বগুড়ায় গ্রামীণ কাঠামো উন্নয়নে দেড় কিলোমিটার রাস্তা পাকা করণের কাজ শেষ হতে না হতিই ইট উঠে ও ভেঙ্গে গুড়ো হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, "পাকা করণের নামে ওই রাস্তায় একেবারেই নিম্ন মানের ইট ব্যবহার করা হয়েছে।"
জানা গেছে, জেলার শেরপুর উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়নে "শুভগাছা জাঙ্গালপাড়া জামে মসজিদ’র নিকট হতে বেড়ের বাড়ি গ্রামের ইসমাইলের বাড়ি পর্যন্ত" ওই রাস্তায় হেরিং বোন বন্ড (এইচবিবি) করণের দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পে "৮৪ লাখ ১৪ হাজার ১৫০ টাকা মূল্যে" কাজে এই অনিয়ম হয়েছে।
শেরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিস সুত্রে জানা গেছে, ওই কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর,দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়-এর অধিনে। আর এই কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সোনাতলা উপজেলার মেসার্স দোয়েল এন্টারপ্রাইজ।
তবে, দোয়েল এন্টারপ্রাইজ কাজটি বিক্রি(কমিশন) করেছেন রেজাউল করিম নামের অন্য একজন ঠিকাদারের কাছে। তিনিই(রেজাউল) ওই কাজটি সম্পূর্ণ করছেন বলে অপর সূত্র জানিয়েছেন।
এদিকে, স্থানীয়রা ঠিকাদারের ওই কাজ সংশ্লিষ্ট দুর্নীতির প্রতিবাদ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তারা নিম্ন মানের ইট রাস্তা থেকে তুলে ফেলতে বেশ কয়েক বার চেষ্টাও করেছেন।
সূত্র আরো জানায়, ওই রাস্তায় কাজ শুরু থেকেই স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান (খামার কান্দি) আব্দুল মোমিন মোহসীন তার লোকদের মাধ্যমে নিম্ন মানের ইট সরবরাহ করেছেন। এতে ঠিকাদারকে অনেকটা বাধ্য হয়ে চড়া দামে ইট (নিম্ন মানের) ক্রয় করে কাজ করতে হয়েছে।
জানতে চাইলে আবু সাইদ নামে স্থানীয় একজন বলেন, "রাস্তা পাকা করার নামে চেয়ারম্যান ইট পারল, তা- আবার ২/৩ নম্বর ইট দিয়ে। রাস্তা দিয়ে এখনি চলা যায় না। অনেক জায়গায় ইট উঠে গেছে, কোথাও আবার ইট ভেঙ্গে গুড়া হয়ে গেছে। এলাকাবাসীর কষ্ট কোন দিন শেষ হবে না।"
এছাড়া, রাস্তাটি দিয়ে চলাচলকারী পথচারীদের আশঙ্কা, অল্প দিনের মধ্যে আরও জায়গায় ইট ভেঙে গুড়ো হয়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে কাজের সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার রেজাউল করিম-এর মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে নম্বরটি বন্ধ রয়েছে বলে একাধিক বার-ই প্রতিত্তোর মেলেছে।
বিষয়টি জানতে শেরপুর উপজেলা প্রকল্প (পিআইও) কর্মকর্তা মোছাঃ শামসুন্নাহার শিউলির মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করে সংযোগ পাওয়া সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে পরিচয় দিয়ে বার্তা পাঠানো হলেও প্রতিত্তোর মেলেনি।
এবিষয়ে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ময়নুল ইসলাম বলেন, "পুরো কাজ আমার কমপ্লিট হয় নাই। ওখানে রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ দেখা গেলে আমাদের কাগজে-কলমে কমপ্লিট হয় নাই।"
জানা গেছে, ২০২০ সালের ৪ এপ্রিল ওই কাজের কার্যাদেশ সময়, চলতি বছরের ২০ এপ্রিল কাজ শুরুর সময় এবং ১৩ জুন কাজটির শেষ (সম্ভাব্য) সময় ছিল।
স্থানীয়রা আরও জানান, ওই রাস্তায় কাজের শুরুর দিকে নিম্ন মানের ইট বিছানোর খবর পেয়ে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে সঙ্গে নিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করেন। ওই সময় তারা নিম্ন মানের ইটে কাজের সত্যতা পাওয়ায় সমস্ত ইট অপসারণ করেন।
ময়নুল ইসলাম বলেন, "কাজ বন্ধ করার কথা বলা হয়নি, নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, এটা এভাবে করতে হবে।"
তিনি জানান, গত অর্থবছর পর্যন্ত এই কাজ অর্ধেক শেষ হয়ে গেছে। বাকি কাজ সম্পূর্ণ হয় নি।
ময়নুল ইসলাম বলেন, "আমাদের কাজ অবজারভেশন দিয়েছি। কনফার্মেশন না হওয়া পর্যন্ত তো কাজ শেষ করে চলে যেতে পারবে না।"
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শাস্তি তো কোন বিষয় না। সে (ঠিকাদার) বিল পাবে না।.......... অনুযায়ী কাজ না করে সে বিল পাবে না। জবাবে ময়নুল ইসলাম আরও বলেন, পরের ইটা খারাপ তাহলে আমার আবার ভেরিফাই করতে হবে।