বাউল গান আছে। থাকবে। বাউল গান পৃথীবি থেকে হারাবে না। বাউল ও বাউল গানের মর্যাদাকে আরো উচুঁতে নিয়ে যাওয়ার জন্যে কাজ চলছে। এ কাজে অবশ্যই সফল হতে হবে। এই বাউল গান এদেশের লক্ষ কোটি মানুষের প্রাণের ভাষা। শুধু বাংলাদেশ নয় পৃথীবির প্রতিটি দেশেই বাউল গান আর বাউলের বিচরণ রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে বাউল গানে অপসংস্কৃতিকে কোনোভাবেই স্থান দেয়া যাবে না।
দৈনিক বায়ান্নের মুখোমখি হয়েছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় বাউল সমিতি ফাউন্ডেশনের সভাপতি বাউল কাজল দেওয়ান ও সাধারণ সম্পাদক বাউল লতিফ সরকার। জাতীয় এই দুই বাউল অভিন্ন সুরে কথা বলেছেন বাউল জগত নিয়ে। এই জগত নিয়ে উভয়ে স্বপ্ন দেখেন অনেক অনেক। যে স্বপ্নগুলোকে বলা যায় মৌলিক চাহিদা।
২ জুলাই শনিবার এই দুই বাউল সিলেটে এসেছিলেন এই অঞ্চলের বাউলদের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ করতে। দিন শেষে রাতে সিলেট নগরীর সাগরদিঘির পাড়ে মেন্ডারিন চাইনিজ রেস্তরায় নৈশভোজ পূর্বে ওই দুই বাউল কথা বলে খোলামেলাভাবে। সিলেট বিভাগীয় বাউল কল্যাণ সমিতির সভাপতি কামাল উদ্দিন রাসেলের সহযোগিতায় নেয়া হয় এই সাক্ষাতকার।
জানতে চাওয়া হয়েছিল বাউল গানে বেহায়াপনার শেষ কোথায়? অভিন্ন সুরে বাউল জগতের দুই নেতা জানালেন অবশ্যই বাউল জগত থেকে বেহায়পনা বিতাড়িত করা কবে। বাউল জগতে কোনো ধরণের অশ্লীলতার স্থান নেই। স্থান পেলে তাকে সমূলে তুলে ফেলতে হবে। ভাবতে অবাক লাগে ছোট পোশাকে অশ্লীল নৃত্যের মধ্য দিয়ে বাউল গান গায়। বিচ্ছিরি বিষয়। এই অবস্থা আর চলতে দেয়া যায় না।
তাঁরা বলেন, বাউল গানে বেহায়াপনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন সুস্থ ধারার বাউল শিল্পীরা। অশ্লীলতা দূর করতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ জাতীয় বাউল সমিতি ফাউন্ডেশন। সিলেটের পবিত্র মাটি থেকে ঘোষণা করছি বাউল গান থেকে বেহায়পনা দূর করতে সংগ্রাম শুরু হলো। সিলেটে এই বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়েছি। বিশেষ করে সিলেট বিভাগীয় বাউল কল্যাণ সমিতির সভাপতি কামাল উদ্দিন রাসেল বিষয়টি নিয়ে তাঁর উতকন্ঠার কথা জানিয়েছেন। এভাবে সারাদেশ থেকে পর্যায়ক্রমে সহযোগিতা পাওয়ার আশ্বাস পাচ্ছি। আমরা সফল হবো আমাদের শুদ্ধি অভিযানে-এমনটি সিলেটের পবিত্র মাটিতে বসে বলে যাচ্ছি। বাংলাদেশ জাতীয় বাউল সমিতি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সংসদ সদস্য মমতাজ আপা আছেন আমাদের সাথে। তাঁর সহযোগিতা নিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই বহুদূর। অবশ্যই বেহায়পনার লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে মমতাজ আপার সহযোগিতায়। সাথে সুস্থ ধারা বাউল প্রেমিদের এগিয়ে আসতে হবে।
বাউল গানের মর্যাদা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে কাজল দেওয়ান ও লতিফ সরকার জানান, এক সময় শুধু বাউল শিল্পী নয় সব ধরণের শিল্পীর অনেক মর্যাদা ছিল। অতীতে একজন শিল্পীকে বিশেষ সম্মানের চোখে দেখতেন সাধারণ মানুষ। আজ সেই অবস্থা অনেকটা ম্লান হয়ে গেছে। মর্যাদা ক্ষুন্ন হওয়ার প্রধান দুইটি কারণ তুলে ধরেছেন এই দুই বাউল। এই দুইটি কারণ হচ্ছে চুক্তি ও চাহিদা। চুক্তি অনুযায়ী টাকা নিয়ে গান গাইতে যান শিল্পীরা। চুক্তি অনুযায়ী আয়োজকরা যেভাবে গান গাইতে বলেন; সেভাবে গান গাইতে হয়। ফলে গান তার মৌলিকত্ব হারিয়ে ফেলে। স্রোতারা শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলেন শিল্পীর উপর থেকে।
দুই বাউল সাধক বলেন, বাউল গানের মর্যাদা আজো আছে। উদাহরণ টেনে বলেন, মঞ্চে একটু রঙ লাগিয়ে অনেক সময় বাউল গান পরিবেশন করেছি। পরে তার প্রতিক্রিয়াও পেয়েছি। পরিচিত জনরা এগিয়ে বলেছেন এটা কি গান গাইলেন। এতে বুঝা গেল স্রোতা রঙ লাগানো বাউল গান গ্রহণ করতে পারেন নি।
মূল গীতিকারের নামের স্থানে অন্য কোনো ব্যক্তির নাম জুড়ে দিয়ে গান গাওয়া প্রসঙ্গে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন বাউল কাজল দেওয়ান ও বাউল লতিফ সরকার। তাঁরা বলেন, এই ধরণের আচরণ সম্পূর্ণ অন্যায়। পৃথীবির সর্বত্র বিষয়টি ঘৃণিত। শুধু তাই নয়, অনেক সময় দেখা গেছে চার-পাঁচটির দুই লাইন করে গেয়ে একটি রূপ দিয়েছে। এ ধরণের কাজ অন্যায়। এসব অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম শুরু হয়েছে। এসব বিষয়ে সংগ্রামের সহযাত্রী হিসেবে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ওই দুই বাউল সাধক।