই আশ্বিন ১৪৩১
গোপালপুর ইউপি নির্বাচন

বিদ্রোহীদের প্রচারে কোনঠাসা আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা

হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল : | প্রকাশের সময় : রবিবার ২৩ জানুয়ারী ২০২২ ০৫:৪৪:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

৬ষ্ঠ ধাপের আগামী ৩১ জানুয়ারি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীরা ব্যাপক অস্বস্তিতে পড়েছেন। কেন্দ্রীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে তারা প্রার্থী হয়েছেন এবং জোরেসরে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও দলীয় প্রার্থীরা কালো টাকা ছড়িয়ে পক্ষে ভোট টানার চেষ্টা করছেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরীন কোন্দল থাকায় বিগত দিনের সুবিধা বঞ্চিতরা বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে অভ্যন্তরীন কোন্দল প্রকাশ্যে রুপ নিয়েছে। দলীয় প্রার্থীদের হারানোর জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে নেতাকর্মী প্রকাশ্যে কাজ করছে। তাছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে এক বা একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। তারা কেউ কাউকে ছাড়া দিতে নারাজ। এদিকে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শংকায় রয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা। তারা বলছেন সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের ভরাডুবির শংকা রয়েছে। সেই ক্ষেত্রে অনেক বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ী হবে। এমনটাই বলেছেন বিদ্রোহীরা। এদিকে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও সমানতালে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আগামী ৩১ জানুয়ারি ৬ষ্ঠ ধাপে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইউনিয়নগুলো হচ্ছে মির্জাপুর, হাদিরা, নগদাশিমলা, আলম নগর ও ধোপাকান্দি। এ পাঁচটি ইউনিয়নের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে ৭জন বিদ্রোহী প্রার্থী আওয়ামী লীগের গলার কাঁটা হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। এছাড়া বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় ওই দলের প্রার্থীরা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

জানা যায়, হাদিরা ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সধারণ সম্পাদক  লায়ন নজরুল ইসলাম কলেজের সহকারি অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম নিক্সন। তার জনপ্রিতার ইর্ষন্বিত হয়ে দুর্বৃত্তরা গত ঈদুল আযহার আগের রাতে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড তার  স্ত্রী বিলকিছ জাহানকে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছেন। তার মনোনয়নকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক সেলিম আজাদ তালুকদার। সেলিম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুরুজ তালুকদারের আপন চাচাতো ভাই। এছাড়াও সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের ছেলে আলমগীর হোসেন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন এবং বিএনপির আবুবকর ছিদ্দিক । নগদা শিমলা ইউনিয়নে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বর্তমান চেয়ারম্যান হোসেন আলী মনোনয়ন পেয়েছেন। সেখানে বিদ্রোহী হয়ে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গোলাম মোস্তফা আঙ্গুর। এছাড়াও জাতীয় পার্টির প্রার্থী রয়েছেন খন্দকার শহিদুল আলম। মির্জাপুর ইউনিয়নে মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম লাভলু । এখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবু ফারুক মিয়া এবং বিএনপির  মোঃ মোখলেছ।  আলমনগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেন। তার বিরুদ্ধে এবার শক্তিশালী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মফিজুর রহমান লুৎফর, ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি  মোহাম্মদ এহসানুল হক চৌধুরী ওপেল।  তিনি নগদা শিমলা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান হোসেন আলীর জামাতা। ধোপাকান্দি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম। তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল হাই। গত নির্বাচনেও তিনি আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছিলেন । এছাড়াও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিদ্রোহগী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। 

গোপালপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুছ ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বিদ্রোহী প্রার্থীদের উৎসাহ দিচ্ছেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অসুস্থ্য। দলের সাধারণ সম্পাদককে বলা হয়েছিল প্রত্যাহারের আগেরদিন কার্যকরী কমিটির সভা ডাকতে। যাতে বিদ্রোহীদের বুঝিয়ে প্রতিদ্বন্দিতা থেকে দূরে রাখা যায়। কিন্ত সভা করা হয়েছে প্রত্যাহারের কয়েকদিন পর।

এ ব্যপারে গোপালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম তালুকদার সুরুজ বলেন,  আগামী কয়েকদিনের মধ্যে কার্যকরী কমিটির সভা হবে । সভায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

গোপালপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মতিউর রহমান জানান, উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এখনও পর্যন্ত আচরণবিধি লঙ্ঘনের কোন লিখিত অভিযোগ করেননি। আগামী ৩১ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ করতে নানা প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে নির্বাচন কমিশন সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।