সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) ৩২টি আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার বা পানীয় জলের তীব্র সংকট বিরাজ করছে।
সিটি করপোরেশন স্থানীয় কাউন্সিলরদের দেখাশোনার দায়িত্ব দিলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাদের দেখা নেই। শুকনো খাবার সংগ্রহ করতে ব্যর্থ সিসিকও।
১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শান্তনু দত্ত শন্তুর উদ্যোগে লামাবাজার ও মির্জাজাঙ্গাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া মানুষকে রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে।
নগরীতে আশ্রয় কেন্দ্র খুললেও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সেভাবে দেখভাল করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। নগরীর মীরাবাজারে কিশোরী মোহন স্কুলের আশ্রয়কেন্দ্রে বেশ কয়েকজন বন্যাদুর্গত উঠৈছেন। এখানেও খাদ্য সংকট রয়েছে। পানীয় জলের জন্য সিটি করপোরেশনের একটি পানির ট্যাংক রাখা হয়েছে সামনে। একইভাবে বন্যা কবলিত এলাকাবাসীর জন্যও বিভিন্ন এলাকায় পানির ট্যাংক রাখা হয়েছে। তবে কোমর বা বুক সমান পানি ঢিঙিয়ে অনেকে সেখান পর্যন্ত আসতে পারছেন না।
নগরীর ৩২টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলার কথা জানালেও সেখানে কী পরিমাণ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন; তাও নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি আশ্রয় কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সিসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ ও পরিবহন শাখা) মো. রুহুল আলম। তিনি বলেন, ১৫০০ থেকে দুই হাজারের মত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এদের দেখাশোনার জন্য স্থানীয় কাউন্সিলরদের বলা হয়েছে। তারা শুকনো খাবার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করছেন। কয়েকজন রান্না করা খাবার দিচ্ছেন জানালেও কাউন্সিলর শন্তু ছাড়া কারো নাম বলতে পারেননি তিনি।
এদিকে আশ্রয়কেন্দ্রে বিতরণের জন্য শুকনো খাবার পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সিসিকের প্রকৌশলী রুহুল আলম। তিনি জানান, শুকনো খাবার সংগ্রহের জন্য নগরীর কালিঘাটের পাইকারি বাজারে লোক পাঠানো হয়েছে। সেখানে অনেক দোকান পানিতে তলিয়ে গেছে। যেসব দোকান খোলা রয়েছে, সেখানেও চিড়া-মুড়ি-গুড় পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় বিস্কুট বা অন্য যেকোনো খাবার আনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
কেবল সিলেট নগরেই নয় জেলার অধিকাংশ আশ্রয়কেন্দ্রেরও একই অবস্থা। বানভাসি মানুষের অভিযোগ, গত বুধবার থেকে সিলেটে এক মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফায় বন্যা দেখা দেয়। এর মধ্যেও পর্যাপ্ত ত্রাণ তৎপরতা চালাতে পারেনি স্থানীয় প্রশাসন। অধিকাংশ জনপ্রতিনিধিকেও তারা সেই অর্থে পাশে পাচ্ছে না। যেখানকার খবর পাওয়া যায়, সেখানেই ত্রাণ নেই। খাবার ও বিশুদ্ধ পানি না পেয়ে দুর্গত মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। ঘর পানিতে ডুবে যাওয়ায় অনেকেরই মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। বিদ্যুৎহীন হয়েও অনেকে দুর্বিষহ সময় কাটাচ্ছে। গভীর নলকূপ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বন্যাকবলিত পুরো এলাকায় বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার চলছে।
গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার একাধিক বানভাসি মানুষ জানিয়েছেন, কোথাও কোথাও ঘরের চাল পর্যন্ত পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ দুটি উপজেলার শতভাগ বাড়িঘর পানিতে প্লাবিত হয়েছে। অনেকে অনিরাপদ জেনেও বাড়ি ও গবাদিপশুর মায়ায় পানিবন্দি হয়েই দিন কাটাচ্ছেন।
কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়া একাধিক ব্যক্তি জানান, অনেকের ঘরে কোমর থেকে গলাসমান পানি। ফলে জীবন বাঁচাতেই আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে তারা। তবে এখানে এসেও পড়েছে আরেক ভোগান্তিতে। স্থানের তুলনায় এসব আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের সংখ্যা বেশি। গবাদিপশু–পাখির সঙ্গে গাদাগাদি করে একই কক্ষে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিরা গতকাল শুক্রবার রাত কাটিয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার উপযোগী পর্যাপ্ত সুবিধা নেই। এমনকি খাবারও পাচ্ছে না অনেকে, ফলে খাবার না পেয়ে অভুক্ত অবস্থাতেই আছে তারা।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যাকবলিত এলাকায় নৌকার তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এতে অসহায় মানুষের কাছে খুব একটা যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি সরকারি ব্যবস্থাপনায় চালু হওয়া আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানো যাচ্ছে না। এ ছাড়া খাদ্যগুদামের আশপাশে পানি থাকায় অনেক ক্ষেত্রে সেখান থেকেও খাদ্যসামগ্রী বের করা সম্ভব হচ্ছে না।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আনোয়ার সাদাত জানান, জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে বন্যাকবলিত এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় নৌকার সংকটে এসব ত্রাণ পাঠানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে সর্বত্র ত্রাণ পাঠাতে চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও জানান, জেলায় মোট ৩৫০টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০০টি কেন্দ্রের আশ্রয়গ্রহণকারীদের তথ্য জেলা প্রশাসনের কাছে রয়েছে। সে হিসাবে ২০০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৬ হাজার ৮৪৪ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।