ঢাকা, বৃহস্পতিবার ৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১

দূর্নাম ঘুচাতে ব্যস্ত পুলিশ: অপরাধের স্বর্গরাজ্য বায়েজিদ থানা

মো. এনামুল হক লিটন, চট্টগ্রাম : | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ২৬ নভেম্বর ২০২১ ০৬:১৭:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন
সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া দেশীয় তৈরী বিপুল সংখ্যক কিরিচসহ তিন কিশোর অপরাধি।

এবার অতীতের দূর্নাম ঘুচাতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুশিশের (সিএমপি) বায়েজিদ বোস্তামী থানা পুলিশ। এক সময়ের বহুল আলোচিত, ক্রাইমজোন ও অপরাধিদের স্বর্গরাজ্যখ্যাত বায়েজিদ বোস্তামী থানা পুলিশ বর্তমানে থানার আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ তথা সন্ত্রাসী-অপরাধি ও মাদক ব্যবসায়িদের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট এ্যাকশনে নেমেছে। ফলে সন্ত্রাসী-অপরাধি, চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়িদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সূত্র জানায়, বায়েজিদ বোস্তামী থানা পুলিশের সাড়াশি অভিযানে একের পর এক গ্রেফতার হচ্ছে মাদক বিক্রেতা, দূধর্ষ সন্ত্রাসী ও তালিকাভূক্ত অপরাধিরা। উদ্ধার হচ্ছে চোরাই মালামাল, মাদকসহ অস্ত্রশস্ত্রও। বায়েজিদ বোস্তামী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান-এর নেতৃত্বে থানার অন্যান্য কর্মকর্তারা প্রতিদিন থানার বিভিন্নস্থানে সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করে গেলেও বেশীরভাগ অভিযানে ওসিকে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে। জানা গেছে, বায়েজিদ বোস্তামী থানা পুলিশের উপর্যুপরী অভিযানে এলাকার আইন-শৃঙ্খলার ব্যাপক উন্নতিতে স্বয়ং পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বহুল আলোচিত, ক্রাইমজোন ও সন্ত্রাসী-মাস্তানদের স্বর্গরাজ্যখ্যাত বায়েজিদ বোস্তামী থানায় চলতি বছরের ২১ মে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে যোগদান করেন মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। এর আগে তিনি কোতোয়ালী মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সূত্র মতে, বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি হিসেবে মোহাম্মদ কামরুজ্জামান যোগদানের পর থেকে বিগত ছয় মাসে থানার চিত্র পাল্টে গিয়ে সেবার মান পূর্বের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ভূমিখেকো, দূধর্ষ সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ি ও অপরাধিদের মাঝে। গত এক মাসের ব্যবধানে বায়েজিদ বোস্তামী থানা পুলিশ থানার বিভিন্ন এলাকায় সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করে ধর্ষনকারি, কিশোর অপরাধি, একাধিক মামলার পলাতক আসামী গ্রেফতার, মাদক ও অস্ত্র উদ্ধারে সক্ষম হয়েছে। এরমধ্যে গত ১৯ নভেম্বর রাতে গার্মেন্টস কর্মিকে ধর্ষণের অভিযোগে এক ব্যক্তিতে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানায়, থানার মহানগর পাহাড় এলাকায় গার্মেন্ট কর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার খুশগোর গ্রামের মৃত হানিফের ছেলে মো. আল আমিন (২২) বায়েজিদ বোস্তামী থানার আরেফিন নগর এলাকার মুক্তিযোদ্ধা কলোনিতে বসবাস করে গত ১৯ নভেম্বর রাতে ভুক্তভোগী নারী বান্ধবীর বাসা থেকে পায়ে হেঁটে নিজের বাসায় যাচ্ছিলেন। মহানগর পাহাড় সংলগ্ন নেজাম মামার খানকা শরীফের একটু সামনে একটি ফাঁকা স্থানে পৌঁছলে আল আমিন ভুক্তভোগী গার্মেন্টস কর্মির সঙ্গে কথা বলার  চেষ্টা করে। ভুক্তভোগী নারী কথা না বলে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে, তার মুখ চেপে ধরে নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে ভুক্তভোগী নারীকে ধর্ষণ করে আল আমিন। পরে ওই নারী তার বোনের বাসায় এসে ঘটনার কথা জানায়। তার বোন জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯-এ ফোন দেয়। ৯৯৯-এর ফোনের ভিত্তিতে পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল (চমেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন ভূক্তভোগীর বড় বোন। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ওই রাতেই অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত আল আমিনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এছাড়া একইদিন ১১ মামলার এক পলাতক আসামিকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। থানার অক্সিজেন এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারণা ও চেক জালিয়াতিসহ ১১ মামলার পলাতক আসামি জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেফতার করা  হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। ধৃত জাহাঙ্গীর আলম ওই এলাকার হাজী আবদুল মোনাফের ছেলে। থানা সূত্র জানায়, প্রতারণা ও চেক জালিয়াতিসহ ১১ মামলায় পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। গোপন সংবাদ পেয়ে ১৯ নভেম্বর গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া ৮ নভেম্বর দেশীয় তৈরী বেশকিছু কিরিচসহ তিন কিশোর অপরাধিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জানা গেছে, থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মেহের অসীম দাশ সঙ্গীয় ফোসসহ মোবাইল ডিউটি করাকালে সংবাদ পান আলামিন (১৬), আকাশ (১৭) ও মো. জিহাদ (১৬) বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন, আতুরার ডিপো রেলবিটের পশ্চিম পার্শ্বে চলাচলের রাস্তায় অপরাধ মূলক কর্মকান্ড সংঘটনের জন্য দেশীয় তৈরী অস্ত্রশস্ত্রসহ জড়ো হয়। উক্ত তথ্য মোতাবেক ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে তাদের ধারালো অস্ত্রসহ আটক করা হয়। পুলিশ জানায়, আমিন জুট মিল কলোনী, শান্তিনগর, আতুরার ডিপো রেলবিট এলাকায় বিভিন্ন সময় কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা তুচ্ছ কারণে রক্তক্ষয়ী মারামারীতে লিপ্ত হয়। পরবর্তীতে তাদের দেয়া তথ্য মোতাবেক অভিযান পরিচালনা করে আমিন কলোনী রেলবিট, শান্তিনগর এলাকা হতে আরো ২৫টি দেশীয় তৈরী অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এদিকে গত ২৫ নভেম্বর রাতে ১টি দেশীয় তৈরী এলজি, ৫ রাউন্ড কার্তুজ ও ১ হাজার পিস ইয়াবাসহ এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জানা গেছে, পুলিশ থানার রৌফাবাদ সংলগ্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মো. রুবেল (৩২) নামীয় ব্যক্তিকে অস্ত্র, কার্তুজ, ইয়াবাসহ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। এ ব্যাপারে বায়েজিদ বোস্তামী থানায় নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। জানা গেছে, এ ধরণের অভিযান প্রতিদিনই অব্যাহত রয়েছে। ওসি নিজেই এ ধরণের অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন, পাঁচলাইশ ৩নং ওয়ার্ডের সমাজ সেবক ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন। একই কথা জানিয়েছেন, পশ্চিম শহীদ নগর এলাকার সমাজ সেবক ও নগর যুবলীগের যুব সংগঠক আতিকুর রহমান আতিক। জানতে চাওয়া হলে, বায়েজিদ বোস্তামী থানার অফিসার ইনর্চ্জ (ওসি) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, সিএমপি কমিশনার, ডিসি ও এসি স্যারের সঠিক দিক নির্দেশনায় থানার আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ তথা অপরাধ ঠেকাতে এবং সন্ত্রাসী গ্রেফতারে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। তিনি এ লক্ষ্যে সকলের সহযোগীতাও কামনা করেছেন।