'অত পানি জীবনেও দেখি নাই, গর (ঘরে) ধান থাকলেও খাওয়ার উপায় নাই। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের গরু পানিতে বান্দা। রাস্তার কাছের মানুষ ত্রাণ পাইলেও আমরার (আমাদের) খবর কেউ লয় না। বহুত খাইয়া না-খাইয়া কোনো মতে বাঁচিয়া আছে।'
জকিগঞ্জ উপজেলার কাজলসার ইউনিয়নের বয়োবৃদ্ধ মতছিম আলী আক্ষেপ করে কথাগুলো বলেন।
একই গ্রামের শৈলেশ বিশ্বাস বলেন, 'গৃহপালিত গরু নিয়ে আমরা খুবই দুর্ভোগ পোহাচ্ছি। গরুগুলো বাঁচিয়ে রাখতে এখন কচুরিপানাই একমাত্র ভরসা। নৌকা দিয়ে ৫-৭ মাইল ঘুরে কিছু কচুরিপানা সংগ্রহ করি।'
সিলেটের অন্যান্য উপজেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও জকিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জকিগঞ্জের ৯টি ইউনিয়নই প্লাবিত। গত এক সপ্তাহ থেকে স্থিতাবস্থায় রয়েছে কুশিয়ারা নদীর পানি। গ্রামীণ রাস্তাঘাটসহ সবকটি প্রধান সড়কে এখনো পানির নিচে।
পৌর এলাকা ছাড়া উপজেলার সবকটি ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। বন্যা দীর্ঘমেয়াদী হওয়ায় দুর্ভোগ ক্রমেই বাড়ছে। দেখা দিয়েছে ডায়রিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগ।
পৌর এলাকার চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া উপজেলার দেড়শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এখনো বন্ধ রয়েছে পাঠদান। অনেক আশ্রয় কেন্দ্রের নিচতলা পানিতে ডুবে আছে।
সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা। অনেক এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা যাচ্ছে না। পানিবন্দি মানুষের অভিযোগ, সড়কের আশপাশে যারা পানিবন্দি, তারা ত্রাণ পেলেও পাচ্ছে না গ্রামের ভিতরের পানিবন্দিরা। খাবারের অভাবে নিম্নাঞ্চলের মানুষ মারাত্মক কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় কেউ ত্রাণের নৌকা নিয়ে যায় না। দূরবর্তী অনেক আশ্রয়কেন্দ্রেও খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল আহাদ জানান, আজ শুক্রবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০ জন ডায়েরিয়া রোগীকে সেবা দেয়া হয়েছে। ভর্তি রয়েছে আরও ৯ জন। এছাড়াও উপজেলার প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা কেন্দ্রে ডায়রিয়া রোগীদের সেবা দেয়া হচ্ছে।
উপজেলা বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আতাউর রহমান জানান, সরকার জকিগঞ্জে ১১০ টন চাল ও সাড়ে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে এই ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৩০ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। শনিবার থেকে বাকি ৮০ টন চাল বিতরণ করা হবে। এছাড়াও প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। তবে অনেক এলাকায় ভয়াবহ বন্যা থাকায় ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছে না। সে সব স্থানে ত্রাণ পৌঁছাতে প্রশাসন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম ফয়সাল জানান, বন্যা দীর্ঘায়িত হওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা ৪৬ থেকে ৬০টিতে বৃদ্ধি করা হয়েছে। ৯টি ইউনিয়নের জকিগঞ্জ পৌর শহরের অনেক এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রাখতে প্রশাসন সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।