ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ঠা আশ্বিন ১৪৩১

বেনাপোল-যশোর মহাসড়কে ‘ঢিবিতে’ মৃত্যুঝুঁকি

মনির হোসেন, বেনাপোল (যশোর) : | প্রকাশের সময় : বুধবার ২৮ অগাস্ট ২০২৪ ০৬:৫৯:০০ অপরাহ্ন | খুলনা
বেনাপোল-যশোর মহাসড়কের দুপাশ ঘেঁষে পিচঢালাই সরে উঁচু উঁচু ঢিবি তৈরি হয়ে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। চাঁচড়া চেকপোস্ট থেকে ঝিকরগাছা পর্যন্ত অন্তত অর্ধশতাধিক স্থানে এসব ঢিবি দেখা গেছে। এতে মাঝেমধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। গাড়ির চাকার চাপে পিচঢালাই সরে স্থানে স্থানে তৈরি হয়েছে এমন ঢিবি। কিছু জায়গায় ঢেউ খেলানো। আবার কিছু জায়গায় ঢিবিগুলো দেখতে স্পিডব্রেকারের মতো।
 
সরেজমিনে দেখা গেছে, যশোরের চাঁচড়া বাজার থেকে ঝিকরগাছা পর্যন্ত অন্তত ১৩ কিলোমিটার জুড়ে বিভিন্ন স্থানে সড়কের পাশে এমন ঢিবির মতো তৈরি হয়েছে। চেকপোস্ট থেকে পুলেরহাট পর্যন্ত সড়কের দু’পাশজুড়ে ঢিবি হয়ে স্পিড ব্রেকারের মতো উঁচু হয়ে রয়েছে। এছাড়া মালঞ্চি, ধোপাখোলায় কিছু কিছু স্থানে ঢিবি ও ঝিকরগাছা উপজেলা মোড় থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কের পাশ ঘেঁষে উঁচুনিচু সড়ক দেখা গেছে। এর মধ্যে পুলেরহাট বাজার ও লাউজানি রেল ক্রসিংয়ের সড়কে ছোট ছোট খানাখন্দ ও ঢিবি হয়ে একেবারে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দরের একমাত্র এ মহাসড়কটিতে প্রতিনিয়ত মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।
 
ঢিবির কারণে সড়কটিতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, স্থানীয় তিন চাকার বাহনসহ ছোটখাটো যানগুলো। ঢিবিতে চাকা উঠে এসব যানবাহন মাঝেমধ্যেই উল্টে যায়। আর মোটরসাইকেলচালকদের জন্য তো রীতিমতো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে সড়কটি।
 
স্থানীয়রা বলছেন, মহাসড়কে যেখানে একটি স্পিড ব্রেকার দিতে হলেও আইনমেনে দিতে হয় সেখানে অটোমেটিক অসংখ্য স্পিড ব্রেকারের মতো ও ঢিবি তৈরি হলেও সড়ক ও জনপথ বিভাগের দৃষ্টি নেই। সড়কের নির্মাণ কাজে নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি তাদের। তবে তা মানতে নারাজ ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি নির্দিষ্ট ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি পরিমান লোড নিয়ে যানবাহন চলাচল করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
 
পুলেরহাটের স্থানীয় তরিকুল ইসলাম জানান, এসব ঢিবি সড়ক বিভাগ কর্তৃপক্ষের চোখে পড়ে না। প্রতিনিয়ত এই রাস্তায় ইজিবাইক উল্টে দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রাইভেটচালক  রিপন শেখ বলেন, সন্ধ্যার পর এই রোডে গাড়ি চালানো খুব কষ্টের। এ সময় বেনাপোল থেকে ছেড়ে আসা একটার পর একটা ট্রাকের চাপে প্রাইভেটের চাকা ওই ঢিবিতে উঠে যায়। এ সড়কে নতুন চালকের জন্য বিষয়টি খুব ভয়াবহ।
 
মোটরসাইকেলযোগে প্রতিনিয়ত বেনাপোল-যশোর মহাসড়কে চলাচলকারী ইয়ানুর রহমান বলেন, রাতে ঢিবিগুলো ঠিকমতো দেখা যায় না। যে কারণে রাতে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে এ সড়কে চলাচল করতে হয়। মোটরসাইকেলে গতি একটু বেশি অবস্থায় এসব ঢিবিতে উঠলে দুর্ঘটনা নিশ্চিত।
 
ঝিকরগাছা বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় মাসুদুর রহমান সঙ্গে তিনি জানান, রাস্তার একপাশে উঁচুনিচু ঢিবিতে গাড়ি চলাচল কষ্টকর। ঠিকমতো ঢিবিগুলো দেখাও যায় না। এগুলো অ্যাভোয়েট করতে গিয়ে মাঝেমধ্যে গাড়ি রাস্তা ছেড়ে বাইরে চলে আসে। এতে মারাত্মক দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।
 
যশোর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মাহবুব হায়দার খান বলেন, বর্ষা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ঢিবিগুলো কেটে বিটুমিন দিয়ে সড়ক সমান করা হবে। পুলেরহাট ও লাউজানি রেলক্রসিংয়ে নষ্ট হওয়া সড়ক বৃষ্টি বিবেচনায় ইট-বালু দিয়ে কোনোরকমে যান চলাচলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। এই দুই স্থানে রিজিট (ঢালাই রাস্তা) নির্মাণের চাহিদা দিয়েছি। যদি বাস্তবায়ন হয় তাহলে সমস্যার সমাধান হবে।
 
তিনি জানান, সড়ক ঠিক রাখতে শুধু কর্তৃপক্ষের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। রাস্তা নষ্ট হওয়ার পেছনে সকলের দায় রয়েছে। পৌরসভা থেকে শুরু করে জমির মালিক সড়কের পাশে রাস্তা থেকে উঁচু করে স্থাপনা নির্মাণ করে। এ ক্ষেত্রে পানি জমে রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিদ্যুৎ বিভাগও আমাদেরকে না জানিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমত রাস্তার পাশে খুঁটি বসায় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।