টাঙ্গাইলের মধুপুরে আলোচিত ঈগল এক্সপ্রেসের চলন্ত বাসে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ডাকাতি ও গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। রোববার বিকেলে শহরের নিরালা মোড় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে প্রথম আলো বন্ধুসভার আয়োজনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
এতে বক্তব্য রাখেন, প্রথম আলো বন্ধুসভার উপদেষ্টা জিনিয়া বক্স, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার সৈয়দ মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ, মানবধিকার কর্মী মাহমুদা শেলী, ব্লাস্টের সন্বয়নকারী খন্দকার আমেনা বেগম, স্মরণীর নির্বাহী প্রকৌশলী মঞ্জু প্রামাণিক, নিরাপদ সড়ক চাই টাঙ্গাইল জেলা শাখার সহ-সভাপতি সাজ্জাদ খোশনবীশ, সুজনের সহ-সভাপতি বাদল মাহমুদ প্রমুখ। মানববন্ধনে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় বক্তরা বলেন, বাসে ধর্ষণের সংখ্যা বাড়ছে। অনেক সময় এ সব ঘটনায় বিচারের আওতায় আসে না। আমরা মধুপুরে ঈগল এক্সপ্রেসের চলন্ত বাসে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
উল্লেখ্য, গত ২ আগস্ট রাতে কুষ্টিয়া থেকে ঈগল এক্সপ্রেসের একটি বাস অন্তত ২৪ জন যাত্রী নিয়ে নারায়ণগঞ্জের দিকে উদ্দেশে রওনা হয়। পরে রাত ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জের একটি হোটেলে খাবারের জন্য বিরতি দেওয়া হয়। সেখান থেকে যাওয়ার পর ৩ দফায় ১০ জন যাত্রী সেজে বাসে উঠেন ডাকাত দলের সদস্যরা। বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর আনুমানিক রাত দেড় টার দিকে যাত্রীরা ঘুমানোর এক পর্যায়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের টাঙ্গাইলের নাটিয়াপাড়া এলাকা পৌঁছালে ডাকাত দলের সদস্যরা অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে পুরো বাসের নিয়ন্ত্রণ নেন। প্রথমে পুরুষ যাত্রীদেরকে তাদের পোশাক খুলে হাত মুখ বাধা হয়। অপরদিকে নারী যাত্রীদেরকে বাসের পর্দা ও সিটের কভারখুলে মুখ এবং হাত বেঁধে ফেলা হয়। পরে অস্ত্রের মুখে বাসের চালক ও হেলপারকে জিম্মি করা হয়। টাঙ্গাইলের গোড়াই এলাকা থেকে বাসটিকে ইউর্টান করে এলেঙ্গা হয়ে ময়মনসিংহ রোড ধরে যেতে থাকে। এরই মধ্যে যাত্রীদের কাছে থাকা মোবাইল, টাকা, কানের দুল, হাতের বালা, গলার চেইন লুট করে নেয়া হয়। পরে ৫ থেকে ৬ জন ডাকাত সংঘবদ্ধভাবে গাড়িতে থাকা এক নারীকে ধর্ষণ করে। রাত সাড়ে ৩ টার দিকে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের পাশে বালুর স্তÍুপের গিয়ে বাসটি উল্টে যায়। পরে ডাকাত দলের সদস্যরা পালিয়ে যায়।
এদিকে এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত ৩ জন ডাকাত সদস্য আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল শনিবার রাতে দুইজন বিচারক তাদের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। জবানবন্দিকৃতরা হলেন, টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বল্লা গৌরস্থান এলাকায় মৃত হারুন অর রশীদের ছেলে রাজা মিয়া (৩২), গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামের আব্দুল আউয়াল (৩০) এবং কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ধনারচর পশ্চিম পাড়া গ্রামের নুরনবী (২৬)। রাজা মিয়া ও নুরনবী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শামছুল আলমের এবং আউয়াল সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রুমি খাতুনের আদালতে জবানবন্দি দেন। সূত্রে জানা যায়, বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়া রাজা মিয়া আদালতে ওই নারীকে ধর্ষণের দায় স্বীকার করেছে। এ ছাড়া আব্দুল আউয়াল ও নুরনবী ডাকাতির কথা স্বীকার করলেও ধর্ষণের কথা অস্বীকার করেন।