ঢাকা, শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ই আশ্বিন ১৪৩১

বীমার মেয়াদ পূর্তি হলেও টাকা দিচ্ছে না প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্সুরেন্স

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ৩ মার্চ ২০২৩ ০২:০৩:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর


বীমায় নাকি অনেক সুযোগ-সুবিধা। বীমা সম্পর্কে আমাকে কতবার যে বুঝিয়েছিল তার হিসাব আমার মনে নেই। অসুস্থ হলে নাকি টাকা দিবে। যে কোন বিপদে আপদে পাশে থাকবে। মরে গেলে এর কয়েকগুন টাকা দিবে। তারপর তাদের কথা অনুযায়ী আর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে পলিসি করেছি। অথচ এখন ঘুরতে ঘুরতে আমি হয়রান। লাভের টাকা তো দূরের কথা আসল টাকাই পাই না। মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই বছর পার হয়েছে। প্রতিমাসে তিন চারবার করে আসি অফিসে তাও কোন খবর নাই। আজ কাল করতে করতে দিন শেষ হয় যায়। এভাবে আর কতদিন ঘুরতে হবে, আমি কি আমার টাকাটা পাব না?

বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) দুপুরে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ২৮ মাইল থেকে আসা ভুক্তভোগী রহিতুন নেছা (৫২)। বীমা অফিস থেকে বের হওয়ার সময় এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে ১২ বছর মেয়াদি বিমা করি। যার পলিসি নাম্বার ০৬০৯০৭২-৭। সেটার মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই বছর পার হয়ে যাচ্ছে অথচ এখনও টাকা পাচ্ছি না। আজ হবে, কাল হবে বলতে বলতে বছর চলে যায়, তাও সময় শেষ হয় না। এ ব্যাপারে খোঁজ নিতে তাদের অফিসে গেলে উল্টো তারা উগ্র আচরণ করে। এক বছর আগে বললো নতুন একাউন্ট করলেই টাকাটা পাবেন। আমি সুদের উপর ২৫০০ টাকা নিয়ে এখানে জমা দিছি।   বলেছি টাকাটা পেলেই সেটা জমা দিয়ে দেব। এখানে আসি ভাড়া দিয়ে বাড়ির সব কাজ ফেলে। অথচ তারা কিছু মনে করেন না। আরেকদিকে সুদের উপর টাকাটা পরিশোধ করতে হচ্ছে। আজকেও আসলাম বললো আগামী মাসে আসতে। ম্যানেজার শুধু মোবাইলে কথা বলে। উনাকে সরাসরি দেখা যায় না।

রহিতুন নেছার মতোই অভিযোগ তুললেন তার সাথে আসা তাহেরা বেগম। তিনি প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে বিমা করেছেন। তিনি বলেন, মেয়াদ শেষে যে টাকা পাব সেটার কোন খবর নেই। তাদের অফিসে এলে বারবার বলে ঢাকা থেকে না হলে আমরা কী করবো। আমরা যখন বিমা শুরু করি তখনকার সময় ১০০ টাকা এখনকার ১০০০০ টাকার মত।  তারা আমার কোনো কথাই শোনেন না। কিছুদিন আগে বলল ২ তারিখে আসেন, আজকে বললো ৫ তারিখে আসেন। এভাবেই তারিখ পরিবর্তন হতে থাকে। অনেক জনকে বলেছি আমার টাকা উঠানোর জন্য, কিন্তু এখনও পাচ্ছি না।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানির ঠাকুরগাঁও অফিসে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, এক কম্পিউটারে টেবিলে একজন কাজ করছেন। তার পাশে রয়েছেন একজন পিয়ন। দুজনে মিলে পরিচালনা করছেন জেলা কার্যালয় অফিস। ম্যানেজারের সাথে দেখা করার নেই কোন সুযোগ। সপ্তাহে দুদিন করেন অফিস। সে দুদিন কি কি বার তা ঠিকমত বলতে পারেননি অফিসের পিয়ন।

অফিস থেকে বের হওয়ার সময় দেখা মিলে আমিনুল ইসলাম নামে এক যুবকের। বাবার পলিসির মেয়াদ তিন বছর আগে শেষ হয়েছে তার। অফিসে কয়েকবার এসে হয়রানীরও অভিযোগ করেছেন আমিনুল। তিনি বলেন, আমার বাবা এখানে বিমাটি করেছিলেন। বিমার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ৩০ বারের বেশী আসা যাওয়া করছি। আমার মত অনেকে আমাদের গ্রামে আছেন যারা আমার মতোই ভুক্তভোগী।

মুঠোফোনে কথা হয় প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ম্যানেজার আলিমুল ইসলামের সঙ্গে। গ্রাহকদের ভোগান্তি ও এখনো ৫০০-৬০০ গ্রাহককে মেয়াদ পূর্তির পরও টাকা না দিতে পারার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, সবাই মনে করেন আমরা এখান থেকে তাদের টাকা ফেরত দিচ্ছি না। এটা আসলে সত্য না মূলত ঢাকা থেকে দেরী করার কারনে আমাদের দেরী করতে হয়। বীমা গ্রাহকদের ঘুরাতে হয়। গতবছরে অনেকজনকে পলিসির টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে বাকীগুলে দিয়ে দেওয়া হবে।  

কিছু কোম্পানির কারণে মানুষ বিমা করতে আগ্রহ হারাচ্ছে জানিয়ে সন্ধানী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ঠাকুরগাঁওয়ের ম্যানেজার হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, বিমার মেয়াদ শেষ হলে টাকা আটকে রাখার কোনো সুযোগ নেই। তবে কিছু কোম্পানির জন্য মানুষ আগ্রহ হারাচ্ছে। আমরা আশা রাখছি তারা সমস্যাগুলো সমাধান করবে। তাদের জন্য জনসাধারণের কাছে আমরাও খারাপ হয়ে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি দুঃখজনক বিষয়। আমরা বীমা কোম্পানিদের এ বিষয়ে জোরালো তাগিদ দিয়েছি। তারপরেও কেউ এ বিষয়ে অভিযোগ করলে আমরা পদক্ষেপ নেব।