ঢাকা, শুক্রবার ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

একজন উজ্জল নক্ষত্র প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া: তার কর্মময় জীবন তুলে ধরা হলো

সঞ্জয় সাহা, গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধিঃ | প্রকাশের সময় : রবিবার ৩১ জুলাই ২০২২ ০৬:৪৬:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

একজন উজ্জল নক্ষত্রের নাম ছিল অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া এমপি। তিনি শুধু একজন সংসদ সদস্য ছিলেন না, গাইবান্ধা- ৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) এলাকার মানুষের নয়নমণি ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ছিলেন। তিনি ছিলেন উত্তর জনপদের একজন কৃতী ব্যক্তিত্ব।  তার সাথে কখনো কোনো মানুষের একবার পরিচয় হলে তিনি তার নাম সহজে ভুলতেন না। তার মৃত্যুতে উত্তর জনপদের অনেক এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

 

অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯৪৬ সালের ১৫ এপ্রিল গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার গটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ফয়জার রহমান এবং মাতার নাম হামিদুন নেছা।

 

শিক্ষাজীবনঃ ১৯৬১ সালে তিনি গাইবান্ধা কলেজে ভর্তি হন এবং বিএ, এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।

 

কর্মজীবনঃ ফজলে রাব্বী মিয়া আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। আইনজীবী থাকার সময় তিনি রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ১৯৬৮ সালে তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সনদ লাভ করেন। এরপর ১৯৮৮ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সদস্য হন।

 

রাজনৈতিক জীবনঃ ১৯৫৮ সালে রাজনীতিতে আসেন ফজলে রাব্বী মিয়া। তখন তিনি অষ্টম শ্রেণিতে পড়তেন। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান পাকিস্তানে মার্শাল ল’ চালু করেছিলেন। সে সময় ফজলে রাব্বীর চাচা উক্ত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। চাচার মাধ্যমে তিনি মার্শাল ল’ বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পরেন। এভাবেই তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬২-৬৩ সালে শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের বিরুদ্ধে তিনি আন্দোলন করেছিলেন।

 

মুক্তিযুদ্ধে যোগদান সময়ঃ   ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ফজলে রাব্বী মিয়া মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। তিনি ১১ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। এছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বৈশ্বিক জনমত গড়ে তুলতে তিনি কাজ করেন।

 

সংসদ নির্বাচনঃ ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯৮৬ সালের তৃতীয়, ১৯৮৮ সালের চতুর্থ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম ও ১২ জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদিয়ে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হন। ২০০৮ সালের নবম, ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৯ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরশাদ সরকারের আমলে ১৯৯০ সালে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। দশম সংসদ থেকে তিনি আমৃত্যু ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

 

পরিবারঃ ফজলে রাব্বী মিয়ার স্ত্রী  আনোয়ারা রাব্বী ২০২০ সালের ২৬ মে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ফজলে রাব্বী মিয়া তিন মেয়ের জনক ছিলেন।

 

মৃত্যুঃ  ২০২১ সালের জুনে ফজলে রাব্বী মিয়ার পেটে টিউমার অপারেশন হয়। তবে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য আগস্টে তাকে ভারত নেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২০২২ সালের ২২ জুলাই (বাংলাদেশ সময় ২৩ জুলাই), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ঐ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফজলে রাব্বী মিয়া মৃত্যুবরণ করেন।

মরহুম অ্যাভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার কর্মময় জীবনের সংক্ষিপ্ত তথ্য নিশ্চিত করেছেন তার স্বজনরা ।

 

উল্লেখ্য, অন্যদিকে তার মৃত্যুর পর ২৪ জুলাই শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সংসদ সচিবালয়। নিয়মানুযায়ী গাইবান্ধা- ৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি?এডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার মেয়ে ফারজানা রাব্বী বুবলী, ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি.এম সেলিম পারভেজ নাকি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন। এ নিয়ে এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, বিভিন্ন চায়ের দোকানে এবং আড্ডাখানায় শুরু হয়েছে জল্পনা- কল্পনা।