রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে রীতিমতো মাস্তানি শুরু করেছেন আনসার বাহিনীর সদস্যরা। মাঝে মাঝেই তাদের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হচ্ছেন রোগীর স্বজনরা। এ কারণে সম্প্রতি একে একে ১২ জনকে ব্যাটালিয়নে ফেরত পাঠানো হয়েছে। একজনের চাকরিও গেছে। তারপরও থামছেনা তাদের দাপট ।
সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে দুই রোগীর ৬ জন স্বজনকে আনসার সদস্যদের বেধড়ক পিটিয়ে আহত করেছে। আত্মরক্ষায় রোগীর এক স্বজন, পুলিশের জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন। পরে রাজপাড়া থানা পুলিশ গিয়ে আনসার সদস্যদের হাত থেকে রক্ষা করে তাদের। তার আগে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয় রোগীর স্বজনদের।
ভুক্তভোগীদের একজনের নাম নাহিদ হাসান (৩০)। তার বাড়ী নগরীর টিকাপাড়া এলাকায়। তিনি জানান, রাত ৯টার দিকে ওয়ার্ডের সামনে তিনি দেখেন পাশের ওয়ার্ড থেকে এক ব্যক্তিকে বেধড়ক পেটাতে পেটাতে আনসারদের অফিসে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ওই লোকটির পায়ে স্যান্ডেলও নেই।
পাঁচ-ছয়জন আনসার তাকে পিটিয়েই যাচ্ছেন। এভাবে পেটাতে দেখে তিনি এর প্রতিবাদ করেন। এরই মধ্যে আরও ২০-২২ জন আনসার সদস্য চলে আসেন লাঠি হাতে। তারা নাহিদকে বলতে থাকেন, 'এটা চোর'। নাহিদ বুঝতে পারেন, তাকে চোর সাজিয়ে গণপিটুনি দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তখন পালিয়ে ওয়ার্ডের ভেতর চিকিৎসাধীন থাকা তার মায়ের কাছে গেলেও, সেখানে গিয়ে আনসার সদস্যরা তাকেও মারধর করতে থাকেন।
এসময় তাকে বাঁচাতে গেলে লাঞ্ছিত হন তার দুই ভাই, বোন এবং ভাইয়ের স্ত্রী। আনসারদের হাত থেকে বাঁচতে নাহিদ তখন ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন। এরপর পুলিশ এসে তাদের রক্ষা করে। পরে থানা থেকে ফোন করে তাকে বলা হয়েছে চাইলে তিনি এ ঘটনায় মামলা করতে পারবেন। নাহিদ জানান, তিনি আগে হাসপাতাল পরিচালকের সঙ্গে কথা বলবেন। তারপর মামলা করবেন।
এর আগে সাম্প্রতিক সময়েই আনসার সদস্যদের হাতে রোগীর স্বজনদের লাঞ্ছিত হওয়ার বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। সাম্প্রতিক তাদের হাতে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন মৃত নারীর বীরমুক্তিযোদ্ধা স্বামি ও তার ছেলে , কলেজের শিক্ষক,মৃত শিশুর বাবা ও তার বন্ধু।
আনসার সদস্যদের হাত থেকে রেহাই পাননি, মেডিকেলে কর্মরত নার্সের স্বামি এমনকি চিকিৎসাধীন পুলিশ সদস্যও।এনিয়ে থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা জানান , হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদ করা হলেই আনসার সদস্যরা এসে মারধর করেন।আর প্রতিটি ঘটনার পর আনসার সদস্যরা দাবি করেন রোগীর স্বজনরাই তাদের ওপর চড়াও হয় তাই এমন ঘটনা ঘটে।
শুক্রবার রাতের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মাজহারুল ইসলাম বলেন, মাঝে মধ্যেই হাসপাতালে এ ধরনের ঘটনা ঘটে।
সেখানে একজন বড় কর্মকর্তা (পরিচালক) আছেন। তিনিই এবিষয়ে কথা বলবেন।
বিষয়ে কথা বলবেন। হাসপাতাল আনসার বঙ্গের প্লাটুন কমতার রাংশনুল ইসলাম বলেন, রোগীর স্বজনরা পরিচালক স্যারের সঙ্গে দেখা করলেন। আমরাও আছি। বিষয়টি সমাধান হয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝেই আক্রমণাত মনোভাব দেখানোর বিষয়ে আনতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তিনদিন আগে এখানে এসেছি। সাক্ষাতে কথা বলব।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাদীম ইয়াজদানী বলেন, জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, রাতে ওয়ার্ডের ডাক্তার রোগীর স্বজনদের বের হয়ে যেতে বলছিলেন। কিন্তু একজন বের হচ্ছিলনা। আনসাররা তাকে বের করতে গেলে ধাক্কাধাক্কির ঘটনার ঘটে। তখন ওই ব্যক্তির পক্ষ নেয়ায় আরেকজন রোগীর স্বজনদের সঙ্গে একটা ঝামেলা হয়ে গেছে।
মাঝে মাঝেই এ ধরনের ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা আনসার সদস্যদের মোটিভেশন করছি যে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা যাবে না। তারপরও যারা দুষ্টামি করে তাদের আমরা ব্যাটালিয়নে ফেরত পাঠাই। সম্প্রতি এরকম ১২ জনকে ফেরত পাঠিয়েছি। আমাদের সুপারিশের ভিত্তিতে একজনের চাকরিও চলে গেছে।