ঢাকা, শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ই আশ্বিন ১৪৩১

কসাই থেকে পুলিশের সোর্স জাহাঙ্গীর,হ্যান্ড মাইকে পুলিশের ভূমিকায়!

মোঃওয়াহিদুর রহমান মুরাদ, লক্ষ্মীপুর : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ৩০ নভেম্বর ২০২১ ০৬:৫৩:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর
পুলিশের গাড়ি থেকে নেমে জনতাকে শান্ত থাকার জন্য হ্যান্ড মাইকে অনুরোধ করছেন এক ব্যক্তি। গায়ে পুলিশের বুলেট প্রুফ জ্যাকেট। সাধারণ মানুষ তাকে দেখলে পুলিশের কোনো কর্মকর্তা বা সদস্য মনে করতে পারেন। কিন্তু তিনি আসলে পুলিশ নন, পরিচিতরা তাকে পুলিশের সোর্স হিসেবেই চেনেন।
সোর্স পরিচয়ের ব্যক্তিটির নাম জাহাঙ্গীর। তবে পেশায় তিনি কসাই (গোশত ব্যবসায়ী)।
পাশাপাশি তিনি স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির র্সোস হিসেবে কাজ করেন। তার বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল গ্রামে।
সোমবার (২৯ নভেম্বর) বিকেলে কসাই জাহাঙ্গীকে উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়ি বাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে পুলিশের বুলেট প্রুফ জ্যাকেট গায়ে দিয়ে হ্যান্ড মাইকে স্থানীয় জনতাকে শান্ত থাকার জন্য মাইকিং করতে দেখা গেছে। সে সময় স্থানীয়রা তার ওই মুহূর্তের ছবি তুলে ফেসবুকে ছেড়ে দেয়।  
 
স্থানীয়রা জানান, গত রোববার (২৮ নভেম্বর) ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের পর সোমবার বিকেলে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পার্শ্ববর্তী হায়দারগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) হাসান জাহাঙ্গীর হোসেন ঘটনাস্থলে যান। এ সময় পুলিশের গাড়ির পেছনে করে সেখানে যান কসাই জাহাঙ্গীর। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে গাড়ি থেকে একটি বুলেট প্রুফ জ্যাকেট গায়ে দিয়ে বের হন তিনি। গাড়ির সামনে এসে জাহাঙ্গীর হ্যান্ড মাইকে জনতার উদ্দেশে তাদের শান্ত থাকার ঘোষণা দেন। 
 
পুলিশ না হয়েও পুলিশের মতো এমন কর্মকাণ্ডে জনমনে নানা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ফেসবুক ওই ঘটনার ছবি পোস্ট করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অনেকে। পুলিশের ব্যবহৃত জিনিস কীভাবে একজন সোর্স ব্যবহার করতে পারেন? পুলিশের মতো আচরণ করতে পারে? প্রশ্ন রাখেন লক্ষ্মীপুর জজ কোর্টের আইনজীবী এড.শাকিল। 
 
স্থানীয় আরও জানান, কসাই জাহাঙ্গীর চর আবাবিল গ্রামের মৃত ইমান আলীর ছেলে। তিনি হায়দারগঞ্জ বাজারের গোশত ব্যবসায়ী। পাশাপাশি তিনি হায়দারগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির সোর্স। কসাই জাহাঙ্গীর বলেন, সোমবার বিকেলে ঘটনাস্থলে দু’পক্ষের উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে, আমি হ্যান্ড মাইকে বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত থাকার জন্য নিজেই পুলিশের অজান্তে নেমে জনগনকে সচেতন করি। হ্যান্ড মাইকটি নির্বাচনী কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল। আর বুলেট প্রুফ জ্যাকেটটি আমি পুলিশের গাড়ি থেকে নিয়ে গায়ে দিয়েছিলাম।  
 
তিনি বলেন, আসলে আমি ছোট মানুষ, তাই বিষয়টি বুঝতে পারিনি। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স্যার বিষয়টি দেখে আমাকে বকাঝকা করেছেন। আমি তার পর পরই খুলে ফেলেছিলাম।  
 
পুলিশ ফাঁড়িতে দালালির বিষয়ে কসাই জাহাঙ্গীর বলেন, এলাকায় ছোট শালিস হলে লোকজনের পক্ষে থানায় যাই। তাদের সহযোগিতা করি।
 
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হায়দারগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) হাসান জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, তিনি (জাহাঙ্গীর) ঠিক করেনি। আমরা দেখার পর সঙ্গে সঙ্গে খুলে ফেলেছে। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে এলাকার দু’পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। অনেক কষ্টে সেটা নিয়ন্ত্রণে এনেছে পুলিশ।  
 
সোমবার বিকেলে রায়পুরের উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের কুচিয়ামারা এলাকায় নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ১০ জন আহত হন এবং অন্তত ১০টি বসতঘর ভাঙচুর করা হয়েছে।  
 
তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে ওই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিজয়ী মেম্বার জাহাঙ্গীর বকশী ও পরাজিত মেম্বার প্রার্থী মফিজ দেওয়ানের সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয় হাজিরহাট পুলিশ, রায়পুর থানা পুলিশ ও হায়দারগঞ্জ ফাঁড়ি পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।