ঢাকা, শুক্রবার ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

টাঙ্গাইলে কৃষিতে খরচ বাড়ায় দুচিন্তায় কৃষকরা

হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল : | প্রকাশের সময় : রবিবার ১৪ অগাস্ট ২০২২ ০৬:৫১:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

কৃষিতে খরচ বাড়ায় টাঙ্গাইল জেলার ১২টি উপজেলায় রোপা আমন চাষ নিয়ে দুচিন্তায় পড়েছেন প্রান্তিক কৃষকরা। ভরা মৌসুমে অনাবৃষ্টির কারণে জমিতে রোপা আমন লাগাতে পারছেন না তারা। আবার সার ও ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির ফলে তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন।  

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ৮৯ হাজার ৮১৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ৬ টাকার বাড়ানোর রেশ কাটতে না কাটতেই সরকার ডিজেলের মূল্য লিটার প্রতি ৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১৪ টাকা করেছে। ফলে কৃষকরা উৎপাদন খরচ বাড়ার বোঝা মাথায় নিয়ে জমিতে রোপা আমন লাগাচ্ছেন। বোরো আবাদের চাইতে রোপা আমন চাষে কৃষকের খরচ কম হলেও বর্ষার ভরা মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়া এবং সার ও ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিতে কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। 

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার- ঘারিন্দা, গালা, সিলিমপুর, পোড়াবাড়ী, চারাবাড়ী। সখীপুর উপজেলার- যাদরপুর, কলাবাগান, শোলাপ্রতিমা, কালমেঘা, হাতিবান্দা, কাকরাজান, বড়চওনা। কালিহাতী উপজেলার- নারান্দিয়া, পালিমা, নাগবাড়ি, বল্লা, কোকডহরা, হাতিয়া, রাজাবাড়ী। গোপালপুর উপজেলার- হেমনগর, মির্জাপুর, আলমনগর। ধনবাড়ী উপজেলার- মুশুদ্ধি, বানিয়াজান, বলিভদ্র। মধুপুর উপজেলার- আলোকদিয়া, জুড়ামগাছা, ইদিলপুর। দেলদুয়ার উপজেলার- লাউহাটি, পাথরাইল, এলাসিন, গড়াসিন, ডুবাইল। নাগরপুর উপজেলার- মোকনা, মাহমুদনগর, পাকুটিয়া, ভারই, ভাড়রা, সলিমাবাদ। মির্জাপুর উপজেলার- ফতেপুর, তরফপুর, বাশতৈলসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় রোপা আমন চাষের মৌসুম শুরু হয়েছে। 

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সার ও ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির আগে গোলায় ধান উঠানো পর্যন্ত যেখানে খরচ হতো বিঘাপ্রতি সাড়ে ৫-৬ হাজার টাকা। এখন সেই খরচ বেড়ে দাঁড়াবে ৮-৯ হাজার টাকায়। অপরদিকে বর্ষার ভরা মৌসুমে প্রয়োজনীয় বৃষ্টি না হওয়ায় সেচ দিয়ে জমি প্রস্তুত করতে হচ্ছে। সেখানেও ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি বিদ্যুতের লোডশেডিং কৃষকদের আরও দুশ্চিন্তায় পড়তে হচ্ছে। রোপা আমন আবাদে অতিরিক্ত খরচ হিসেবে যোগ হচ্ছে সেচ খরচ। 

সখীপুর উপজেলার কলাবাগান গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন বলেন, সার ও ডিজেলের দাম বাড়ার ফলে চাষাবাদে খরচও বেড়েছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে ধানের দাম না বাড়লে আমাদের চাষাবাদ ছেড়ে দিতে হবে। অপর কৃষক সিরু মিয়া বলেন, সার ও তেলের দাম বাড়ায় মানুষ এখন চাষাবাদ ছেড়ে দিচ্ছে। ফসল উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। আমরা উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিয়ে চিন্তায় রয়েছি। 

টাঙ্গাইল সদর উপজেরার কৃষক কাদের, মমিন, খালেক, জলিলসহ অনেকেই বলেন, যেভাবে সার ও ডিজেলসহ জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের আবাদই ছেড়ে দিতে হবে। ক্ষতি দিয়ে তো আর আবাদ করা যাবে না। আমরা কিভাবে বাঁচবো? আবাদ না করলে তো খাওয়া জুটবেনা। সরকারের কাছে আমাদের দাবি সার ও তেলের দাম কমানো হোক। 

পোড়াবাড়ী গ্রামের কৃষক লাভু মিয়া বলেন, সার, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ায় বর্তমানে এক বিঘা জমি চাষে মোট খরচ হচ্ছে ৮-৯ হাজার টাকা। তাতে ধান পাওয়া যাবে ১০-১২ মণ। ধান কাটা মৌসুমে ধানের মূল্য থাকে ৭০০-৭৫০ টাকা মণ। সে হিসেবে ধানের উৎপাদন খরচই উঠে না। এমন অবস্থা থাকলে আমাদের পক্ষে চাষাবাদ করা সম্ভব না। 

খুচরা সার ব্যবসায়ী বানিজ খান বলেন, ইউরিয়া সারের দাম প্রতি বস্তায় ৩০০ টাকা বেড়েছে। এছাড়া ডিএপি, পটাশ ও এমওপি সারের দাম বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়ে গেছে। 

সখীপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা নিয়ন্তা বর্মণ জানান, ডিজেলের দাম বাড়ায় কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ক্ষেত্রে কিছুটা বিরূপ প্রভাব ফেলবে। কৃষকের খরচও বেড়ে যাবে। শুধু কৃষি ক্ষেত্রে ভর্তুকি মূল্যে ডিজেল দেওয়া হলে কৃষকরা ধান চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবে। এছাড়া উৎপাদন খরচের সাথে ধানের বাজারমূল্যও সমন্বয় করা জরুরি।

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আহসানুল বাশার জানান, সার ও ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার ১২টি উপজেলার প্রায় তিন লাখ কৃষক হতাশার মধ্যে রয়েছে। বিগত দিনে ধান চাষ করে গুটি কয়েক কৃষক লাভবান হলেও প্রান্তিক কৃষকরা প্রায়ই ক্ষতির শিকার হয়েছেন। সার ও ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির ফলে কৃষকের উৎপাদন খরচের সাথে ধানের বাজারমূল্য সমন্বয় করা সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।