ঢাকা, রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

লক্ষ্মীপুরে নির্বাচনে প্রকাশ্যে হুমকি ছৈয়ালের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে,আতঙ্কিত প্রার্থী!

মোঃডব্লিও আর মুরাদ, জেলা প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ২ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:৪৫:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

 

চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুরের আওয়ামী লীগ মনোনীত একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চাচ্ছেন। এজন্য প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র উঠিয়ে নিতে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছেন তিনি।
 
 
নির্বাচনী মাঠে কোনো প্রার্থী না থাকলে তার ১৫-২০ লাখ টাকা বেঁচে যাবে, তা না হলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সঙ্গে শক্রতা সৃষ্টি হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নৌকার ওই প্রার্থীর নাম আবু ইউসুফ ছৈয়াল।
 
 
তিনি সদর উপজেলার ২০ নম্বর চররমনী মোহন ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান। হত্যা, নির্যাতন, চাঁদাবাজি, চর দখলসহ বিভিন্ন মামলাসহ বহু অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
 
বুধবার (১ ডিসেম্বর) রাতে সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়নের মজুচৌধুরীর হাট পূর্ব বাজারে নির্বাচনী এক সভায় তিনি প্রতিপক্ষ ইসলামী আন্দোলনের মনোনীত প্রার্থী সালেহ আহম্মদকে নির্বাচন থেকে সরে যেতে প্রকাশ্যে হুমকি দেন।
 
অনুষ্ঠানের একটি ভিডিও ফুটেজে হুমকি দিয়ে কথা বলতে দেখা গেছে চেয়ারম্যান ছৈয়ালকে।
 
এ সময় আওয়াম লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
তার এমন হুমকিতে সাধারণ ভোটারদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে মনে করছেন- দল থেকে নৌকা প্রতীক পেলেও এলাকায় বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে তার জনপ্রিয়তা তলানিতে। তার দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে এলাকার সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে ভেতরে ভেতরে অসন্তোষ বিরাজ করছে। ফলে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে পরাজয় নিশ্চিত জেনে নির্বাচনী মাঠে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী রাখতে চাচ্ছেন না তিনি।
 
জানা গেছে, চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছেন। দুর্গম এলাকা হওয়ায় তার পরিবারের সদস্যরা এবং আত্মীয়-স্বজনরা বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ছৈয়াল ও তার ভাতিজাদের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। সর্বশেষ গত ১৬ জুন আব্দুস সহিদ নামে এক জেলেকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল ও তার ছেলে আবু সুফিয়ানসহ ১৩ জনের নামে সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
 
চুরির অপবাদ দিয়ে চেয়ারম্যান ইউসুফ ছৈয়ালের নির্দেশে আমীর হোসেন নামে এক কৃষককে গাছে বেঁধে বর্বর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর তাকে প্রধান আসামি করে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। দুটি মামলায় বেশির ভাগ আসামিই চেয়ারম্যানের আত্মীয়-স্বজন।
 
একই বছরের ২২ জুলাই সুমাইয়া ইসলাম শান্তা নামে তার পুত্রবধূ বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুানাল আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলায় চেয়ারম্যান ছৈয়াল ও তার ছেলে আবু সুফিয়ানকে আসামি করা হয়।
 
 
 
প্রতীক না পেয়েও আচরণবিধি লঙ্ঘন করে আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় তিনি বলেন, আপনারা (ইসলামী আন্দোলন) যদি উড্ড (প্রতাহার) না করেন, তাহলে আমাদের ১৫-২০ লাখ টাকা খরচ হবে। শুধু আপনাদের হাতপাখার কারণে। অতীতে যেটা মনে করেছেন, সেটা ভূল ধারণা। আমি আপনাদেরকে হুশিয়ার করতে চাই। অতীতে যেটা চিন্তা ভাবনা করেছেন, এটা এবার ইনশাআল্লাহ হবে না। আমি জোর গলায় বলতে পারি ইউনিয়নের যে নেতাকর্মীরা আছেন তারা অন্তত নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন।
 
ছৈয়াল বলেন, আপনারা চিন্তা ভাবনা করুন। আপনাদের আমরা হুমকি-ধমকি দেবো না, কিছু বলবো না। কিন্তু দেখা হবে নির্বাচনের পরে। নির্বাচনের পর আপনাদের সঙ্গে মাদরাসা-মসজিদে দেখা হবে। সেদিন আপনাদের সঙ্গে কথা বলা হবে- আপনারা আমাদের পূর্ণ ২০ লাখ টাকা অপচয় করেছেন। আজকে কেন আপনারা আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। তাই আমি এখনো বলি-  সময় থাকতে চিন্তা করুন। আমাদের টাকাগুলো খরচ করাবেন না, পয়সা খরচ করা শয়তানদের লক্ষণ। এ টাকাগুলো খরচ না করে সৎ পথে, মাদরাসা-মসজিদে খরচ করতে আমরা রাজি। এতে এলাকার উন্নয়ন হবে, মাদরাসা-মসজিদের উন্নয়ন হবে।
 
তিনি বলেন, চরমোনাই ভাইয়েরা আপনাদের এখনো সময় আছে, মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। আমাদের টাকা খরচ করালে আপনাদের সঙ্গে আমাদের একটা শক্রতা সৃষ্টি হবে। অতীতে ১০ বছর আমি চেয়ারম্যানি করেছি। আপনাদের সর্বদিকে সহযোগিতা করেছি। কখনো অসন্মান করিনি। আজকে আপনাদের জন্য যদি আমাদের ১৫-২০ লাখ টাকা অপচয় করতে হয়। তাহলে, অবশ্যই আপনাদের সঙ্গে আমাদের একটা দ্বন্দ্ব থাকবে, হিংসা থাকবে, একটা মনের কষ্ট থাকবে।
 
তিনি আরও বলেন, এ চররমনীতে বিএনপির যে দুইজন স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন, তারা আমাদের এমপি মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা বলেছেন, চরমোনাই (হাতপাখা) উঠে গেলেই আমরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করবো। তাহলে বুঝা গেল আপনাদের কারণে আমাদের ১৫-২০ লাখ টাকা খরচ হবে।
 
এ ব্যপারে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার সভাপতি অনারারী ক্যাপ্টেন (অব.) মো. ইব্রাহিম বলেন, নির্বাচন থেকে সরে যেতে নৌকার প্রার্থী শুধু প্রকাশ্যে নয়, বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের হুমকি দিচ্ছে। তারা খালি মাঠে গোল দিতে চায়।
 
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল বলেন, নির্বাচনের নামে টাকা অপচয় করে লাভ কি? আমার ১৫-২০ লাখ টাকা খরচ হবে। তাই বলেছি টাকাগুলো তোরা (হাতপাখা) নিয়ে যা, মসজিদ মাদরাসায় খরচ কর। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে আমি বসবো।
 
পরাজয়ের শঙ্কায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সরিয়ে দিতে চান কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি দুবার জয়ী হয়েছি। পূর্বেও আমার সঙ্গে বিএনপি এবং দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল। কিন্তু নৌকা বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে।
 
রির্টানিং অফিস সূত্রে জানা গেছে, চররমনী মোহন ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রার্থী মনোননয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত আবু ইউসুফ ছৈয়াল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. সালেহ আহম্মেদ, স্বতন্ত্র হিসেবে ছায়েদুর রহমান খলিফা, মো. মনিরুল ইসলাম ও মো. আব্দুল কাদের।
 
আগামী ৬ ডিসেম্বর মনোননয়পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। ৭ ডিসেম্বর প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৬ ডিসেম্বর। একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বচনে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবে।
 
জানতে চাইলে রির্টানিং কর্মকর্তা ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা দেবেশ কুমার সিংহ বলেন, প্রতীক বরাদ্দের আগে নির্বাচনী প্রচারণা আচরণবিধি লঙ্ঘন। এছাড়া এক প্রার্থী আরেক প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরে যেতে বলতে পারেনা। এটিও আচরণ বিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে। কোন প্রার্থী যদি তথ্য প্রমাণ সহকারে লিখিত অভিযোগ দেয়, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।