স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যকার সরাসরি সমুদ্রপথে যোগাযোগ একটি নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে বন্দরের শহীদ মোহাম্মদ ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটোরিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি আরও বলেন, আমদানি পণ্যের কনটেইনার পর্যাপ্ত হলে করাচি-চট্টগ্রাম রুটে ভবিষ্যতে নিয়মিত জাহাজ পরিচালনা করতে মালিকরা আগ্রহী। ইতিপূর্বে পাকিস্তানের সঙ্গে সিঙ্গাপুর ও কলম্বো বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশের পণ্য আমদানি-রপ্তানি হতো। নতুন রুট চালু হওয়ায় বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো।
সাশ্রয়ী ব্যয় ও সময়ে উভয় দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে নতুনভাবে গতিশীলতা সৃষ্টি হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, করাচি বন্দর থেকে লাইনার সার্ভিসের মাধ্যমে প্রথমবার গত ১১ নভেম্বর এইচআর শিপিং লাইনের অধীনে একটি জাহাজে ৩২৮ কনটেইনার নিয়ে চট্টগ্রাম আসে। ১২ নভেম্বর কনটেইনার খালাস করে চট্টগ্রাম ত্যাগ করে। জাহাজটি মূলত দুবাইয়ের জেবল আলী বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে করাচি বন্দর হয়ে চট্টগ্রাম আসে। জাহাজটির সাধারণ রাউন্টিং হচ্ছে দুবাই জেবল আলী-করাচি-চট্টগ্রাম-ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়া-মুন্দা (ভারত)-দুবাই।
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, গত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে ৮ লাখ ৩০ হাজার ৫৮২ টিইইউ'স কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। যা বিগত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭৬ হাজার ৯৮৬ টিইইউ'স বেশি, প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ২২ শতাংশ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বন্দরের সদস্য মো. হাবিবুর রহমান, শহীদুল আলম, কমডোর এম ফজলার রহমান প্রমুখ।
এদিকে চট্টগ্রামে তিন শতাধিক কন্টেননার নিয়ে আসা কার্গো জাহাজটি নোঙরের সময় উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানি হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ।
তিনি বলেছেন, ‘এই নতুন রুটটি সরবরাহ শৃঙ্খলাকে সহজতর করবে, ট্রানজিটের সময় হ্রাস করবে এবং উভয় দেশের জন্য নতুন ব্যবসার সুযোগ উন্মুক্ত করবে।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অর্ন্তবর্তী সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্যকে স্বাগত জানিয়েছে। এতে পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধির আশা প্রকাশ করা হচ্ছে। ২০২৩ সালে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশর বাণিজ্যের পরিমাণ ৮০০ মিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছিল।
সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন মাস পর করাচি থেকে চট্টগ্রাম এই পণ্যবাহী জাহাজ আসার খবরে সর্বত্র তোলপাড় হয়েছে। কারণ স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর এটিই প্রথম।
পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি জাহাজ কতটুকু ফলপ্রসূ হবে জানতে চাইলে শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, ব্যবসায়ীরা সবসময় নতুন নতুন রুট খোঁজে। সে হিসেবে একটি জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা কয়েকটি গন্তব্য মিলিয়ে একটি রুট তৈরি করেছে। জাহাজটি দুবাই থেকে করাচি হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে। এটি পরীক্ষামূলক সার্ভিস বলে মনে হয়।
জানা গেছে, করাচি থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পানামার পতাকাবাহী জাহাজ ‘ইউয়ান শিয়াং ফা ঝাং’ আসে গত ১১ নভেম্বর। পণ্য খালাসের পর সেটি ইন্দোনেশিয়ার বেলোয়ান বন্দরের উদ্দেশে চট্টগ্রাম ত্যাগ করে পরের দিন।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, জাহাজটি করাচি থেকে সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে এসে ৩৭০ টিইইউ (প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের) কন্টেইনার খালাস এবং রপ্তানি পণ্যবাহী ৩১৯ টিইইউ কন্টেইনার বোঝাই করেছে।
স্থানীয় শিপিং এজেন্ট রিজেন্সা লাইন্স ও বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, পাকিস্তান থেকে এ জাহাজে আমদানি করা পণ্যের পরিমাণ ৬ হাজার ৩৪০ টনের মত। এর বেশিরভাগই ভোগ্যপণ্য ও শিল্পকারখানার জন্য ব্যবহৃত কাঁচামাল।
বায়ান্ন/প্রতিনিধি/একে