বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ ও তার চাচাতো ভাই সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা'র বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে কুষ্টিয়া মডেল থানায়। এছাড়া এই মামলায় জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের আরো ১৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
১৫ আগষ্ট (বৃহস্পতিবার) দিবাগত রাত ১২টার পর কুষ্টিয়া মডেল থানায় এ হত্যা মামলা করা হয়। মামলার বাদী লুকমান হোসেন কুষ্টিয়া শহরের চর থানাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘর্ষে ৫ আগস্ট বিকেলে লুকমানের ছেলে আবদুল্লাহ (১৩) নিহত হয়।
আজ শুক্রবার বিকেলে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহফুজুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, মামলায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে আরও ১০ থেকে ২০ জনকে। তবে কোনো আসামিকে এ মামলায় এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি।
মামলার এজাহারনামীয় উল্লেখ্যযোগ্য অন্য আসামিরা হলেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের নেতা ধীমান, কাটাইখানা মোড়ের বাসিন্দা সোহেল রানা, কালীশংকরপুর এলাকার আরিফ হোসেন, কোর্টপাড়ার বাসিন্দা রনি, সরকারি কলেজ এলাকার বাসিন্দা মিন্টু, আনোয়ার হোসেন, ঈদগাহপাড়ার বাসিন্দা হান্নান বিশ্বাস, কোর্টপাড়ার বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম, তরুণ ও নিপুণ। তবে আসামিরা সবাই পলাতক।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, কুষ্টিয়া ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ের সামনে লুকমান হোসেনের চায়ের দোকান রয়েছে। সেখানে তাঁর ছেলে আবদুল্লাহ কাজ করত। তিনি অসুস্থ থাকায় ৫ আগস্ট কুষ্টিয়া শহরে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি ছিলেন। ওই দিন বেলা দুইটার দিকে আবদুল্লাহ ক্লিনিক থেকে বাড়িতে যাচ্ছিল খাবার আনতে। তিনটার দিকে থানাপাড়া ছয়রাস্তা মোড়ে পৌঁছালে সে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের লোকজন এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। আবদুল্লাহ এর মধ্যে পড়ে গিয়ে দিশাহারা হয়ে যায়। আবদুল্লাহ মিছিল থেকে পালানোর সময় শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও হানিফের চাচাতো ভাই এবং সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান তার হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে গুলি করেন। এতে আবদুল্লাহর বুকে গুলি লাগলে সে পড়ে যায়। পরে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
বাদী লুকমান হোসেন বলেন, তাঁর ছেলেকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এত দিন থানার কার্যক্রম স্থগিত থাকায় মামলা করতে দেরি হয়েছে। তিনি আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন
এ বিষয়ে আসামীদের মধ্যে প্রায় সকলের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে আনোয়ার হোসেন জানান, আমি চক্রান্তের শিকার। আমি আন্দোলনের সময় ছাত্রজনতার হয়ে কাজ করেছি, এর একাধিক প্রমান আছে। আমি সাংবাদিকতা করি কোন রাজনীতি করি না। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সাবেক এমপি মাহবুব উল আলম হানিফ ও তার ভাই আতাউর রহমান আতা সহ অর্ধশত নেতা কর্মীর নামে আরেকটি মামলার প্রস্তুতি চলছিলো।