নরসিংদীর মাধবদীতে যাত্রীবেশে অটোরিক্সা চালক অন্তর মিয়া (১৩)কে হত্যা করে অটোরিক্সা ছিনতাই করার ঘটনায় আন্ত:জেলা অটোরিক্সা ছিনতাই চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
রোববার রাতে জেলার শিবপুর উপজেলা ও নারায়ণগঞ্জ জেলার কাঁচপুরে অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহ্নত লোহার রড, গামছা ও ছিনতাইকৃত অটোরিক্সাটি উদ্ধার করা হয়।
সোমবার দুপুরে নরসিংদী পুলিশ সুপারের কার্য্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, আল আমিন (৩৬), বকুল মিয়া (৪৫), অহিদুল ইসলাম মাতাব্বর, ছগির (৩১) ও সাজ্জাদ (৩২)।
নিহত কিশোর অন্তর মিয়া মাধবদীর খিলগাঁও এলাকার মো. কামাল হোসেনের ছেলে। নিখোঁজ হওয়ার আগে অসুস্থ বাবার ইজিবাইক নিয়ে উপার্জনের জন্য সড়কে নেমেছিল অন্তর।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বুধবার দুপুরে অন্তর অটোরিক্সা নিয়ে উপার্জনের জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অটোরিক্সা চালাতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু রাতে সে আর বাড়িতে ফেরেনি। এরই মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় তাকে খোঁজাখুঁজি করা হয়। পরে না পেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে মাধবদী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে তার পরিবার। পরে বিকেলে মাধবদী থানার বালাপুরের দরগাকান্দা গ্রামের একটি ডোবায় মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন অন্তরের মরদেহ শনাক্ত করেন। পরে মাধবদী থানার পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালর মর্গে পাঠায়। এরপরই হত্যাকান্ডের রহস্য উৎগাঠনে তদন্তে নামে জেলা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ।
রোববার সন্ধ্যায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে জেলার শিবপুর উপজেলা থেকে অহিদুল ইসলাম মাতাব্বরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলার কাঁচপুরে অভিযান পরিচালনা করে আল আমিন, বকুল, ছগির ও সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহ্নত লোহার রড, গামছা ও ছিনতাইকৃত অটোরিক্সাটি উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা অন্তরকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ জেলার বিভিন্ন থানা ও দেশের বিভিন্ন এলাকায় অটোরিক্সা ছিনতাই করে আসছে। তারা সকলেই অটোরিক্সা ছিনতাই চক্রের সদস্য। তারা নিয়মিত দেশের বিভিন্ন স্থানে যাত্রীবেশে অটোরিক্সা ছিনতাই করে। তারা কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ছিনতাই করে থাকে। একটি গ্রুপ টার্গেট ঠিক করে আরেকটি গ্রুপ তা বাস্তবায়ন করে থাকে। বুধবার রাতে তারা অন্তরের অটোরিক্সাটি বালাপুরের একটি ওয়াজ মাহফিলে যাওয়ার কথা বলে ৪শ টাকায় ভাড়া নিয়েছিলো। অন্তর তাদের নিয়ে যাওয়ার সময় নির্জন এলাকা দেখে তাকে চেতনানাশক দিয়ে অচেতন করে। পরে তাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মেরে গামছা দিয়ে হাত-পা বেধেঁ ডোবায় ফেলে অটোরিক্সা নিয়ে পালিয়ে যায়।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান আরো বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় চুরি, ছিনতাই ও হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তাদেরকে আজ আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হবে। আর আন্তজেলা ছিনতাই চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারে আমরা কাজ করছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।