ঢাকা, শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ই আশ্বিন ১৪৩১

মুরাদনগরের ফুটবলার সাবেক সাংসদ হাজী রমিজউদ্দিন

মমিনুল ইসলাম মোল্লা,মুরাদনগর,কুমিল্লা | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ২০ ডিসেম্বর ২০২২ ০২:০৮:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

 

কখনও উড়ন্ত সেন্টার ফরোয়ার্ড, কখনও দুরন্ত ডিফেন্ডার। কখনও হকি তারকা আবার কখনও কখনও অ্যাথলিট হিসেবে অসাধারণ নৈপুণ্যে মাত করেছেন ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড।

খেলার মাঠ থেকে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার-সবখানে ছিলেন সমান উজ্জ্বল। বলা হচ্ছে কুমিল্লার মুরাদনগরের বিখ্যাত ভূ্ঁইয়া পরিবারের সন্তান ও অনন্য সাধারণ ফুটবলার হাজী রমিজউদ্দিন আহমেদের কথা। একই পরিবারের আরেক সন্তান তমিজ উদ্দীন আহমেদও কলকাতা মাতিয়েছেন লেফ্ট উইং পজিশনে। খেলার সময়ের বিশেষ আয়োজনে’ থাকছে দুই সহোদর ফুটবলারের কীর্তিগাথাজুন ১৯২৭। বিহারের রাজধানী পাটনায় আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় স্যার সুলতান আহমেদ শীল্ড ফুটবল টুর্নামেন্টে, যে দিন এপার বাঙলার ঢাকা বিশ্ববিদ্যলায়ের কাছে ধুলিস্যাৎ হয়েছিলো কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অহম। সাত সাতজন আন্তর্জাতিক ফুটবলার সমৃদ্ধ কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার কাছে হার মেনেছিলো ১-০ গোলে। ফ্রেমে বাঁধানো সে জয়ের নায়ক ছিলেন হাজি রমিজ। শুধু তাই নয়, পুরো আসরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে ৭টি গোল দিয়েছিলো, তার ৬টিই এসেছিলো রমিজের পা থেকে। যে পারফর্মেন্সের সুবাদে, বাঙলার পশ্চিমপারে মাতামাতি শুরু হয় তাকে নিয়ে।

পুরো নাম হাজি রমিজউদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া। জন্ম ১৯১০ সালে; কুমিল্লার মুরাদনগরের বাবুটিপাড়া গ্রামের ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া পরিবারে। ৬ ভাই ৩ বোনের মধ্যে রমিজ ছিলেন ৪র্থ। প্রথমে মাদ্রাসা এরপর ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ হয়ে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

১৯২৭ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বেঙ্গল অলিম্পিকের ৯ ডিসিপ্লিনের ৭টিতে স্বর্ণ আর দুইটি রৌপ্য জেতেন রমিজ। ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয হকি দলের নিয়মিত সদস্য। এমনকি বত্রিশে ঢাবির বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় রেকর্ড ৪০ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। তবে হাজি রমিজের ফুটবল ক্যারিয়ার ছাড়িয়ে যায় অন্য সব কীর্তিকে।

১৯২৯ সালে তিনি যোগ দেন কলকাতার বিখ্যাত ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবে। দোর্দন্ড প্রতাপে খেলেছেন টানা ৫ বছর। ৩৪শে মনি তালুকদারকে সরিয়ে তাঁকে অধিনায়ক করে ইস্ট বেঙ্গল। দায়িত্ব পেয়েই ক্লাবকে দ্বিতীয় বিভাগ থেকে আবারো প্রথম বিভাগে উন্নীত করেন হাজি রমিজ।ইস্ট বেঙ্গল ছাড়াও কলকাতা মোহামেডানের হয়ে তিনি মাতিয়েছেন মাঠ। জাদুকর সামাদ – নূর মোহাম্মদকে সঙ্গী করে গড়েছিলেন ভয়ংকর আক্রমণভাগ।

ফুটবল মাঠের জনপ্রিয়তা, হাজি রমিজউদ্দীনকে খেলার মাঠ থেকে নিয়ে গেলো রাজনৈতিক মাঠে। আপন আলোয় ঔজ্জ্বল্য ছড়িয়েছেন সেখানেও। যুক্তফ্রণ্টের হয়ে নিজ এলাকা কুমিল্লা থেকে যিনি দুইবার নির্বাচিত হয়েছিলেন সাংসদ। অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৭৮ সালে হাজি রমিজ ভূষিত হন জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারে।

একই পরিবারের আরেক সন্তান তমিজউদ্দীনও ছিলেন কোলকাতার ফুটবলের নিয়মিত মুখ। লেফ্ট উইং পজিশনে দীর্ঘদিন খেলেছেন কুমিল্লা জেলা দল ও ভিক্টোরিয়া কলেজের হয়ে। তাদের গড়া বিবিডি টিমের খেলা, সে সময়ে অনবদ্য মুগ্ধতায় উপভোগ করতো কুমিল্লার মানুষ।

বলার অপেক্ষা রাখে না, অপসৃত সময়ের সঙ্গী হয়ে যাওয়া রমিজ-তমিজ কিংবা কুমিল্লার বিখ্যাত ভূঁইয়া পরিবারের কাছে আমরা সবাই ঋণী। ঋণী বাংলার ফুটবল।