রাজধানীর চানখাঁরপুলে অবস্থিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারিকে দাবি করা হয় বিশ্বের বৃহত্তম বার্ন ইনস্টিটিউট ও প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতাল হিসেবে। যদিও হাসপাতালটি এখন ক্রমবর্ধমান রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। সার্বক্ষণিক পূর্ণ থাকছে ৫০০ শয্যার সবই। অনেক ক্ষেত্রে রোগীকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে না পেরে পাশের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বা অন্য কোনো চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানের বার্ন ইউনিটে রোগী পাঠিয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটছে।
বাংলাদেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আগের তুলনায় বেড়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে দগ্ধ রোগীর সংখ্যাও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের কিছু সরকারি হাসপাতালে বার্ন ইউনিট থাকলেও সেগুলোর চিকিৎসা সুবিধা অপ্রতুল। এ কারণে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় সবচেয়ে বড় ভরসা এখন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি। দেশে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সুবিধাসংবলিত এটিই একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গুরুতর আশঙ্কাজনক অবস্থায় এসে রোগীরা ভিড় করছে এখানে। এসব রোগীর চাপ এরই মধ্যে হাসপাতালটির সক্ষমতাকে অতিক্রম করে গেছে। এ অবস্থায় হাসপাতালটির সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানেও অগ্নিদগ্ধ রোগীর সুচিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
হেলথ বুলেটিনের ২০২৩-এর তথ্য অনুযায়ী, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারির বহির্বিভাগে গত বছর চিকিৎসা নিয়েছে ৭২ হাজার ১৫২ জন অগ্নিদগ্ধ রোগী। তাদের মধ্যে পুরুষ রোগী ৩৬ হাজার ৭৩ ও নারী ৩৬ হাজার ৮৯ জন। এর মধ্যে জরুরি বিভাগে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়া রোগীর সংখ্যা ১২ হাজার ৯১২। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে ৬ হাজার ৬৫ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৯৪ আর নারী রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৯৭১। বছরের পুরো সময়ে হাসপাতালটির সব শয্যাই পূর্ণ ছিল।
চিকিৎসকরা বলছেন, হাসপাতালটিতে এখন ঢাকার বাইরে থেকে আসা রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। স্থানীয় সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোয় অগ্নিদগ্ধ রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা না থাকায় তাদের অনেককেই প্রাণ বাঁচাতে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারিতে নিয়ে আসা হয়।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারির সহযোগী অধ্যাপক (প্লাস্টিক সার্জারি) ডা. তানভীর আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে শীতকালে আগুনে পোড়া রোগী আসে সবচেয়ে বেশি। আমরা সবাইকে জায়গা দিতে পারি না। সেক্ষেত্রে দেখা যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বা আশপাশের অন্যান্য হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে তাদের পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হই। তবে আমার মনে হয় অন্যান্য হাসপাতালেও আগুনে পোড়া রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সক্ষমতা বাড়ানো গেলে এ রোগীর চাপ অনেকটা কমে আসবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রথম পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে হাসপাতালটি চালু হয় ২০১৬ সালের এপ্রিলে। ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটিকে বলা হয় বিশ্বের বৃহত্তম বার্ন ইনস্টিটিউট। ৫০০ শয্যার হাসপাতালটিতে ২২ শয্যাবিশিষ্ট নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), রোগীর উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য ২২ শয্যাবিশিষ্ট হাই ডেফিশিয়েন্সি ইউনিট (এইচডিইউ), ১২টি অপারেশন থিয়েটার এবং একটি অত্যাধুনিক পোস্ট-অপারেটিভ ওয়ার্ড রয়েছে। শুধু দগ্ধ রোগী নয়, হাসপাতালটিতে জন্মগত ঠোঁটকাটা, তালুকাটাসহ বিভিন্ন রোগীদের প্লাস্টিক ও রিকনস্ট্রাক্টিভ সার্জারিরও বন্দোবস্ত আছে।
ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত না থাকায় দগ্ধ রোগীদের এ হাসপাতাল পর্যন্ত আনতে অনেক সময় নষ্ট হয়। এতে অনেক ক্ষেত্রে রোগীকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলা ও গুরুতর দগ্ধ রোগীদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোর বার্ন ইউনিট সচল করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, এতে অগ্নিদগ্ধ রোগীরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে যথাযথ চিকিৎসা পাবে। বার্ন ইনস্টিটিউটের ওপরও চাপ কমে আসবে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারির সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাসিব রহমান বলেন, ‘ঢাকার বাইরে থেকে অনেক রোগী আসে। সেক্ষেত্রে আমাদের ওপর চাপ বেশি পড়ে। ঢাকার বাইরের অন্যান্য জেলার হাসপাতালে বার্ন ইউনিট সচল করা জরুরি। তাহলে অন্যান্য জেলার রোগী তাৎক্ষণিক চিকিৎসা পাবেন। আমাদের ইনস্টিটিউটেও চাপ কিছুটা কমে আসবে। আর এখানে আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা ছাড়াও অন্যান্য রোগীর চিকিৎসা করা হয়, যার কারণে সবসময়ই রোগীর চাপ থাকে।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো, আবু জাফর বলেন, ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতাল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতাল। বর্তমানে মোট ১৩টি হাসপাতালে বার্ন ইউনিট আছে। এখন আরো ১০০ বেডের পাঁচটি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। বণিক বার্তা
বায়ান্ন/এসএ