রায়পুরে আগামী ৩১ইমে উপজেলা আওয়ামীলীগ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলীয় নেতাদের মাঝে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। ১৪ই মে বর্ধিত সভাকে কেন্দ্র করে সম্মেলনের আগ্রহ তুঙ্গে। সম্মেলনকে সামনে রেখে দলের তৃণমূল নেতাদের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন পদে অংশগ্রহনকারী প্রার্থীরা। নতুন প্রার্থীতায় আলোচনায় এগিয়ে আছেন সভাপতি পদে পশ্চিমাঞ্চল এর ভোটব্যাংক খ্যাত আলতাফ মাষ্টার ও এড.মিজানুর রহমান মুন্সি এবং সাধারণ সম্পাদক পদে নতুনদের মাঝে মেয়র রুবেল ভাট ও ভাইস চেয়ারম্যান মারুফ বিন জাকারিয়া।
দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরাও খুশি সম্মেলনের কারনে। দীর্ঘদিন যাদের খোঁজ খবর নেয়া হয়নি বা দলীয় সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত, বিশেষ করে সে শ্রেণীর নেতাকর্মীরা হটাৎই দলের সিনিয়র নেতাদের ফোন কল পেয়ে খুশি। তবে অনেক ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের ভোটার বা কাউন্সিলর নেতা নির্বাচনে এবার কোন ভুল করবেন বলেও জানান। দলের প্রান্তিক নেতাদের দাবী সারাদেশে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে দলের ভিতরে যেভাবে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন, সেভাবে রায়পুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনেও যোগ্য নেতৃত্ব বাছাই করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন রায়পুর সরকারি ডিগ্রী কলেজের সাবেক ভিপি ও আওয়ামীলীগ নেতা আলমগীর হোসেন অশ্রু।
উপজেলা ও পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি সম্পাদক পদে যারা ইতোমধ্যে দলের নেতাকর্মীদের সাথে কুশল বিনিময় ও খোঁজ খবর নিয়ে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন মাষ্টার, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ,জেলা আওয়ামীলীগ সদস্য ও বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এড. মিজানুর রহমান মুন্সি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারন সম্পাদক
ইসমাইল খোকন ,রফিকুল হায়দার বাবুল পাঠান,মেয়র গিয়াসউদ্দীন রুবেল ভাট, ভাইস চেয়ারম্যান মারুফ বিন জাকারিয়া, কাজী নাজমুল কাদের গুলজারের নামও শোনা যাচ্ছে।
উপজেলা আওয়ামীলীগের দলীয় সূত্রে জানায়, লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলা আওয়ামী লীগ প্রায় ১৯ বছর পূর্বে গঠিত হলেও বর্তমানে এ উপজেলায় দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে সমন্বয় না থাকায় সৃষ্টি হয়নি নতুন কোন নেতৃত্ব। দলের ভিতরে ও বাহিরে রয়েছে চরম বিভক্তি। কেউ কেউ বড় ভাই তুষ্টিতে ব্যস্ত। সেলফি তুলে ফেইসবুকে দোয়া কামনা ও ভাইয়ের সাথে “সহমত” প্রকাশ করেই অনেক নেতাই দল চালাচ্ছেন উপজেলার বাহিরে বসে। দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি করার দাবি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের।
দলীয় সূত্রে আরো জানা যায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ১৯ বছর আগে। ২০০৩ সালে তিন বছরের জন্য গঠিত ৬৭ সদস্যের এই কমিটির সভাপতিসহ ইতিমধ্যে ৩০ নেতা মারা গেছেন। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম। এতে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অধিকাংশ নেতাকর্মীরা।
২০১৩ সালে চার বার সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও দলীয় কোন্দলের কারণে শেষ পর্যন্ত সম্মেলন করা যায়নি। সর্বশেষ ২০১৮ইং সনের ৪ সেপ্টেম্বর লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভায় বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। ওই সভায় জেলা কমিটির কয়েকজন সদস্য ক্ষুব্ধ হয়ে রায়পুরে আজীবন সম্মেলন না করার দাবি জানান।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র রফিকুল হায়দার বাবুল পাঠান বলেন, সম্মেলনের জন্য নেতাকর্মীরা বারবার দাবি তুললেও রহস্যজনক কারণে তা হচ্ছে না। আগের কমিটি বহাল থাকায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছে। এবারো সম্মেলন নিয়ে ধুম্রজাল তৈরি করার অপচেষ্টা হচ্ছে। ফেয়ার ভোটের মাধ্যমে জয় - পরাজয় নিশ্চিত হবে এটিই প্রত্যাশা করি।
রায়পুর উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি পদ প্রত্যাশী এড. মিজানুর রহমান বলেন, অনেক নেতা পৈতৃক সম্পত্তি ছাড়তে রাজি, কিন্তু দলীয় পদ ছাড়তে রাজি নন। দলীয় পদ ‘লাভজনক প্রতিষ্ঠানের পদ পাওয়ার মতোই’ এরকম চিন্তা ভাবনা অনেকের। রায়পুরে দলের সম্মেলন না হওয়ায় মেধাবী ও ত্যাগী নেতারা দল থেকে ছিটকে পড়ছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র হাজী ইসমাইল হোসেন খোকন বলেন, আগের চেয়ে দল অনেক সুসংগঠিত। এ উপজেলায় সকল কর্মসূচি সু-শৃঙ্খলভাবে পালিত হয়। নানা জটিলতার কারণে সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি।
রায়পুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ বলেন, সম্মেলনের কাউন্সিলরগন আমাকে যদি চায় তাহলে প্রার্থী হবো। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ বিশাল ঐতিহ্যবাহী দল সেখানে প্রতিদ্বন্ধিতা থাকবেই, প্রতিহিংসা না।আগামী ৩১ই মে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।