ঢাকা, শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ই আশ্বিন ১৪৩১

রঙিন ফুলকপি চাষে কৃষকের মুখে হাসি

হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ১২:৫৪:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

 

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে বাহারি রঙের ফুলকপি চাষ করে সফল হয়েছেন আরশেদ আলী নামের এক কৃষক। এই কপি তিন গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বাগান থেকে। আশপাশের অঞ্চলের মানুষ প্রতিদিন দেখতে আসছেন তাঁর রঙিন ফুলকপির বাগান। রঙিন ফুলকপি চাষে সফল ওই কৃষকের বাড়ি ভূঞাপুর পৌরসভার ছাব্বিশা এলাকায়। 

তিনি বলেন, আমি ১৫ শতাংশ জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদ করতাম। এবার কৃষি বিভাগ আমাকে রঙিন ফুলকপি চাষের কথা বলে। তাদের কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমি প্রায় আট’শ রঙিন জাতের কপি চারা বাগানে লাগায়।

 

জানা যায়, চীনে এ জাতের ফুলকপি সালাদ হিসেবে খাওয়া হয়। সাদা ফুলকপির চেয়ে রঙিন ফুলকপিতে পুষ্টিগুণ বেশি। দেখতেও খুব সুন্দর। আমাদের দেশে অর্ধ সিদ্ধ করে খাওয়া খুবই উপযোগী। অন্যান্য ফুলকপির চাষের যে পদ্ধতি ওই একই পদ্ধতিতে রঙিন ফুলকপি চাষ করা হয়। খরচ ও পরিশ্রম একই। পাশাপাশি শুধু জৈব সার ব্যবহার করেই এই ফুলকপি চাষ করা যায়। স্থানীয় হাটবাজার রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা। উপজেলায় এবারই প্রথম পরীক্ষামূলক রঙিন ফুলকপি চাষ করেছেন কৃষক আরশেদ আলী। তার এমন সফলতা দেখে আগ্রহ প্রকাশ করছে স্থানীয় তরুণ ও যুবকসহ অনেক সবজি চাষি। এ ছাড়া তার এই রঙিন ফুলকপির সৌন্দর্য দেখতে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রতিদিনই ভিড় করছেন কৃষকসহ উৎসুক জনতা। রঙিন ফুলকপি দেখতে এসে কেউ ফুলকপি কিনছেন, কেউ পরামর্শ নিচ্ছেন, কেউ রঙিন ফুলকপির সঙ্গে ছবি তোলা ও ভিডিও ধারণ করছেন। রঙিন ফুলকপির সাফল্যে খুশি স্থানীয় কৃষি বিভাগও।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক আরশেদ আলী বাগান পরিচর্যা করছেন। তিনি বলেন, এলাকার মানুষ এর আগে কখনো রঙিন ফুলকপি দেখেননি। তাই প্রতিদিন মানুষ আসে এই কপি দেখার জন্য। সাধারণত সাদা একটি ফুলকপি মাঠ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু রঙিন ফুলকপি ৫০ টাকা করে বিক্রি করতে পারছেন। এতে তিনি খুব খুশি।

রঙিন ফুলকপি চাষি আরশেদ আলী আরও বলেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীরের পরামর্শে ও কৃষি অফিস থেকে নতুন জাতের রঙিন ফুলকপির ৪০০ চারা, জৈব সার, পোকাদমন কীটনাশকসহ সব ধরনের সহযোগিতায় পরীক্ষামূলকভাবে বাড়ির পাশে মাত্র ১৫ শতক জমিতে রঙিন ফুলকপির চাষ করেছি। এতে চার রঙের ফুলকপি রয়েছে। ফসলের ক্ষেতে কীটনাশক-সার ব্যবহার না করে শুধু জৈব সার ব্যবহার করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জমিতে চারা রোপণের ৭৫ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে জমিতে পূর্ণাঙ্গভাবে ফসল পেয়েছি। মজার ব্যাপার হলো- এসব রঙিন ফুলকপি দেখতে প্রতিদিনই এলাকার কৃষকসহ সাধারণ মানুষ আমার জমিতে আসছেন ফুলকপি দেখার জন্য। কেউ ফুলকপি কিনছেন, কেউ পরামর্শ নিচ্ছেন, আবার কেউ কেউ তুলছেন ছবি, করছেন ভিডিও। তা ছাড়া বাজারে নেওয়া মাত্রই বিক্রি হয়ে যায় এসব রঙিন কপি। দামও ভালো পাচ্ছি।

পৌরসভার কতুবপুর এলাকার ভুট্টাচাষি মাহমুদুল হাসান বলেন, রঙিন ফুলকপি চাষের খবর পেয়ে এসেছি ফুলকপি দেখতে। রঙিন ফুলকপির নাম অনেক শুনেছি। কিন্তু স্ব-চোখে দেখতে পারিনি। যখনি জানতে পারলাম পাশের গ্রামে আরশেদ আলী নামে একজন কৃষক রঙিন ফুলকপি চাষ করেছেন। তাই দেখতে আসছি। চাষি আরশেদ থেকে রঙিন ফুলকপি চাষ সম্পর্কে জানলাম। আগামীতে আমিও এই রঙিন ফুলকপি চাষ করব।

রঙিন ফুলকপি ক্রেতা রফিকুল ইসলাম ও আব্দুর রহিমসহ অনেকেই জানান, এ ধরনের রঙিন ফুলকপি এর আগে কখনো দেখেননি। উপজেলা কৃষি অফিসার ড. হুমায়ূন কবীরের ফেসবুকে পোস্টে রঙিন ফুলকপির ছবি দেখে কপি ক্ষেতে গিয়ে ৫০ টাকা দরে একটি করে ফুলকপি কিনেন। 

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. হুমায়ূন কবীর জানান, উপজেলায় এই প্রথম রঙিন ফুলকপি পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তখন কেউ আগ্রহী ছিল না। পরে আরশেদ আলী নামে এক কৃষক আগ্রহ প্রকাশ করলে তাকে কৃষি অফিস থেকে ৪০০ ফুলকপির চারা, জৈব সার, পোকারোধক কীটনাশক ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা প্রদান করা হয়। প্রাথমিকভাবে চার রঙের ফুলকপি চাষ করা হয়েছে।

টাঙ্গাইলের কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আহসানুল বাসার জানান, বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণের লক্ষ্যে জেলার ১২ উপজেলাতে পরীক্ষামূলক রঙিন ফুলকপি চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তারমধ্যে সবার আগে ভূঞাপুর উপজেলায় সফলতা পাওয়া গেছে। এ জাতের ফুলকপিতে পুষ্টিগুণ বেশি। ক্যান্সাররোধেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে এ ফুলকপি। চলতি মৌসুমে পরীক্ষামূলক চাষে সফলতা পাওয়ায় অনেক কৃষক আগামী বছরে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।