ঢাকা, বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আমিও একদিন চলে যাব: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : রবিবার ৩০ অক্টোবর ২০২২ ১১:০৯:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

প্রয়াত নেতাদের আদর্শ মাথায় রেখে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ যেহেতু জনগণের সংগঠন, সাজেদা চৌধুরীর মতো অসংখ্য নিবেদিত নেতাকর্মী এই সংগঠনের হাল ধরেছে বলেই চরম দুঃসময়ে এই সংগঠন দিক হারায়নি। নীতি-আদর্শ নিয়ে এগিয়ে গেছে। আশা করি, আমাদের যারা নেতা আছেন তারা প্রয়াত নেতাদের আদর্শটা মাথায় রেখেই এগিয়ে যাবেন, এটাই আমি চাই।

রোববার জাতীয় সংসদের ২০তম অধিবেশনে চলমান সংসদের উপনেতা ও আওয়ামী লীগে প্রবীণ নেত্রী প্রয়াত সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এবং সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য শেখ এ্যানী রহমানের ওপর আনা শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। 

এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সংক্রান্ত শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করলে জাতীয় সংসদ তা সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করে। পরে এক মিনিট নীরবতা ও দোয়া করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগের জন্য যে অবদান রেখে গেছেন তা ভোলার নয়। চরম দুর্দিনে আওয়ামী লীগের হাল ধরা এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজটি তিনি করেছেন। বারবার এই আওয়ামী লীগের ওপর আঘাত এসেছে, পাকিস্তানের সময় মুক্তিযুদ্ধের সময় আওয়ামী লীগের ওপরই আঘাত এসেছে। সাজেদা চৌধুরী নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করেছেন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ক্যাম্পের নেতৃত্বে ছিলেন যেমন, তেমন মুক্তিযোদ্ধাদেরও সংগঠিত করেছেন, খোঁজখবর নিয়েছেন। স্বাধীনতার সংগ্রামে যেমন তার অবদান রয়েছে। আমাদের জাতীয় জীবনেও অবদান রয়েছে তার। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ আগস্টের পর তো আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর ওপর নির্যাতন নেমে আসে। সাজেদ চৌধুরীও এর শিকার। জিয়াউর রহমান তাকে গ্রেফতার করে। তার অপারেশন হয়েছিল, গায়ে জ্বর ছিল- এ অবস্থায় জিয়াউর রহমান তাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়।  মতিয়া চৌধুরীকেও গ্রেফতার করে। তিনিও অসুস্থ ছিলেন। তাদের ডিভিশনও দেয়নি। সাধারণ কয়েদির মতো জেলে ফেলে রাখে। এ দেশের প্রত্যেকটি আন্দোলন-সংগ্রামে সাজেদা চৌধুরী সব সময় সামনে থাকতেন। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি দিলি­ গিয়েছিলেন আমার সঙ্গে দেখা করতে। আমরা তাকে ফুপু বলে ডাকতাম।

শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান আইন করেছিল পার্টির রেজিস্ট্রেশনে কারও নাম দেওয়া যাবে না। কিন্তু এ ব্যাপারে সাজেদা চৌধুরী অটল ছিলেন। তিনি বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু ছাড়া পার্টি হয় না। আমাদের দলের মধ্যেও কারও কারও দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। তিনি কিন্তু এ ব্যাপারে অটল ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে চেয়েছিল জিয়াউর রহমান, তাই এই আইন করেছিল।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমি দেশে আসার পর তাকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছিলাম। সব কাজ তিনি সুচারুরূপে করতেন। আমরা ক্ষমতায় আসার পর তাকে বন ও পরিবেশমন্ত্রী বানিয়েছিলাম। সুন্দরবন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হয়েছে, এর অবদান সাজেদা চৌধুরীর। তিনি সুন্দরবনকে সাজিয়েছিলেন। তিনিও পুরস্কার পেয়েছিলেন। 

শেখ হাসিনা বলেন, প্রায় দুই দশক ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্ত পরিবেশ ছিল। ’৭৫-এর পর যে সংঘাত শুরু হয় সেই সংঘাতের হাত থেকে রক্ষার জন্য আমরা ক্ষমতায় এসে শান্তিচুক্তি করি। ১৮০০ অস্ত্রধারী আমার কাছে অস্ত্র সমর্পণ করে। কোথাও এটা দেখা যায় না। আমার প্রত্যেকটি কাজে তিনি সহযোগিতা করতেন। পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে তাকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। সংবিধান সংশোধনেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছিলেন। 

‘ছাত্র রাজনীতি যখন করতাম তখন থেকেই তাকে চিনতাম। তিনি বেশি বয়সে লেখাপড়া করেন। তিনি একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী মুক্তিযোদ্ধা। তাকে হারিয়ে আওয়ামী লীগ একজন নিবেদিতপ্রাণ নেতাকে হারাল। আমি আমার চলার পথে তাকে সব সময়ই পাই। ফুপু বলতাম। তিনি চলে যাওয়ায় শুধু আওয়ামী লীগের নয়, দেশেরও ক্ষতি হয়েছে। বয়স হয়েছে আমাদেরও চলে যেতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, একে একে সবাই ছেড়ে চলে যাচ্ছে। বয়স হয়ে গেছে, যেতেই হবে। হয়তো আমিও একদিন চলে যাব। তবে যে যেটা করেছে আমাদের তো স্মরণ করতেই হবে। জিয়াউর রহমানের অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার আমাদের আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মী। শুধু আওয়ামী লীগ কেন, আমাদের বিরোধী দলের যারা আছে বিরোধী দলের নেতা যিনি রওশন এরশাদ, জেনারেল এরশাদ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুসহ যারাই আছে তারা কিন্তু নির্যাতনের শিকার হয়। 

তিনি আরও বলেন, সাজেদা চৌধুরী বা মতিয়া চৌধুরীকে গ্রেফতার করে জিয়াউর রহমান ডিভিশন না দিয়ে ফেলে রেখেছে, ঠিক খালেদা জিয়া একই কাজ করেছিল। রওশন এরশাদ, তিনি তো মাস্টার্স ডিগ্রি পাশ। পেনাল কোডে আছে মাস্টার ডিগ্রি পাশ হলে ডিভিশন দিতে হয়। সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে তাকে ফেলে রেখেছিল। একদম সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে। আমরা তো তাও খালেদা জিয়াকে অসুস্থ বলে নির্বাহী আদেশে তার শাস্তি প্রাপ্তি স্থগিত রেখে বাসায় থাকার সুযোগ করে দিয়েছি। একটা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটা করা একজন বয়োবৃদ্ধ মানুষ। খালেদা জিয়া কিন্তু সেটা করেনি। 

শেখ হাসিনা বলেন, বিমানবাহিনীর প্রধান জামাল উদ্দিনকে গ্রেফতার করে তার নামে একটা ঘড়ি চুরির মামলা দিয়ে কোনো ডিভিশন না দিয়ে মাত্র ২টি কম্বল দিয়ে তাকে জেলখানায় পাঠিয়েছিল। এভাবে মানুষকে তারা অত্যাচার করেছে, নির্যাতন করেছে। জাতীয় পার্টি বোধহয় সেই নির্যাতনের কথা ভুলেই গেছে এখন। ভুলে গেছে অনেকে সেটা। আওয়ামী লীগ তো সবার আগে নির্যাতিত। জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া- সবাই নির্যাতন করেছে।