ঢাকা, শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ই আশ্বিন ১৪৩১
আক্রান্তে মৃত্যুর হার ৭৫ শতাংশ

ভয়ঙ্কর নিপা ভাইরাস

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : শনিবার ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ১০:১৬:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, নিপা ভাইরাস একটি মারাত্মক ভাইরাস।  এই ভাইরাসে আক্রান্তে মৃত্যুর হার ৭৫ শতাংশ।

এই ভাইরাসে কোনো ভ্যাকসিন নেই, ওষুধ নেই, চিকিৎসা নেই। আমাদের দেশে এবার ৮ জন নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, এর মধ্যে ৫ জন মৃত্যুবরণ করেছে।  

 

শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় মানিকগঞ্জে এক মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলার সমাপনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

তিনি বলেন, নিপা ভাইরাস থেকে আমাদের সাবধান থাকতে হবে, বাদুরের খাওয়া ফল ও খেজুরের রসের মাধ্যমে এটা ছড়ায়। তাই খেজুরের রস খাওয়া থেকে আমাদের সর্তক থাকতে হবে। নিপা ভাইরাসের জন্য ২টি হাসপাতালে ২৫ বেডের ইউনিট খোলা হয়েছে এবং ২৮টি জেলাকে সর্তক করা হয়েছে।

মন্ত্রী বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, যে দলের নেতারা সাজাপ্রাপ্ত, বিদেশে পালিয়ে আছে, ওই দলের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। যে দল বাংলাদেশের কোনো উন্নয়ন করতে পারবে না তাদের কাছে দেশ নিরাপদ নয়। শেখ হাসিনার কাছেই বাংলাদেশ নিরাপদ তাই আগামী নির্বাচনে দেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে বেছে নেবেন।  

তিনি আরও বলেন, করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে বিএনপি নেতারা গুজব ছড়িয়েছিল গঙ্গার পানি ভরে মানুষকে টিকা দেওয়া হচ্ছে। এসব গুজব ছড়িয়ে কোনো লাভ হয়নি, আর বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিন নিয়েছে। সারা বিশ্বে বাংলাদেশ ভ্যাকসিনেশনে ৫ম হলেও জনসংখ্যার বিবেচনায় বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছে।

মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা উদযাপন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মহীউদ্দীনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন- জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিজয়মেলা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম।

নিপাহ ভাইরাস থেকে সাবধান : ১৯৯৯ সালে মালয়েশিয়ায় সর্বপ্রথম এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব লক্ষ করা যায়। রিপোর্ট অনুযায়ী তখন এই ভাইরাসের কারণে মালয়েশিয়ায় ২৫৭ জন মস্তিষ্কের প্রদাহ বা নিপাহ এনসেফালাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়েছিল, যার মধ্যে ১০০ জনের মৃত্যু হয়। ২০০১ সালে বাংলাদেশে প্রথম মেহেরপুরে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর নিপাহের প্রাদুর্ভাব প্রতিবছর শীতকালে প্রধানত বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল এবং ভারতের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে দেখা দেয়। বাংলাদেশের মেহেরপুর, নওগাঁ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁও, কুষ্টিয়া, পাবনা, নাটোর, মানিকগঞ্জ, গাইবান্ধা, রংপুর, নীলফামারী, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, কুমিল্লা, জয়পুরহাট ও রাজশাহীতে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়। 

যেভাবে ছড়ায় : 

সাধারণত উড়ন্ত বাদুড় ও শূকর এই ভাইরাস বহন করে। নিপাহ ভাইরাসবাহী বাদুড় যখন কোনো ফল খায় বা খেজুরের রস পান করে তখন বাদুড়ের লালা সরাসরি সেই ফল বা খেজুরের রসকে দূষিত করে। এরপর কোনো মানুষ যদি এই দূষিত ফল খায় বা কাঁচা খেজুরের রস পান করে তাহলে সে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া ২০০১ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, এই ভাইরাস একজন মানুষ থেকে আরেকজনে সংক্রমিত হয়।

 

 লক্ষণ : এই ভাইরাস সাধারণত মানুষের মস্তিষ্কে তীব্র প্রদাহ বা এনসেফালাইটিস ও থ্রম্বোসিস বা রক্ত জমাট বাঁধায়, ফুসফুসে এটিপিক্যাল নিউমোনিয়া করে, কিডনি, রক্তনালিসহ অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আক্রান্ত করে মৃত্যু ঘটাতে পারে। সাধারণত মানুষের শরীরে ভাইরাস ঢোকার চার থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে এই ভাইরাসের লক্ষণ প্রকাশিত হয়। এর প্রাথমিক উপসর্গগুলো ইনফ্লুয়েঞ্জা বা অন্যান্য ভাইরাসের মতোই। যেমন—জ্বর, বমি, গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা থেকে মস্তিষ্কের প্রদাহ, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। ভাইরাসের আক্রান্ত নিশ্চিত হতে বা আক্রান্ত ব্যক্তির ডায়াগনোসিস করতে সাধারণত অ্যান্টিবডি টেস্ট বা পিসিআর টেস্ট করা হয়। আবার কিছু কিছু আক্রান্ত ব্যক্তির রোগ সেরে যাওয়ার পরও অনেকের চিরস্থায়ী মস্তিষ্কের সমস্যা হতে পারে। আবার এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির রোগ সেরে যাওয়ার কয়েক বছর পর আবার এই ভাইরাস সক্রিয় হয়ে রিল্যাপসিং এনসেফালাইটিস করতে পারে। তাই নিঃসন্দেহে এটি একটি বিপজ্জনক ভাইরাস।

সাবধানতা : এই ভাইরাসের চিকিৎসার এখন পর্যন্ত কোনো স্পেসিফিক ওষুধ নেই এবং ভাইরাস প্রতিরোধী কোনো ভ্যাকসিনও নেই। তবে যেহেতু এটি একটি এনভেলপড ভাইরাস, তাই সাবান ও তাপের মাধ্যমে এই ভাইরাস সহজেই নষ্ট করা সম্ভব।

 

তাই এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে হলে কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যেমন—খেজুরের রস ফুটিয়ে পান করা, ফল সাবান দিয়ে ধুয়ে খাওয়া বা বাদুড়ে খাওয়া ফল পরিহার করা, আক্রান্ত ব্যক্তি বা পশু থেকে নিজের দূরত্ব বজায় রেখে চলা এবং শূকর, গরু বা পশুর খামারে কাজ করার সময় সতর্ক থাকা ইত্যাদি।