ঢাকা, মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁওয়ের বিমানবন্দর এখন গো-চারণ ভূমি, ৪২ বছর ধরে পরিত্যাক্ত

রবিউল এহ্সান রিপন, ঠাকুরগাঁও: | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ২২ মার্চ ২০২২ ১২:১০:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

দীর্ঘ ৪২ বছর থেকে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর। পরিণত হয়েছে গো-চারণভূমিতে, পরিত্যক্ত জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে। রানওয়ে ছেয়ে আছে আগাছায়। স্থানীয়রা ফসল শুকানোর কাজে ব্যবহার করছেন রানওয়েটিকে। স্থানীয়দের দাবি বিমান বন্দরটি সংস্কার করে আবারো পুনরায় চালু করা হোক। এতে ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের মানুষকে ঘুরপথে আর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে যেতে হবে না ও জেলার উন্নয়ন বৃদ্ধি পাবে।

ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ঠাকুরগাঁও-পীরগঞ্জ সড়কের পাশে শিবগঞ্জ-মাদারগঞ্জ এলাকায় ৫৫০ একর জমির উপর ১৯৪০ সালে বিমানবন্দরটি নির্মিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সামরিক উদ্দেশ্যে বিমানবন্দরটি নির্মাণ করা হয়েছিল। বন্দরের রানওয়ে তিন কিলোমিটার লম্বা। এই রানওয়ের পশ্চিম প্রান্তে ছিল ১০টি সাব-রানওয়ে। যেখানে যুদ্ধবিমান লুকিয়ে রাখার বিশেষ সুবিধা ছিল। ১৯৭৮-৭৯ সালের দিকে বিমানবন্দরটি বন্ধ হয়ে যায়। যাত্রী কম হওয়ার অভিযোগে বন্ধ করা বিমানবন্দরটি এক বছর পর পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘদিন পড়ে থাকার পর চালুর লক্ষ্যে ১৯৯৪ সালে বিমানবন্দরটি আবারো সংস্কার করা হয়। পরে সেটি আর চালু হয়নি।

এর মাঝে ৪২ বছর গড়িয়েছে, অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। বন্দরটি চালু হওয়া এখন সময়ের দাবি বলে জানিয়েছেন জেলার বাসিন্দারা। কারণ সৈয়দপুর বিমানবন্দরের প্রায় ৮০% যাত্রী ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় এবং দিনাজপুরের। তবে ‘লোকসানের ভয়ে’ এখনও চালু করা হচ্ছে না বিমানবন্দরটি।

ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর থেকে ১০-১৫ মিনিটে ভারতের বাগডোগরা বিমানবন্দরে অবতরণ করে, ট্রানজিট ফ্লাইটে বেঙ্গালুরু সহ আশেপাশের কয়েকটি দেশে যাওয়া সম্ভব। অথচ একটি সময়োপযোগী আন্তরিক সিদ্ধান্তের জন্য বঞ্চিত হচ্ছে ৩ টি জেলার মানুষ।

স্থানীয়দের দাবি, আগামীর সমৃদ্ধ ঠাকুরগাঁওয়ের অন্যতম সারথি হতে পারে বিমানবন্দরটি। জেলায় শিল্প-কারখানা নির্মাণ থেকে শুরু করে ব্যাবসায়িক কর্মচাঞ্চল্য বাড়াতে বিমানবন্দরটি রাখতে পারে বড় ভূমিকা।

সরেজমিনে গিয়ে বিমানবন্দর এলাকায় দেখা যায়, অনেক জমিতে আবাদ হচ্ছে ফসল। আর রানওয়েটি স্থানীয়রা ব্যবহার করছেন গোচারণ, ফসল মাড়াই ও শুকানোর চাতাল হিসেবে।

দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত বিমানবন্দরটির অবকাঠামো ২০১৬ সালের ফেব্রæয়ারিতে পরিদর্শন করেছিলেন সরকারের সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। ওই সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, বিমানবন্দরটি চালুর বিষয়ে শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকার মানুষ সঙ্গে থাকলে বিমানবন্দরটি চালু করা অসম্ভব কিছু নয়।

তখন এক বছরের মধ্যেই ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালু করার আশ্বাস দিয়েছিলেন রাশেদ খান মেনন। ছয় মাসের মধ্যে কারিগরি ত্রæটিগুলো মেরামতের কথাও জানিয়েছিলেন। সেই আশ্বাসের ছয় বছর পার হলেও বিমানবন্দরটি চালুর বিষয়টি একটুও আগায়নি।

জেলা চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি হাবিবুর ইসলাম বাবলু বলেন, ‘দেশি-বিদেশি কোনো বড় বিনিয়োগকারী হাজার হাজার কোটি টাকা শিল্প খাতে বিনিয়োগ করতে চাইলে সবার আগে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দেবে। কিন্তু উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলাটিতে শিল্পের বিকাশে প্রধান বাধা যোগাযোগ ব্যবস্থা। ‘এখানে বিমানবন্দরটি চালু হলে শিল্পের বিকাশ ঘটবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। যার ফল ভোগ করবে এ অঞ্চলের প্রত্যেক পেশার মানুষ।’

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাদেক কূরাইশী জানান, বিমানবন্দরটি চালু করার জন্য তিনি সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন সভা ও সমাবেশে এ অঞ্চলের মানুষের সুবিধার কথা বিবেচনা করে বিমানবন্দরটি চালুর দাবিও তুলেছেন। দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় বন্ধ বিমানবন্দরটি ফের চালু হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি ঐতিহ্যবাহী। এটি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে ঠাকুরগাঁওবাসীর দাবি রয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে উচ্চপর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে।’