ঢাকা, সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সিলেটে ৪ লাখ মানুষ পানিবন্দী, বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রও বন্ধের পথে

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ১৮ জুন ২০২৪ ০৯:২০:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

অবিরত হালকা-ভারী বর্ষণ ও ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা ঢলে আবারও বন্যার কবলিত হয়েছে সিলেট। বিভাগের তিনটি নদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।

 

সিটি করপোরেশন এলাকাসহ ১৩ উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হয়ে গেছে। সুরমার পানি বেড়ে বিদ্যুতের উপকেন্দ্রও বন্ধের উপক্রম। সুনামগঞ্জ জেলা শহর ও বিস্তীর্ণ অঞ্চলও এখন পানির নিচে।

মঙ্গলবার (১৮ জুন) বিকেল পর্যন্ত জেলার সুরমা, কুশিয়ারা, সারি ও সারি-গোয়াইন নদীর ছয়টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

 

জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, সিটি করপেরেশন এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ৪১ লাখ ১১ হাজার ৮৩৫ জন বাসিন্দার মধ্যে অন্তত ৩ লাখ ৭১ হাজার ৫০৭ জন মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। প্লাবিত হয়েছে সিসিকের ৪২ ওয়ার্ড, পাঁচ পৌরসভা ও ১৩ উপজেলার ৮৭ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত গ্রামের সংখ্যা ৮৬৪। ৬১৯টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৩ হাজার ৯২৪ জন আশ্রয় নিয়েছে।

 

বিশেষ করে গোয়াইনঘাট ও কোম্পানিগঞ্জে উপজেলা পৃথকভাবে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়েছেন। কানাইঘাটে পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

 

সিলেটের বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্রের একটি উপকেন্দ্রে বন্যার পানি ঢুকে বন্ধ হওয়ার উপক্রম। কেন্দ্রটি সচল রাখতে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। নগরের তালতলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের জলাবদ্ধতা দেখা গিয়েছে। পানি ওঠার আগেই সংশ্লিষ্টরা জরুরি জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

 

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌহিদুল ইসলাম বন্যা কবলিত অনেক এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে জানান, ঈদের দিন থেকে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় মানুষের বাড়িতে পানি উঠেছে। সাধারণ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উপজেলায় বন্যা কবলিতদের নৌকা দিয়ে উদ্ধারে জন্য কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ৩৩৩ হেল্প লাইনে ফোন করলে খাবার সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

 

তবে বন্যা আক্রান্ত এলাকার জনপ্রতিনিধিদের তথ্যমতে, নগর ও জেলায় প্রায় ৬০০ গ্রাম ও এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে গোয়াইনঘাট ও কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার গ্রামীণ অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেক কৃষি জমির ফসল তলিয়ে গেছে, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।

 

সুরমার পানি নগর সংলগ্ন পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করায় সিলেট নগরের উপশহর, তেরোরতন, সোনারপাড়া, লামাপাড়া, শিবগঞ্জ, মেজরটিলা, কেওয়াপাড়া, তালতলা, জামতলা, সোবহানীঘাট, যতরপুর, মাছিমপুর, পাঠানটুলা, দরগামহল্লা, পায়রাসহ অর্ধশতাধিক এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। অনেক এলাকার বাসা ও দোকানে পানি ঢুকে পড়েছে। কোথাও কোথাও হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমেছে।

 

ঈদের দিন ভারী বর্ষণে এয়ারপোর্ট সড়কে পানি উঠলেও নিরাপদ রয়েছে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে এলাকা। কিন্তু এর আগে বিমানবন্দরের রানওয়ে ডুবে গেছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানাজন ভিডিও পোস্ট দিয়েছে।

 

বিমানবন্দর পরিচালক মো. হাফিজ আহমদ বলেন, কে বা কারা ফেসবুকে পুরনো ভিডিও ছেড়ে মানুষজনকে বিভ্রান্ত করছেন বিমানবন্দর তলিয়ে গেছে বলে। তারা নীচু মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছেন। মঙ্গলবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিমানবন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে সাতটি ফ্লাইট ওঠানামা করেছে।  

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য মতে, বিকেল তিনটা পর্যন্ত সুরমার পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১৩১ সেন্টিমিটার, সুরমার পানি সিলেট পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার, অমলসীদ পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি ৩৯ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জে ৮৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে সারি নদীর পানি ৪৭ সেন্টিমিটার এবং সারি গোয়াইনের পানি ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবহমান ছিল।

 

সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার ৬টা পর্যন্ত) সিলেটে ১৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সকাল ৬ টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৪৪ মিলিমিটার, ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ১২ মিলিমিটার এবং ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

 

এছাড়া ভারতের আইএমডির ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্যমতে, ভারতের মেঘালয়ার চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যে কারণে উজানের নেমে আসা ঢলে সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলো দ্রুত প্লাবিত হয়েছে।    

 

মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় সিলেটে ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানান জেলার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন। তিনি বলেন, এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৩৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

 

এর আগে গত ২৯ মে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল। ৮ জুনের পর থেকে বন্যা পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসে। সোমবার থেকে টানা ভারী বৃষ্টিতে আবার সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়।