ঢাকা, সোমবার ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২১শে মাঘ ১৪৩১
রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধান

ভারতীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ২৭১টি ভুয়া তথ্য প্রচার

রিয়াদ হাসান | প্রকাশের সময় : সোমবার ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ০৪:১৯:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা রিউমার স্ক্যানারের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ভারতীয় গণমাধ্যম এবং ভারত থেকে পরিচালিত বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ২৭১টি ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। সংস্থাটি জানায়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে এসব ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়।

প্রতিষ্ঠানটি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এই ভুল তথ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি— ১১৪টি- ছিল রাজনৈতিক বিষয়ক, যা মোট ভুয়া তথ্যের ৪২ শতাংশ। জাতীয় ইস্যুতে ৬৭টি, আন্তর্জাতিক বিষয়ে ২৯টি, ধর্মীয় বিষয়ে ১৮টি, বিনোদন ও সাহিত্য বিষয়ে ১৫টি, শিক্ষা বিষয়ে ৯টি, প্রতারণা সংক্রান্ত ৬টি, এবং খেলাধুলা সংক্রান্ত ৫টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার।

রিউমার স্ক্যানারের তথ্য অনুযায়ী, শনাক্ত হওয়া ২৭১টি ভুল তথ্যের মধ্যে:

তথ্যভিত্তিক ভুল: ১১৫টি

ছবিভিত্তিক ভুল: ৫৪টি

ভিডিওকেন্দ্রিক ভুল: ১০২টি

সংস্থাটি আরও জানায়, ভুয়া তথ্যগুলোর মধ্যে ১৭৫টি ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা, ৬৫টি বিভ্রান্তিকর এবং ৩১টি বিকৃত তথ্য।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব ভুয়া তথ্যের বিস্তার সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে ফেসবুকে (২২৫টি)। অন্য প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে এক্সে (৫৬টি), টিকটকে (৪৪টি), ইউটিউবে (৪২টি), ইনস্টাগ্রামে (১৯টি) এবং থ্রেডসে অন্তত ১টি ভুল তথ্য পাওয়া গেছে।

ভুয়া তথ্য প্রচারের তালিকায় বাদ যায়নি বাংলাদেশের গণমাধ্যমও। ১৬টি ঘটনায় দেশের একাধিক গণমাধ্যম ভুল তথ্য প্রচার করেছে বলে জানিয়েছে রিউমার স্ক্যানার। পাশাপাশি, ভারতীয় গণমাধ্যমে ৭টি ঘটনায় বাংলাদেশকে জড়িয়ে অপতথ্য প্রচার হয়েছে।

এছাড়া, ভারতীয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে ৯টি ঘটনায় বাংলাদেশকে নিয়ে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে, সাম্প্রদায়িক অপতথ্যের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে, যেখানে জানুয়ারিতে ৩২টি সাম্প্রদায়িক অপতথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৫টি তথ্যই ভারতীয় অ্যাকাউন্ট থেকে ছড়ানো হয়েছে।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জড়িয়ে ১৩টি ভুল তথ্য প্রচার হয়েছে বলে জানিয়েছে রিউমার স্ক্যানার। সংস্থাটি এই অপতথ্যগুলোর বিশ্লেষণ করে দেখে, ৭৭ শতাংশ তথ্য সরকারের বিপক্ষে যাওয়ার সুযোগ রেখেছে।

জানুয়ারিতে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জড়িয়ে ১২টি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়। এছাড়া উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, নাহিদ ইসলাম ও আ ফ ম খালিদ হোসেন সম্পর্কেও অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অপতথ্যের শিকার হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সংগঠনটির বিরুদ্ধে ছড়ানো ভুল তথ্যগুলোর ৯৪ শতাংশই নেতিবাচক। ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সম্পর্কেও বিভিন্ন ভুল তথ্য প্রচার হয়েছে।

এছাড়া, বিএনপিকে জড়িয়ে ভুল তথ্যের প্রচার দেখা গেছে, যেখানে দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়েছে।

অন্যদিকে, ২০২৩ সালের আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে গত মাসে বেশ কয়েকটি অপতথ্য প্রচার হয়েছে। তবে রিউমার স্ক্যানারের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, এসব অপতথ্য আওয়ামী লীগের পক্ষে ইতিবাচক মনোভাব তৈরির সুযোগ রেখেছে।

রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধেও জানুয়ারিতে ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে জড়িয়ে দুটি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়। একইভাবে, সেনাবাহিনীকে নিয়ে মোট ১২টি, ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীকে নিয়ে ১টি, পুলিশকে নিয়ে ৪টি ও বিজিবিকে নিয়ে ২টি ভুয়া তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে।

২০২৪ সালের কোটা আন্দোলন ও সরকার পতনের সময় নেতৃত্ব দেওয়া ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ সম্পর্কেও নিয়মিত অপতথ্য প্রচার হয়েছে বলে জানিয়েছে রিউমার স্ক্যানার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থী ও ঢাবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৫টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে।

গত মাসে গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম এবং নকল ফটোকার্ড ব্যবহার করে দেশি ও বিদেশি ২০টি সংবাদমাধ্যমকে জড়িয়ে ৩৯টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়। রিউমার স্ক্যানারের বিশ্লেষণে এসব তথ্য মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।

রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে স্পষ্ট হয়েছে যে, ভারতীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে বাংলাদেশকে নিয়ে ভুল তথ্য ও অপপ্রচার ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক, সাম্প্রদায়িক ও রাষ্ট্রীয় বিষয়ে ভুয়া তথ্যের প্রবণতা বেশি দেখা গেছে। এ ধরনের অপপ্রচার রোধে গণমাধ্যম ও ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

বায়ান্ন/আরএইচ/এএস/একে