গত কয়েক দিন ধরে মৌলভীবাজারে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। কমছে তাপমাত্রা। দিনের বেলায় স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকলেও বিকাল থেকে কমতে শুরু করে। বিশেষ করে শহরের বাইরে হাওয়া ও গ্রামের আবহাওয়ায় পরিবর্তন দেখা যায়।
রাতে তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে পড়তে থাকে ঘন কুয়াশাও। পাশাপাশি হিমেল হাওয়া শীতের তীব্র তাকে আরও বাড়িয়েও দিচ্ছে। এর ফলে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। আগামী কয়েক দিনে মৌলভীবাজারে রাতে তাপমাত্রা আরও কমবে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।
জানা যায়, শহরে এখনো তেমন ঠাণ্ডা না পড়লেও গ্রাম এলাকায় শীত পড়েছে বেশি। বিশেষ করে ভারতের মেঘালয় সীমান্তসহ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, রাজনগর, কুলাউড়া, বড়লেখা, জুড়ী ও কমলগঞ্জ উপজেলার পাহাড়ি ও সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকার সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোতে খুব বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
মৌলভীবাজার আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ বলেন, মৌলভীবাজারে তাপমাত্রা প্রতিদিন কমছে। ফলে শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। ডিসেম্বরের শেষ দিকে তাপমাত্রা আরও কমে আসবে।
এদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়ছে, গরম কাপড়ের দোকানেও। শহরের ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত বিপণিবিতানগুলোতে শীতবস্ত্র বিক্রি বেড়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষ ভিড় করছেন ফুটপাতে। তবে শীতের কাপড় ব্যবসায়ীরা জানান, ঠাণ্ডার তীব্রতা যত বাড়ছে, বিক্রিও তত বাড়ছে।
মাদারীপুরে ঘন কুয়াশা, হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন : ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে মাদারীপুর। সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। রোববার (১৮ ডিসেম্বর) ভোর থেকে এখন পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি। সকালে মাদারীপুর শহরের বিভিন্নস্থান থেকে মাদারীপুর-বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক ও মাদারীপুর-শরিয়াতপুর মহাসড়ক রুটের যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। এসব যানবাহনের গতিবেগ ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার। মাদারীপুরে আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঢাকা থেকে আসা চন্দ্রা পরিবহনের চালক ইসমাইল হোসেন জানান, এতো কুয়াশা, রাস্তায় গাড়ি চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। সাধারণত ঢাকা থেকে মাদারীপুরে গাড়ি নিয়ে আসতে সময় লাগে মাত্র ১ ঘণ্টা ৫০ মিনিট, আর সেখানে আজ সময় লেগেছে চার ঘণ্টা।
চৌরাস্তা থেকে শরিয়াতপুরে ছেড়ে যাওয়া বালু বোঝাই ট্রাকের চালক আলম বলেন, শরিয়াতপুরের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছি। কিন্তু যে কুয়াশার অবস্থা কখন যে পৌঁছাতে পারব বুঝতে পারছি না। কুয়াশায় গাড়ি জোরে চালানো যায় না, এতে সড়কে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও থাকে।
ভ্যানচালক ইমরান বলেন, ভোরে ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছি। কুয়াশায় রাস্তায় কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি কিন্তু কোনো যাত্রী পাচ্ছি না। যদি ভাড়া না মারতে পারি তাহলে সংসার চালাবো কীভাবে?
রোববার এখন পর্যন্ত সূর্যের মুখ দেখতে পায়নি মাদারীপুরবাসী। কাজের সন্ধানে আসা দিনমজুরদের ঘন কুয়াশার কারণে শহরের চারমাথায় বসে থাকতে দেখা যায়।
শীতের মোটা কাপড় পড়ে কাঁধে কোদাল নিয়ে কাজের খোঁজে হেঁটে চলছেন ৬৫ বছরের এসকেন্দ হাওলাদার উদ্দিন। জানতে চাইলে বলেন, কাজের খোঁজে বের হয়েছি বাবা। কাজ না করলে সংসার চলবে কী করে? ছেলেরা যে যার মতো বিয়ে করে সংসার করছে। তোমার চাচীকে নিয়ে এখন আমার জীবনের বেহাল দশা। শীত আর কুয়াশাকে ভয় করলে কাজ পাওয়া যাবে না।
মাদারীপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র পর্যবেক্ষক আব্দুর রহমান সান্টু বলেন, আজ মাদারীপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গত সপ্তাহ জুড়ে ২০ থেকে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠানামা করেছে। কুয়াশার পরিমাণ অন্য দিনের চেয়ে আজ বেশি। রাত থেকেই কুয়াশা পরিমাণ বেশি পড়ায় আজকে সকালে সূর্য দেরিতে দেখা যেতে পারে।
৭ ঘণ্টা পর শরীয়তপুর-চাঁদপুর রুটে ফেরি চলাচল শুরু
ঘন কুয়াশার কারণে ৭ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর শরীয়তপুর-চাঁদপুর রুটে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। রোববার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিআইডব্লিউটিসি নরসিংহপুর ঘাটের সহ-ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, রাতে কুয়াশার কারণে ফেরি চলাচল বন্ধ করা হয়েছিল। এখনও নদীতে কুয়াশা রয়েছে। তবে ফেরি চলাচল করতে পারবে। তাই আমরা ফেরি চলাচল শুরু করেছি। এই রুটে সাতটি ফেরি রয়েছে। তবে বর্তমানে গাড়ির চাপ কম থাকায় একটি বড় ফেরি ও তিনটি মাঝারি আকারের ফেরি চলাচল করছে।