মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার ৪নং শ্রীপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের তখলপুর গ্রামে সাবেক ও বর্তমান মেম্বার (ইউপি সদস্য) সমর্থকদের মধ্যে কোন্দলের জেরে সোমবার (৭ মার্চ) রাজু শেখ (৩০) নামে এক ব্যক্তিকে মাথায় কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহত রাজু শেখ তখলপুর গ্রামের আক্তার শেখের ছেলে।
সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে বাড়ির পাশে একটি চায়ের দোকানে বসে থাকা অবস্থায় প্রতিপক্ষের লোকজন রাজু শেখের ওপর অতর্কিত হামলা করে কুড়াল দিয়ে মাথায় কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে তাকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখানে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। এরপর রাত ১০টার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হলে পথিমধ্যে রাত একটার দিকে মৃত্যু হয় তার।
শ্রীপুর উপজেলার ৪নং শ্রীপুর ইউনিয়নের তখলপুর হাতেম আলী দাখিল মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে গত শনিবার (৫ মার্চ) দুপুরে অনুষ্ঠিত মিটিংয়ে অভিভাবকদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। সেখানে সাবেক ইউপি সদস্য কাজী আবদুর রউফের সমর্থকরা বর্তমান মেম্বার মকবুল হোসেন বিশ্বাস সমর্থিত অভিভাবকদের হুমকি-ধামকি দেয়। এ খবর জানাজানি হলে মকবুলের সমর্থকরা রাত সাড়ে ১১টার দিকে তখলপুর ফুলতলা বাজার থেকে রউফকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে বাম পা ভেঙে দেয়। এর জের ধরে ঐদিন (শনিবার) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে ভোর পর্যন্ত মকবুল মেম্বারের সমর্থকদের অন্তত ২৫টি বাড়ি-ঘরে ব্যাপক ভাংচুর করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ঘটনার পর থেকেই সেখানে চরম উত্তেজনা চলে আসছিল।
ঘটনার বিষয়ে বর্তমান ইউপি সদস্য মকবুল হোসেন বলেন, সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে সাবেক মেম্বার আব্দুর রউফের সমর্থক জোয়ারদার আবু দাউদ, খলিল শেখ, ফারুক শেখ, কাজী আবদুর রাশেদ অতর্কিত হামলা চালিয়ে আমার দলের রাজুর মাথায় কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এসময় রাজুর সঙ্গে থাকা আব্দুল হালিম মিয়া ও মাসুদ হোসেনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করা হয়।
মকবুল হোসেন আরও বলেন, বর্তমানে আব্দুল আলীম ও মাসুদ হোসেন শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গত শনিবার (৫ মার্চ) তখলপুর মাদরাসা ম্যানেজিং কমিটি গঠনের জন্য মিটিং চলাকালে সাবেক মেম্বর রউফের লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। পরে কে বা কারা রউফকে মারধর করে। এ কারণে তারা শনিবার রাত ১২টার দিকে আমার সমর্থকদের ২৪-২৫টি বাড়ি-ঘরে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে।
এদিকে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তখলপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য কাজী আব্দুর রউফ বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই মকবুল মেম্বরের লোকজন আমাকে হাতুড়ি দিয়ে মারধর করে পা ভেঙে দিয়েছে। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, প্রায় ১০ বছর আগে দুর্ঘটনায় আমার ডান পা অপারেশন করে কেটে ফেলতে হয়েছিল। এবার মকবুল মেম্বরের লোকজন হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আমার বাম পাও ভেঙে দিল।
এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুকদেব রায় বলেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তিন জনকে আটক করা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।
