মাদারীপুরে মানব পাচারের অভিযোগে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৮। সদর উপজেলার পখিরা গ্রামের তানভীর মল্লিক (২১) নামে এক যুবককে পাচারের অভিযোগে টুলু খান (৪২) নামে এক মানব পাচারকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) রাতে টুলুকে গ্রেফতার করে পরে মাদারীপুর সদর থানায় হস্তান্তর করেছে র্যাব-৮ । এদিকে অপর এক আসামিকে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার পখিরা গ্রামের রফিক মল্লিকের ছেলে তানভীর মল্লিককে ইতালি পাঠানোর জন্য শরীয়পুরের তুলাতলা গ্রামের টুলু খানের সাথে চুক্তি হয়েছে ১২ লাখ টাকার । চুক্তি মোতাবেক কয়েক দফায় টুলু খানকে ১২ লাখ টাকা প্রদান করে তানভীরের পরিবারের পক্ষ থেকে। চলতি বছরের ১৯ জুলাই তানভীরকে লিবিয়ায় পাচারের উদ্দেশ্যে মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। পরে তানভীরকে মুক্ত করার জন্য আরও ৭ লাখ টাকা আদায় করে নেয়। যা ইসলামি ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্ট নম্বরে প্রদান করা হয়েছিল। এরপরও তানভীরকে মুক্ত না দিয়ে দফায় দফায় নির্যাতন চালায় মাফিয়ারা। সেই নির্যাতনের ভিডিও দেখিয়ে আরও টাকা দাবি করে। এসময় বাধ্য করে আরও ৫ লাখ টাকা আদায় করে নেয় মানবপাচারকারী চক্র। এই ঘটনায় ১৩ নভেম্বর তানভীরের ভাই মো.সাগর বাদী হয়ে ৪ জনের বিরুদ্ধে মাদারীপুর মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইবুনালে একটি মামলা দায়ের করেন। ট্রাইবুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করতে মাদারীপুর সদর থানার ওসিকে নির্দেশ প্রদান করেছিলেন। এরপর পুলিশ আসামি গ্রেফতার না করার কারণে র্যাব-৮ মাদারীপুরের একটি দল মামলার প্রধান আসামি টুলু খানকে গ্রেফতার করে সদর থানায় হস্তান্তর করে। টুলুকে গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়লে মাদারীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আরও অনেকেই থানায়ে এসেছিলেন। এসময় অপর এক জাকির হোসেন মৃধা ভুক্তভোগী টুলু ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্যাতন ও মানব পাচারের অভিযোগে সদর থানায় একটি অভিযোগ করলে পরে টুলুর স্ত্রী হাসিনা বেগমকে স্থানীয়রা আটক করে সদর থানায় হস্তান্তর করে। তবে অভিযোগটি সদর থানার ওসি মামলা হিসেবে গ্রহণ করতে রাজি না হয়ে পরবর্তীতে হাসিনা বেগমকে ছেড়ে দেয়া হয়। ভুক্তভোগীদের দাবি, আর্থিক সুবিধা পেয়ে মামলা গ্রহণ করেননি ওসি এবং অভিযুক্ত হাসিনা বেগমকে ছেড়ে দিয়েছে।
এব্যাপারে লিবিয়া বন্দি রনি মৃধার ভাই জাকির হোসেন মৃধা বলেন, আমি থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছিলাম। শুনেছি সেটা মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি। আমি বিষয়টি পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানান, দালালের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা পেয়ে আমাদের মামলা গ্রহণ করেননি ওসি ও মামলার আসামি ছেড়ে দিয়েছেন।
এসব ব্যাপারে মাদারীপুর সদর থানার ওসি এএইচএম সালাউদ্দিন বলেন, একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা গ্রহণ না করা এবং আসামি ছেড়ে দেয়া প্রসঙ্গে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। তিনি এসব মামলা আদালতে করার পরামর্শ দেন।
এব্যাপারে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলমকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও জবাব দেননি।