জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার মহাদান ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড মেম্বার সুলতানা পারভীন দশ হাজার টাকার চুক্তিতে দিগন্ত কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতি নামের এনজিও’র কাজে সহযোগিতা করেন। তার সহযোগিতায় স্থানীয় কতিপয় লোকের মাধ্যমে এনজিও প্রতিনিধিরা ভোগ্য পণ্য দেয়ার নামে দেড় শতাধিক গ্রাহকের প্রত্যেকের নিকট থেকে আটশ করে টাকা আদায় করেন। নিম্নমানের চিনির জন্য প্রতিবাদ করে ৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে টাকা ফেরত নেন গ্রাহকরা। এ বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারি করার প্রয়োজন।
জানা যায়, জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার ফুলকোচার আমিনুল ইসলাম ও তার স্ত্রী রোজিনা বেগম দিগন্ত কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতি নামে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করেন। এ এনজিও’র নারিকেলী শাখার ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম তুহিন, ফিল্ড অফিসার হ্যাপী আক্তার, রেহানা বেগম, রফিকুল ইসলাম ও দেলোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য প্রতিনিধি বিভিন্ন এলাকায় ৫০/৬০ জনের গ্রুপ করে প্রায় ৭০টি কেন্দ্র গঠন করেন। এ এনজিও তে বর্তমানে ১৮ হাজারের অধিক গ্রাহক রয়েছে। এনজিও প্রতিনিধিরা বিভিন্ন এলাকার মেম্বারদের সহযোগিতায় কেন্দ্র গঠন করেন। এজন্য সহযোগিতাকারী মেম্বারকে দশ হাজার করে টাকা দেয় এনজিও। এমনিভাবে সম্প্রতি সরিষাবাড়ীর মহাদান ইউনিয়নে ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার সোহরাব আলী ও সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার চায়না বেগম এবং ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার হাফিজুর রহমানও ওই এনজিও কে সহযোগিতা করেন। গত ৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে মহাদান ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড মেম্বার সুলতানা পারভীনের বাড়ীতে গ্রাহকরা নিম্নমানের চিনির জন্য প্রতিবাদ করেন। এক পর্যায়ে দেড় শতাধিক গ্রাহক পণ্য নিতে অনাগ্রহ দেখান। সেই সাথে তাদের দেয়া দুইশ টাকা ভর্তি ফিস ও নিম্নমানের (২ লিটার তেল, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি চিনি, ২ কেজি আটা ও ১টি মিনি সাবান) পণ্যের ছয়শ টাকা সহ মোট আটশ টাকা ফেরত চান। কারণ- খোলা বাজার থেকেই ৫৮০ টাকায় ওইসব পণ্য পাওয়া যায়। যার ফলে বেকায়দায় পড়ে ওই স্থানীয় মেম্বার অন্যান্য মেম্বার, নেতা ও সাংবাদিকদের নিকট সহযোগিতা চান। পরে প্রায় সারারাত দেন-দরবার করে গ্রাহকদের নিকট থেকে নিম্নমানের পণ্য এনজিওকে বুঝিয়ে দিলে তাদের সমুদয় টাকা ফেরত দেন এনজিও প্রতিনিধিরা। এ বিষয়ে ফিল্ড অফিসার হ্যাপী আক্তার জানান, গ্রাহকদের নিকট থেকে নেয়া সব টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। এমনকি উপস্থিত মেম্বার, চৌকিদার, দফাদার ও নেতাদেরও টাকা দেয়া হয়েছে। ফিল্ড অফিসার দেলোয়ার, ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম ও প্রতিষ্ঠাতা রোজিনা বেগমের মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সুলতানা মেম্বারের সাথে কথা বলার জন্য ওই সময়ই তার বাড়িতে গেলে তিনি ঘরের ভিতর থেকে বের হন নি। পরে তার নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সদুত্তর দিতে পারেন নি। ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার হাফিজুর রহমান জানান, তার এলাকার গ্রাহকদের সকল টাকা তিনি ফেরত নিয়েছেন। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা শামছুল ড্রাইভার ১০, ১১ ও ১৫ নভেম্বর স্থানীয় পেঙ্গুর মোড়ের এক চা দোকানে স্থানীয়দের উপস্থিতিতে জানান, ভাটারার বাদল চেয়ারম্যান ও মহাদানের জুয়েল চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন জনপ্রতিনিধির ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সব ঘটনা শুনে দেখি মেম্বারেরই দোষ। তিনি দশ হাজার টাকার লোভে এই এনজিওকে সহযোগিতা করেন। পরে গ্রাহকদের পণ্য ফেরত দিয়ে তাদের সব টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করেছি। এমনকি সুলতানা মেম্বারকেও আট হাজার টাকা দিয়েছে এনজিও প্রতিনিধিরা। স্থানীয়দের অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, সুলতানা মেম্বারের স্বামী আমজাদ আলীও নির্বাচনের আগে ৭/৮ শত বীমা গ্রাহকের নিকট থেকে কোটি টাকার উপরে আদায় করে। সে টাকা বীমা অফিসে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছে। আমজাদ আলী মরার পর আবার সুলতানা মেম্বার পদে দাড়ালে মানুষ ভোট দিতে চায় না। মানুষদের হাতে পায়ে ধরে বলে যে, দয়া করে ভোট দিয়ে মেম্বার বানান। মেম্বার হলে আপনাদের টাকা ফেরত দিয়ে দিব। কিন্তু আজ পর্যন্তও টাকা ফেরত দেয়ার নাম নেই। এখন আবার এনজিও’র নাম করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সংবাদ কর্মী তৌকির আহম্মেদ হাসু জানান, বেকায়দায় পড়ে সুলতানা মেম্বার ফোন দেন। ফোন পেয়ে তার বাড়ি গিয়ে দেখি বড় ভেজাল। পরে স্থানীয় লোকজন, নেতা ও অন্যান্য মেম্বারদের সহযোগিতায় সমস্যার সমাধান হয়। মহাদান ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার মনির জানান, কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে গ্রাহকদের নিকট থেকে পণ্য এনজিও কে বুঝিয়ে দিয়ে তাদের (গ্রাহকদের) সকল টাকা ফেরত দিয়েছেন। ইউপি চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান জুয়েল জানান, প্রথমদিকে অনেক এনজিওই গ্রাহকদেরকে লোভ দেখায়। পরে তাদের নিকট থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে এলাকার গ্রাহকদের বড় ক্ষতি হয়। তাই মেম্বারদেরকে লোভে পড়ে এনজিওকে সহযোগিতা না করার জন্য বলা হয়েছে। ভুক্তভোগী গ্রাহক ও সচেতন মহল এনজিওটির কর্মকান্ডের উপর নজরদারির জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।